সুব্রত বিশ্বাস: ‘লেট লতিফের’ বদনাম ঘোচাতে এবার হাওড়া-টিকিয়াপাড়ার মাঝে তৈরি হবে চতুর্থ লাইন৷ হাওড়া থেকে টিকিয়াপাড়ার মাঝে একেবারে দক্ষিণদিক ঘেঁষে নতুন লাইন নির্মাণ অনুমোদন করেছে রেলবোর্ড৷ শুধু নতুন লাইনই নয়, রুট রিলে সিস্টেম থেকে সিগন্যাল-সহ আনুষঙ্গিক নানা কাজের জন্য এই লাইন তৈরিতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চিফ প্যাসেঞ্জার অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন ম্যানেজার সৌমিত্র মজুমদার৷
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ১৮৮টা শহরতলির ট্রেনের লক্ষ লক্ষ যাত্রীরা ‘ট্রেন লেট’ সয়ে সয়ে একেবারে অভ্যস্ত৷ বাগনানের বাসিন্দা নিত্যযাত্রী নবকুমার ঘড়ুই-এর কথায়, সন্ধে ৬.১২ মেদিনীপুর লোকাল চলে যাওয়ার পর প্রতিটা লোকাল ট্রেনই অস্বাভাবিক দেরিতে ছাড়ে৷ কোনও কোনও সময় ঘোষণা করা হয় ‘ডাউন ট্রেন দেরিতে আসায় আপ ট্রেনও ছাড়তে দেরি হবে৷’ ব্যস, দায় ঘুচল রেলের৷ যাত্রীরা হাপিত্যেশ করে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলেন৷ এভাবেই যুগযুগান্ত ধরে থেকে যাচ্ছে সমস্যা৷ এই ‘লেট লতিফ’-এর স্থায়ী সমস্যার কথা মেনে নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল৷
ওই রেলের চিফ প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্টেশন ম্যানেজার সৌমিত্র মজুমদার জানিয়েছেন, হাওড়া-টিকিয়াপাড়ার মাঝে লাইনের অংশটি কার্যত নিচু৷ খানিকটা ‘চায়ের প্লেটের’ মতো৷ ফলে জল জমে বর্ষায়৷ দক্ষিণ-পূর্ব রেল লাইন উঁচুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু ওই এলাকায় একটি ফ্লাইওভার রয়েছে৷ তার উপর রেলের খালি ট্রেন ‘শান্টিং’ করে৷ ব্রিজটা ভাঙার প্রস্তাব দিয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল৷ কিন্তু পূর্ব রেল গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ বলে ভাঙার অনুমতি দেয়নি৷ ফলে লাইন উঁচু করা সম্ভব হয়নি৷ জল জমার সমস্যার পাশাপাশি অন্য যে সমস্যাগুলি রয়েছে তা, হাওড়া-টিকিয়াপাড়ার মাঝে তিনটি মাত্র লাইন৷ যার দু’টি দিয়ে ট্রেন ঢুকবে, একটি দিয়ে বেরিয়ে যাবে অথবা তার উল্টোটাও হতে পারে৷ একসঙ্গে তিনটির বেশি ট্রেন ‘মুভ’ করতে পারে না৷ এ ছাড়া ডাউনে মেল এক্সপ্রেস আসে নিউ কমপ্লেক্সে৷ আপ ট্রেনের খালি রেক আসে কারশেডে৷ আবার মাঝে মেল এক্সপ্রেস ছেড়ে গেলে পিছনে থেকে যায় সেই ইঞ্জিনটি যা খালি রেক টেনে এনেছিল৷ সেটিও পরে কারশেডে ফেরে৷
পাশাপাশি ৯০ শতাংশ লোকালে ট্রেন পুরনো স্টেশনে আসে এবং ছাড়ে৷ ১৩ নম্বর থেকে ছাড়া ট্রেনগুলি আপ লাইন ধরতে যে বক্রতা নেয় তা অন্য সব লাইনগুলিকে ব্লক করে দেয়৷ ফলে ডাউন ট্রেনগুলিকে আউটার সিগন্যালে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়৷ এই বিঘ্নের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হয় বলে ওই রেলের কর্তাদের মত৷ দীর্ঘ এই সমস্যা মেটাতে হলে বিকল্প চতুর্থ লাইনের৷ টিকিয়াপাড়া থেকে সাঁতরাগাছির মধ্যে চতুর্থ লাইন তৈরি হয়েছে আগেই৷ এবার হাওড়া-টিকিয়াপাড়ার মাঝে চতুর্থ লাইন হলে খানিকটা ‘লেট’ বদনাম ঘুচবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ নতুন এই প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখে ইঞ্জিনিয়াররা সবুজ সংকেত দেয়৷ এর পরই প্রস্তাব পাঠানো হয় রেল বোর্ডে৷ এখন শুধু অপেক্ষা নির্মাণের জন্য৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.