প্রতীকী ছবি
রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: কালীপুজোর ইতিহাসে কালনার একেবারে প্রাচীন পুজোর গুলোর মধ্যে ধাত্রীগ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো একটি। স্থানীয়দের মতে, প্রাচীনত্বের দিক থেকে খুবই জনপ্রিয় এই পুজো। নানা বিরল রীতিনীতি নিয়ে এই বাড়ির পুজো এবার ২৭৬ বছরে পড়ল। সারা বছর পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বাইরে থাকলেও কালীপুজোতেই বাড়িতে আসেন তাঁরা। উৎসবের মেজাজ থাকে ‘সদারাম ভবনে’।
গ্রামের বিশাল প্রতিষ্ঠিত পরিবার হিসাবে খ্যাতি ছিল এই সদারাম বাড়ির। বাড়ির পূর্বপুরুষ জমিদার সদারাম চট্টোপাধ্যায়ের নাম অনুসারেই এই বাড়ির নাম সদারাম ভবন। পরিবারের বর্তমান সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, ১১৪৮ বঙ্গাব্দে এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় ধাত্রীগ্রামের বাধাগাছা এলাকায়। তার দুবছর পর থেকেই ওই বাড়িতেই কালীপুজোর শুরু হয়। পরিবারের মতে, কোনও স্বপ্ন পেয়ে নয় পারিবারিক জেদের বশে পুজোর প্রচলন করে সদারামবাবু। পরিবারের অন্য আত্মীয়র বাড়িতে কালীপুজো হত। তাঁদের সঙ্গে মন কষাকষিতেই পুজোর শুরু। তারপর থেকেই পরিবারের নবম পুরুষ ধরে আর কখনও বন্ধ হয়নি। প্রায় তিনশো বছর আগে তৈরি বাড়ির ভিতরেই বানানো হয়েছিল কালীর বেদি। আনা হয়েছিল বিশাল আঁকার জল রাখার জ্বালা। পিতলের ঘট। সময় ও বংশধর বদলালেও সেই প্রাচীন জ্বালাটি এখনও সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে ওই বাড়িতে। গঙ্গা থেকে জল এনে ওই জ্বালাতেই জল রাখা হয়। সেই জলেই কালীর পুজো সম্পন্ন হয়।
[চক্রাকার ত্রিশূলকে কালীরূপে পুজো করে খাতড়ার পাটপুরের মাহাতো পরিবার]
এছাড়াও এই পরিবারের বিশেষ রীতির মধ্যে রয়েছে, এই পুজোর দিন কালীর পাশেই পুজো পান লক্ষ্মীদেবীও। পরিবারের সদস্যদের মতে, এই লক্ষ্মীপুজোর মধ্যে মধ্যে বাড়ির অলক্ষ্মীকে বাইরে তাড়ানো হয়। পুজোর সময় কালীকে দেওয়া হয় মাছের টক, মোচার ঘণ্ট, খিচুড়ি ও সঙ্গে নানা রকম ভাজা। এক সময় এই এলাকার সমস্ত মানুষ আসতেন সদারাম ভবনের পুজোতে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই উন্মাদনা কিছুটা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পরিবারের তিন বংশধর শ্যামল চট্টোপাধ্যায়, সলীল চট্টোপাধ্যায়, সুনীল চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, “পুজোর জন্য আমাদের ভাবতে হয় না। পূর্বপুরুষরাই দেবীর পুজোর জন্য একটি পুকুর রেখে গিয়েছে। সেই পুকুরে চাষ করেই পুজোর খরচ আসে। আগামী দিনেও আসবে। আগে এই পুজোতে বলিদানের প্রথা ছিল। ওই প্রথা আমাদের পছন্দ না হওয়ায় আমরা তা বন্ধ করে ফেলেছি”।
[ভূতের আতঙ্ক কাটাতেই মোটর কালীর পুজো শুরু বালুরঘাটে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.