বলির পাঁঠা চলেছে ভক্তের বাড়িতে, ছবি : সুকান্ত চক্রবর্তী।
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: কালীপুজো আসতে আর এক সপ্তাহ বাকি নেই। এরমধ্যেই পাঁঠার দাম আকাশছোঁয়া। হাটে পাঁঠা মিললেও দামে পোষাচ্ছে না অনেকের। এদিকে মানতের পাঁঠা কিনতেও হবে। পাঁঠা কিনতে এসে বেজায় বিপাকে মধ্যবিত্ত বাঙালি। একই সমস্যায় পড়েছেন ঘাটালের স্কুল শিক্ষক অবিনাশ মাইতি। তবু মানতের বলি, তাই বেশি দাম দিয়েই কিনলেন পছন্দের পাঁঠা।
একমাত্র ছেলের অর্শ রোগ কিছুতেই সারছিল না৷ ডাক্তার, বৈদ্য, কবিরাজ কোনওকিছুই বাদ দেননি দাসপুরের অবিনাশ মাইতি৷ এদিকে দিন দিন ছেলে প্রীতম শীর্ণকায় হয়ে উঠছে৷ এই চেহারা দেখে রাতের ঘুম উবে গিয়েছিল বাড়ির লোকের। তারপর প্রতিবেশীদের পরামর্শ মেনে পূর্ব মেদিনীপুরের টালিটা গ্রামের প্রাচীন কালী মায়ের কাছে জোড়া পাঁঠা মানত করেছিলেন তিনি৷ তারপর ছেলের অর্শ নাকি সেরে গিয়েছিল৷ সেই ছেলে এখন কলকাতায় ডাক্তারি পড়ছে৷ সে প্রায় ১০ বছর আগের ঘটনা৷ তারপর থেকে ফি বছর টালিটা মায়ের কাছে ছেলের নামে জোড়া পাঁঠা বলি দিয়ে আসছেন অবিনাশবাবু৷ বুধবার জোড়া পাঁঠা কিনতে ঘাটালের নবগ্রাম হাটে গিয়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ পাঁঠার দাম শুনেই থ হাইস্কুল শিক্ষক অবিনাশবাবু৷ গত বছর যে সাইজের পাঁঠা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন সেই পাঁঠার দাম আজ আট থেকে দশ হাজার টাকা হেঁকে বসেছেন ব্যবসায়ী৷ শেষপর্যন্ত ১৬ হাজার টাকা দিয়ে জোড়া পাঁঠা কিনে বাড়ি ফিরেছেন তিনি৷
কথা পাড়তেই অবিনাশবাবু বলেন,“প্রতি বুধবার ঘাটালের এই নবগ্রামে গরু-ছাগল বিকিকিনির হাট বসে৷ আগামী মঙ্গলবার কালীপুজো৷ আজই শেষ বুধবার৷ তাই আটদিন আগে থেকে ছাগল কিনতে হাটে এসেছিলাম৷ কিন্তু ছাগলের দাম শুনে মাথায় হাত৷ উপায়ও নেই৷ মায়ের মানত তো আর বাতিল করা যায় না৷ তাই দরদাম করে দুটো ছাগই কিনলাম৷” একইভাবে বাড়ির পুজোয় ফি বছর ছাগ বলি দেন হুগলির বালিদেওয়ানগঞ্জ গ্রামের নিখিল দিগপতি৷ তিনিও নবগ্রাম হাটে এসেছিলেন ছাগ কিনতে৷ একটি মাত্র ছাগল ১২ হাজার টাকায় কিনে বাড়ি ফিরেছেন৷ তিনি বলেন, “এই সাইজের ছাগল গত বছর কিনে নিয়ে গিয়েছি সাত হাজার টাকায়৷ আর এ বছর প্রায় দ্বিগুণ৷ কী করব, ছাগলের দামের জন্য তো আর মায়ের প্রথা বাতিল করতে পারি না৷”
[৬০০ বছরের রীতি, কালীপুজোর সকালে এই মন্দিরে মায়ের চক্ষুদান হয়]
ঘাটালের নবগ্রাম হাট গবাদি পশু কেনা বেচার জন্য বিখ্যাত। প্রতি বুধবার এখানে হাট বসে৷ ঘাটাল চন্দ্রকোনা রাজ্য সড়ক লাগোয়া হাটে এদিন ভিড় উপচে পড়েছে। পরিস্থিতি বুঝে ছাগলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বনিম্ন চারহাজার থেকে শুরু করে একটি ছাগল ২০-২৫ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। দাসপুর থেকে ১৫টি ছাগল নিয়ে এসেছিলেন ব্যবসায়ী শেখ নাসিরুদ্দিন৷ তিনি বলেন, “বছরে এমন সুযোগ তো একবারই আসে৷ এবছর ভালই বিক্রি হয়েছে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.