স্টাফ রিপোর্টার: দুর্ঘটনা রোধে এক ঐতিহাসিক পদযাত্রার সাক্ষী থাকল কলকাতা৷ তাও রাখিবন্ধনের মতো ঐতিহাসিক দিনে৷ শহরের রাজপথে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সঙ্গে প্রশাসনের আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি, ছাত্রছাত্রী, আমজনতা৷ মমতার বার্তা, “মানুষের প্রাণ বাঁচাও৷ সাবধানে গাড়ি চালাও৷”
বৃহস্পতিবার ছিল রাখি পূর্ণিমা৷ সংস্কৃতি দিবস৷ আর এই দিনটাতেই পথচলতি সাধারণ মানুষকে নিবিড় বন্ধনে বেঁধে ফেলল ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’৷ মৌলালি যুবকেন্দ্র থেকে বর্ণাঢ্য পদযাত্রা শুরু হল৷ সবুজ পতাকায় সূত্রপাত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলা ভাল, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে পথে নামলেন৷ উদ্দেশ্য মহৎ, মানুষের জীবনের দাম অনেক৷ তাই একটু সতর্ক হলেই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ মানুষকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনই প্রশাসনকেও কঠোর ভূমিকা নিতে হবে৷ কোথাও যেন এই বার্তাটাই ফুটে উঠল সুসজ্জিত ট্যাবলোয়৷ রাস্তায় মোটরবাইক চালাতে গেলে হেলমেট পরুন, সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালান, সিগন্যাল দেখে রাস্তা পার হোন–ধরা পড়ল ট্যাবলোয়৷ স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে প্ল্যাকার্ড৷ বার্তা দিচ্ছে, ‘সুরক্ষিত রাখুন, সুরক্ষিত থাকুন’৷ হেলমেট পরে মোটরবাইক নিয়ে অংশ নিলেন ১০০ জন কলকাতা পুলিশের কর্মী৷ পুলিশ ব্যান্ডে ধ্বনিত হল, “গাড়ি আস্তে চালান৷ প্রাণ বাঁচান৷” মৌলালি থেকে এ জে সি বোস রোড, শিয়ালদহ ফ্লাইওভার, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বহুবাজার, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, সি আর অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা হয়ে পদযাত্রা শেষ হল কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের প্যাডক গ্রাউন্ডে৷ দীর্ঘ পথ হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে, কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, সাংসদ মুকুল রায়, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বর্ণকমল সাহা৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পদযাত্রায় অংশ নিলেন সাংসদ-অভিনেতা দেব, সোহম, রুদ্রনীল, জুন মালিয়া, অরিন্দম শীল, প্রযোজক শ্রীকান্ত মেহতা, গায়ক শিবাজি চট্টোপাধ্যায়, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপঙ্কর, অনীক-সহ একাধিক টলিউড শিল্পী৷ বাউল-একতারা নিয়ে দেখা মিলল লোকপ্রসার শিল্পীদের৷ বিভিন্ন ক্লাব, প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও দেখা মিলল পথনিরাপত্তার সচেতনতা বাড়াতে কলকাতা পুলিশের এই কর্মসূচিতে৷ কিন্তু গোটা কর্মসূচিটাই পরিণত হল সামাজিক আন্দোলনে৷ হাজার হাজার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পা মেলালেন৷ একটাই বার্তা, ‘আমাদের পথ হোক, নিরাপদ পথ৷’ আর মুখ্যমন্ত্রী যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, তখন অগণিত মানুষ দাড়িয়ে রাস্তার দু’ধারে৷ সাধারণ মানুষকে মুখ্যমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানালেন, শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন৷ আবার ধর্মতলায় দুই সাফাইকর্মীর হাতে রাখিও পরিয়ে দিলেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “রাখিবন্ধনের শুভেচ্ছা৷ সকলে ভাল থাকুন৷ সুস্থ থাকুন৷ দীর্ঘজীবন কামনা করি৷ পরিবারের সদস্যরাও খুব ভাল থাকুন৷ সংস্কৃতি দিবস পরিণত হোক মানুষের প্রাণের দিবসে৷” সেইসঙ্গে এই কথাটাও মনে করিয়ে দিলেন, “ঐক্যবদ্ধ হোন, উন্নয়নবদ্ধ হোন, সংস্কৃতিবদ্ধ হোন, শপথবদ্ধ হোন, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন৷” এতটা পথ হাঁটার জন্য ছাত্রছাত্রীদেরও আলাদাভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ-এর জন্য এতটা পথ হেঁটেছেন ছাত্রছাত্রীরা৷ তাঁদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ৷ ছাত্রছাত্রীরাই বাংলা, দেশ, বিশ্বের ভবিষ্যৎ৷ তাঁদের সুন্দর ভবিষ্যত্ জীবন কামনা করি৷” তবে মুখ্যমন্ত্রী কাউন্সিলরদের পদযাত্রা শুরুর প্রথমেই নির্দেশ দিয়েছেন, “এটা কলকাতা পুলিশের কর্মসূচি৷ কাউন্সিলররা পিছনের দিকে যান৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.