দেবশ্রী সিনহা, নয়াদিল্লি: প্রায় সবারই ক্ষতবিক্ষত চোখমুখ৷ কপালে, গালে, মাথায় বিঁধে আছে সুচালো প্লাস্টিক বা রবারের টুকরো৷ সবচেয়ে মারাত্মক চোখের অবস্থা৷ কারও চোখের মণিতে ঢুকে গিয়েছে ‘পেলেটস’৷ কারও বিঁধে গিয়েছে রেটিনায়৷ আস্তে আস্তে হারিয়ে গিয়েছে দৃষ্টিশক্তি৷ কারওবা মাথার ভিতরে, মেরুদণ্ডে বা শরীরের অন্যান্য জায়গায়৷ যেখানেই বিঁধেছে এই ‘পেলেটস’, অসাড় করে ক্রমশ অচল করে দিয়েছে শরীরের সেই অংশকে৷ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে প্রাণ৷ অগ্নিগর্ভ কাশ্মীরের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আতঙ্কের এই ‘পেলেটস’ই হাতিয়ার আধাসেনা ও কাশ্মীর পুলিশের৷ কাশ্মীরের বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষুদ্র অথচ বিপজ্জনক অস্ত্রটি৷
সাধারণ বন্দুকের মতো দেখতে এই ‘পেলেটস গান’এ গুলি থাকে না৷ পরিবর্তে ব্যবহার হয় সহস্র ধারালো ‘ফাইবার’ এর টুকরো৷ বন্দুক চালালেই তীব্র বেগে নিশানার দিকে ছুটে যায় অজস্র ‘পেলেটস’৷ ৫০ থেকে ৬০ মিটারের দূরত্ব পেরিয়ে তীব্র বেগে ছুটে যাওয়া এই ‘পেলেটস’ কারও শরীরে প্রবেশ করলে অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে ওঠে বলে দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিকের৷ তাঁর মতে, “আদতে ‘নন-লেথাল’ এই হাতিয়ার ছাড়া অন্য কোনও অস্ত্র নেই বেআইনি জনসমাগমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য৷ বিশেষ করে, আধাসেনার উদ্দেশে যখন পাথুরে বৃষ্টি করা হয়৷ কাশ্মীরে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করতে গেলে, টিয়ার গ্যাসের শেলের উপর ভেজা বস্তা চাপা দিয়ে দেওয়া হয়৷ ফলে কোনও প্রভাব পড়ে না৷ এমনকী, ‘আলিয়ারেজেন’-এর মতো জ্বালাময় শেলও খুব বড় ভিড়ের উপর প্রভাব দেখাতে পারে না৷ সেই অর্থে ‘পেলেটস গান’ অনেকটাই কার্যকর৷”
উত্তপ্ত উপত্যকায় ‘পেলেটস গানের’ প্রয়োগ এই প্রথম নয়৷ আধাসেনা এর প্রয়োগ শুরু করে ২০১০ সালে৷ আধাসেনার দাবি, শেষ অস্ত্র হিসাবেই ব্যবহার করা হয় এই হাতিয়ার৷ তবে ‘পেলেটস গান’-এর প্রয়োগে শরীরে বিকলাঙ্গতা বা এর অন্যান্য ‘সাইড এফেক্ট’ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ জঙ্গি কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে ঘিরে টানা নয় দিনের বিক্ষোভ-হিংসায় ‘পেলেটস গান’-এ আহতদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই অগুনতি৷ রাস্তার ধারে, দোকানে বা বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষও আহত হয়েছে এই অস্ত্রে৷ ছয় বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ, কেউই রেহাই পায়নি এর থেকে৷
কাশ্মীরের হাসপাতালগুলি নাজেহাল হচ্ছে আহতদের নিয়ে৷ দিল্লি থেকে চিকিৎসকদের বিশেষ দলও পৌঁছে গিয়েছে উপত্যকায়৷ প্রায় শতাধিক অস্ত্রোপচার সেরেছেন তাঁরা এই কয়েকদিনের মধ্যে৷ তবে আহতদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে৷ পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক৷ হিংসাত্মক গতিবিধি ছাড়াও নির্দোষ মানুষ ও শিকার হচ্ছে এই ‘পেলেটস গান’-এর৷ সমালোচনার বন্যা বয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ ক্ষতিকর এই ‘পেলেটস গান’-এর প্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে কাশ্মীরের প্রায় ৩০০০ বাসিন্দা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.