Advertisement
Advertisement
Tab scam

ট্যাব কেলেঙ্কারির নেপথ্যে জামতাড়া গ্যাং? আগে থেকেই ঘুঁটি সাজিয়ে সরকারি টাকা হাতাচ্ছে ‘হ্যাকার’রা

সদ্য পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় পড়ুয়াদের জন্য ট্যাবের যে টাকা পাঠিয়েছিল সরকার, তা ‘গায়েব’ হয়েছে।

Jamtara Gang behind Tab scam?
Published by: Paramita Paul
  • Posted:November 15, 2024 10:53 am
  • Updated:November 15, 2024 11:04 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘জামতাড়া–সবকা নম্বর আয়েগা’। নেটফ্লিক্সে এই ক্রাইম ড্রামা সিরিজ সম্প্রচার হওয়ার আগে থেকেই সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ-প্রশাসন, সকলের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল জামতাড়া গ্যাং। তাদের ফোন বা মেসেজ পায়নি, ভূভারতে বোধহয় এমন কেউ নেই। সদ্য পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় পড়ুয়াদের জন্য ট্যাবের যে টাকা পাঠিয়েছিল সরকার, তা ‘গায়েব’ হয়েছে। চলে গিয়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। কখনও তা ভিন রাজ্যেও। এই ঘটনার নেপথ্যেও জামতাড়া গ্যাংয়ের যোগ উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

মনে করা হচ্ছে, লক্ষ-লক্ষ পড়ুয়ার জন্য বরাদ্দ কোটি টাকা হাতানোর এই সুবর্ণ সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চায়নি। তাই ‘হ্যাকার’ হিসাবে তাদের সঙ্গে আগে থাকতেই যোগ থাকা সঙ্গীদের কাজে নামিয়েছিল। অথবা প্রকল্প ঘোষণা হতেই তারা বিভিন্ন জায়গায় ‘এজেন্ট’ রিক্রুট করে থাকতে পারে। ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলায় এই গ্যাংয়ের জন্ম বলে সেই নামেই পরিচয়। কিন্তু জামতাড়ায় পুলিশি নজরদারি বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি মোবাইল টাওয়ারে মনিটরিং হচ্ছে। তারপরই মোডাস অপারেন্ডি, কাজের ধরন বদলেছে এই গ্যাং। হাতের কাছে আসানসোল, অণ্ডাল, দুর্গাপুর যেমন আছে নতুন ঘাঁটির জন্য, তেমনই এই গ্যাংয়ের সদস্যরা ছড়িয়ে পড়েছে রাজস্থানের ভরতপুর, এমনকী, খোদ রাজধানী দিল্লিতেও। যারা জামতাড়া, গিরিডি, জামুই এলাকায় প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত। উত্তরপ্রদেশের মথুরা, হরিয়ানার নুহ-র মতো জায়গাতেও ঘাঁটি গাড়ছে তারা।

Advertisement

‘জামতাড়া–সবকা নম্বর আয়েগা’র গল্প ছিল ছোট শহরের একদল যুবককে ঘিরে, যারা একটি সফল প্রতারণা চক্র পরিচালনা করে। মূলত নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে মোবাইলে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) জেনে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই জামতাড়া গ্যাংয়ের কর্মপদ্ধতি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে তাদের প্রতারণার পদ্ধতি। কখনও হ্যাক করা হচ্ছে ফোন, ল্যাপটপ। কখনও ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে গ্রাহকের লক্ষ-কোটি টাকা গায়েব করা হচ্ছে। গোটা দেশেই ছড়িয়ে তার শাখাপ্রশাখা। অনেকটা মাকড়সার জালের মতো। সাইবার ক্রাইম শাখা, পুলিশ জালের কোনও একটা কোণে হয়তো পৌঁছচ্ছে। কিন্তু মূল অপরাধী বা চাঁইয়ের কাছে পৌঁছনো রীতিমতো দুঃসাধ্য। তার জালে জড়িয়ে নিচ্ছে নিরীহ, সাধারণ যুবক-যুবতীদের। প্রলোভনে, আর্থিক প্রয়োজনে তারাও শামিল হচ্ছে জামতাড়া গ্যাংয়ে। জামতাড়ায় আবার প্রায় বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর মতো করে সাইবার প্রতারণা শেখানো হচ্ছে। নাইজেরিয়া, সোমালিয়ার মতো বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আসছে সাইবার প্রতারণা শিখতে।

ভুয়ো নাম-পরিচয়ে দেশি-বিদেশি সিম কার্ড কিনে কয়েকদিনের প্রশিক্ষণ। আর তারপরই নেমে যাওয়া ‘অপারেশন’-এ! বছর দেড়েক আগে জামতাড়া থেকে ধৃত ছয় ব্যক্তির কাছেই মিলেছে ২২,০০০ দেশি-বিদেশি সিম কার্ড! বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং ই-কমার্স সাইটের কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ সেজে গ্রাহকদের প্রতারণা করাই ছিল তাদের কাজ। এই সাইবার অপরাধীরা নামী ব্যাঙ্ক এবং বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটের কাস্টমার কেয়ার হেল্পলাইন হিসাবে গুগলে তাদের মোবাইল নম্বর পোস্ট করেছিল। আর সেই ফঁাদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন বহু গ্রাহক। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্লক করার, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করত।

তবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের তরফে ক্রমাগত সচেতনতা প্রচারে কিছু গ্রাহক সতর্ক হয়েছেন। কিন্তু তাতেও জামতাড়া গ্যাংয়ের রমরমা ঠেকানো যাচ্ছে না। এই গ্যাংয়ের বিশেষত্ব, সময় বুঝে দ্রুত মোডাস অপারেন্ডি বদলে ফেলা। ব্যাঙ্ক বা ই-কমার্স সাইটের এগজিকিউটিভ সেজে লাভ হচ্ছে না। তাই ফোন বা মেসেজ আসছে বাড়ির বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে। তাতেও কাজ না হলে? বাড়ি বসে দারুণ চাকরির অফার, বিদেশযাত্রার সুযোগ দেখিয়ে প্রলোভন। সচেতন নাগরিকরাও অনেক সময় বিভ্রান্ত হচ্ছেন। নতুন নতুন কৌশল বের করে ফেলেছে এই গ্যাং। সুতরাং তাদের পক্ষে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে থাকা কিশোর-তরুণ পড়ুয়াদের থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া মোটেও কঠিন নয়। সে জন্যই এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশ সিট গঠন করছে। জেলায় জেলায় এখনও পর্যন্ত যাদের ধরা হয়েছে, তারা আদৌ এই চক্র সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল, সেটাও বোঝা দুঃসাধ্য। এমনও হতে পারে যে, অন্য ঘটনার মতোই তারাও জামতাড়া গ্যাংয়ের বিস্তৃত জালের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র।

সবমিলিয়ে জামতাড়া গ্যাংয়ের আতঙ্ক বহাল। আর হাত গুটিয়ে বসে দেখছে কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তঃরাজ্য এই দুষ্কৃতী চক্র দমন করতে একমাত্র কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় এবং কেন্দ্রীয় আইন হতে পারে হাতিয়ার। না হলে এই চক্র কোনওভাবেই নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement