অভিরূপ দাস: এক বন্দিদশা থেকে মুক্তি৷ তারপরেও যেন আরেক বন্দিদশায়৷
আফগানিস্তানের অপহৃত মেয়ে জুডিথ কলকাতায় ফিরেছেন৷ সোমবার তার বাড়ির বাইরে সাদা পোশাকের কড়া নজর৷ মাছিরও গলার উপায় নেই৷ এক পলকে দেখলে ভ্রম হয় বুঝিবা কোনও সরকারি অতিথির আবাসন৷ বাড়ির বাসিন্দাদেরও রীতিমতো পরিচয় দিয়ে উঠতে হচ্ছে৷ আফগানিস্তানের ভয় তবে কি কলকাতাতেও? বাড়িতে আসা অতিথিদের ফিসফাস, “আর যেও না ওদেশে…৷’
বুড়ো হারুন রশিদ বোঝেন না অতশত৷ কোনও এক সময় তার পূর্বপুরুষরাও আফগানিস্তান থেকে এসে কলকাতায় বাসা বেঁধেছিলেন৷ জুডিথের বাড়ির উপরতলায় থাকা হারুন৷ দৌড়ে এসেছেন মিঠাই নিয়ে৷ “খুশামাদিদ জুডিথ৷ আজ খুশি কা দিন হ্যায়৷”
দশ ফুট বাই দশ ফুট৷ সূর্যের আলো ঢোকে না৷ সম্বল বলতে জলের মগ৷ আফগান দস্যুরা এ ধরনের খাঁচাতেই আটকে রাখে বন্দিদের৷ জুডিথের জন্য যে আলাদা অভ্যর্থনা ছিল না তা কিছুটা খোলসা করলেন তাঁর দাদাই৷ কোথায় ছিলেন জুডিথ? কারা তাঁকে পণবন্দি করেছিল? ‘বিশেষ’ কারণে এসমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে না৷ দাদা জেরোমের জোড়হাত, “আমার অনুরোধ এই সমস্ত প্রশ্ন করবেন না৷ ওকে ফিরে পেয়ে আমাদের পরিবার অত্যন্ত খুশি৷” জিভের আড় ভাঙলেন একটু পরেই৷ “একটা অন্ধকার ঘরে বন্দি ছিল ও৷ বিশেষ আলো ঢুকত না৷ ছোট খুপরির মতো ঘর৷ ব্যস, আর কিছু বলব না৷”
রবিবার সাঁঝবেলায় ফিরে থেকে মুখে কুলুপ মেয়ের৷ বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ আফগানিস্তানের অন্ধকার কুঠুরিতে ৪৪ দিন কাটিয়ে মধ্য কলকাতার আবাসনে৷ সুইচ টিপলেই আলো-ফ্যান৷ বন্দিদশায় থাকাকালীন হয়তো ভেবেছিলেন এণ্টালির এই রাস্তা ধরে আর হাঁটাই হবে না৷ “শহুরে জীবনে ফিরে এলেও ধাতস্থ হতে খানিক সময় লাগবে তাঁর”, জানিয়েছেন চিকিৎসক৷ সকালে একবার ডাক্তার দেখে গিয়েছেন৷ “শারীরিক সমস্যা না থাকলেও ডাক্তার বলেছেন ও একটা ট্রমার মধ্যে রয়েছে৷” দাদা জেরোম তাই বোনকে আগলে রেখেছেন৷ ভুলে যেতে বলছেন অন্ধকারের সে গল্প৷ আর মনের জোর? ঘরের বাইরে পতপত করে ওড়ে নতুন লাগানো পোস্টার৷ “থ্যাঙ্কস টু লর্ডস৷” দাদা জেরোম জানান, জেসাস রয়েছে আমাদের সঙ্গে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.