সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৬ বছরের অনশন ভঙ্গ করেছেন গত মঙ্গলবার৷ আফস্পা বিরোধী আন্দোলনের মুখ ইরম শর্মিলা বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলেন, তিনি তখনই বিয়ে করবেন যখন মণিপুরের মানুষ তাঁকে রাজনীতিতে মেনে নেবেন না৷ তবে আফস্পা ছাড়াও এখন আরও একটি ভাবনার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে ইরম শর্মিলাকে৷ মানুষের ভাবনা৷ কারণ গত ষোলো বছরের মণিপুরের একটা অংশের মানুষের চোখে ‘দেবী’ হয়ে গিয়েছেন চানু৷ এখন তাঁর চেষ্টা ফের ‘মানুষ’ হয়ে ওঠার৷
অনশনভঙ্গের পর অবশ্য কিছুটা বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া সইতে হয়েছে চানুকে৷ নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷ কিন্তু রাতে ফের হাসপাতালেই ফিরে যেতে হয় চানুকে৷ এতদিনের ধকল, আর হাসপাতালের চার দেওয়ালের মধ্যের বাঁধা ছকের বাইরে এসে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে চানুর শরীরের৷ আপাতত তাই জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই থাকবেন তিনি৷ তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকছে বিশেষ তরল খাদ্য৷ আপাতত শক্ত খাদ্য নেওয়ার মতো তাঁর শরীরের অবস্থা নেই বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা৷ তাই এই বিশেষ পর্যবেক্ষণ৷ চানু নিজেই জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে রাজ্যের কিছু মানুষ তাঁকে অকারণে দেবী বানিয়ে তুলছিল৷ কিন্তু তিনি একজন সাধারণ মেয়ে এবং তিনি মানবী হয়েই থাকতে চান৷
কিন্তু যতই রাইলস টিউবের সাহায্যে শরীরে তরল খাদ্য প্রবেশ করিয়ে শরীরকে সচল রাখা হোক, এতদিন কীভাবে সক্রিয় ছিলেন শর্মিলা? তাঁর ভরসা ছিল যোগব্যায়াম৷ নিয়মিত যোগাসন করতেন তিনি৷ ছোটবেলায় শেখা আসনগুলির নিয়মিত চর্চাই তাঁকে সচল রেখেছিল৷ জীবনীকার দীপ্তিপ্রিয়াকে শর্মিলাই একবার বলেছিলেন, “যোগাসন ফুটবল খেলা নয়৷ যোগের সাহায্যে একজন মানুষ একশো বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে৷” নিজেও তা-ই বিশ্বাস করতেন৷ কাজেও করতেন তা-ই৷ অনশন ভেঙে ফিরলেও মায়ের সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি শর্মিলার৷ কারণ, মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি৷ গত ষোলো বছরে মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়াকে বরাবর এড়িয়েই গিয়েছেন তিনি৷ কারণ দেখা হলে যদি আবেগতারিত হয়ে পড়েন, সেই ভয় কাজ করত চানুর মনে৷ গত ষোলো বছরে একবারই মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল চানুর৷ যখন প্রবল শ্বাসকষ্টের কারণে মা সখী দেবী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন৷ তাঁকেও রাখা হয়েছিল জওহরলাল নেহরু হাসপাতালেই৷ তার পর আর নয়৷ কিন্তু চানুর দাদা জানিয়েছেন, তাঁর মা চাননি যে চানু তাঁর অনশন ভঙ্গ করুন৷ হাসপাতালে চানু যখন মায়ের রোগশয্যার পাশে গিয়েছিলেন, সখী দেবী বলেছিলেন, “জিতলে তবেই আমার সামনে এসো৷ জিতে যখন আসবে তখনই আমি তোমার জন্য রান্না করে রাখব৷” আফস্পা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্তই তিনি অপেক্ষা করুন এমনটাই চেয়েছিলেন সখী দেবী৷ তাই মেয়ের মুখোমুখি হলে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া হবে তা নিয়েও ধন্ধ রয়েছে৷
আপাতত নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে শর্মিলার৷ কারণ অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরই একাংশের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তাতে চানু নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে মণিপুর প্রশাসন৷ সেই কারণেই এই নিরাপত্তা বৃদ্ধি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.