শ্রীষিতা ঘোষ ও কলহার মুখোপাধ্যায়: সিঁদুরখেলা, দেবীবরণের পাশাপাশি মিষ্টিসুখের উল্লাসে মেতেছে বাঙালি৷ এ বছরও দশমীর দুপুরে দুর্গার ঠোঁটে সন্দেশ ছোঁয়ানো পর্ব শেষ হতেই মিষ্টিমুখের যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে তা চলবে কালীপুজো, ভাইফোঁটা পর্যন্ত৷ নিরন্তর, অবিরাম৷
পুরাণ বলে, প্রতি বছর মর্তে এসে কলকাতার তিন বনেদি বাড়ি না গেলে দুর্গার নাকি মন ভরত না৷ স’বাজারের বাড়ি তিনি যেতেন নাচ দেখতে৷ দাঁয়েদের বাড়িতে গয়না পরতে৷ আর মিত্তিরদের বাড়ি যেতেন মিষ্টি খেতে৷ দুর্গাকে নিবেদনের পর সেই মিষ্টির প্রসাদ নিতে মিত্তিরবাড়িতে ভেঙে পড়ত প্রায় গোটা কলকাতা৷ দুর্গার জন্য ছোট গরুর গাড়ির চাকার সাইজের অমৃতি, পাশবালিশের মাপের গজা, প্রায় পাঁচ সের ওজনের খাজা তৈরি হত অভয়চরণ মিত্তিরদের বাড়িতে৷ সে দিন অবশ্য অতীত৷ তবে তার টুকরো টাকরাটা এখনও মিত্তিরবাড়িতে উঁকি মারলে মিলতে পারে বইকি৷
উত্তর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়িতে এখনও বিজয়া দশমী পর্যন্ত বাইরের মিষ্টির প্রবেশ নিষেধ৷ পুজোর বহু আগে থেকেই মিষ্টি তৈরির কাজে নেমে পড়েন রাজবাড়ির বাঁধা হালুইকর৷ বংশানুক্রমিকভাবে তাঁরাই সামলান দেববাড়ির ভিয়েন৷ এখনও বিজয়ায় সেখানে গেলে ভাগ্যে জুটতে পারে শালপাতার চ্যাঙারি ভরা মিষ্টি৷ স্বাদে গন্ধে যা অতুলনীয়৷
মাখনলাল থেকে বলরাম মল্লিক, উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেগাস্টারের সমীক্ষা বলছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাজি মারতে চলেছে চকোলেট সন্দেশ৷ শহরের দক্ষিণে এবার অবশ্য আমের স্বাদের আলফানসো ও কেশর-পেস্তা সন্দেশেরও বিপুল কাটতি৷ ভীম নাগ প্যারাডাইসের উপর ভর করে এবারও নেমেছে মিষ্টিযুদ্ধে৷ এই ক’টা দিন বাংলার সেরা রসগোল্লাকে ছাপিয়ে এগিয়ে যায় সন্দেশ৷ তবে কে সি দাসের ‘স্পেশাল’ টিনজাত রসগোল্লা সন্দেশকে টেক্কা মেরে এগিয়ে যেতেও পারে বলে অনেকের ধারণা৷ বিজয়ায় বাজিমাত শুধু মেগাস্টারদের নয়৷ কলকাতার অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মিষ্টির দোকানে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে ভিয়েনঘর৷ প্রায় চার হাজারেরও বেশি দোকানে এই ক’দিন শো-কেস ভর্তি হয়ে থাকবে নয় নয় করে প্রায় শ’খানেক করে আইটেম৷ এবার আনকমন হচ্ছে বাটার স্কচ সন্দেশ, কফি সন্দেশ, পেস্তা ব়্যাপ, কাঁচা ছানার সন্দেশ, মালাইপুরি, নারকেল মালাই চপ৷
সারা বছরের ডায়েট ভুলেছে বাঙালি৷ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে বিজয়া করতে যাওয়ার পর্বও জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে৷ কলকাতার সনাতনী রসগোল্লা, লেডিকেনি, মিষ্টি লাল দইয়ের পাশাপাশি সাবেকি দিলখুশ, চকোলেট সন্দেশ, ম্যাঙ্গো ও চকোলেট দই, স্ট্রবেরি রসগোল্লা, ক্ষীর পটল, সুইট রোলের মৌতাতে মজেছে বাংলা৷ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ভোজনরসিক বাঙালির কথা মাথায় রেখে দোকানে দেদার বিকোচ্ছে ‘সুগারফ্রি’ রসগোল্লা, সন্দেশ, রাবড়ি, মিহিদানার মতো জিভে জল আনা মিষ্টিও৷
শহরের মিষ্টি দোকানগুলিতে লম্বা লাইন পড়ছে৷ এই সুযোগে এক লাফে মিষ্টির দাম বেড়েছে অনেকটাই৷ খদ্দেররা জানাচ্ছেন, অস্বাভাবিক দাম বেড়ে গিয়েছে মিষ্টির৷ দশ টাকার নিচে ভাল মিষ্টিই মেলা দায় হয়ে পড়েছে৷ ছোট দোকানগুলি সেভাবে দাম না বাড়ালেও মিষ্টির আকার ছোট করে দিয়েছে৷ অবাঙালি মিষ্টির বাজারেও লেগেছে আগুন৷ মতিচুর লাড্ডু থেকে কাজু বরফি, সব কিছুরই দাম গত বছরের তুলনায় একধাক্কায় বেশ অনেকটাই বেড়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.