সৌরভ মাজি, বর্ধমান: এক নয়, একাধিক পুজোর প্রচলন করেছিল বর্ধমানের রাজ পরিবার৷ রাজবাড়ির অভ্যন্তরে পটে পূজিত হন দুর্গা৷ পটেশ্বরী নামে যিনি পরিচিত৷ আর রাজবাড়ির বাইরে সর্বমঙ্গলা মন্দিরেও হয় দেবীর আরাধনা৷ যেখানে অষ্টমীতে কামান দাগা হত৷ যা শুনে শহর তো বটেই, প্রত্যন্ত গ্রামেও শুরু হত অষ্টমীর পুজো৷
মহালয়ার পর প্রতিপদ থেকেই শুরু পটেশ্বরীর শারদোৎসব৷ এদিন দুর্গার ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ একসময় রাজাদের তত্ত্বাবধানে জাঁকজমক করে মহা সমারোহে পুজো হতো এখানে৷ কিন্তু এখন আর সেই রাজ আমল নেই৷ তবে পুজোর আড়ম্বরে কোনও খামতি নেই এখানে৷ বর্ধমান রাজপরিবারের ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রায় দেড়শো বছরের আগে মহারানি বিষ্ণুকুমারীর উদ্যোগে বর্ধমান রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির৷ সেখানে পটচিত্রে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়৷ সেই পরম্পরা আজও চলে আসছে৷
বর্ধমানের মহারাজরা পুজোয় হাজির থাকতেন একসময়৷ এখন পটেশ্বরী পূজিত হন রাজকুমার প্রণয়চাঁদ মহতাব ও তাঁর সহধর্মিনী নন্দিনী মহতাবের পৃষ্ঠপোষকতায়৷ মন্দিরের পুরোহিত উত্তম মিশ্র, শিবপ্রসাদ চোঙদার, অসিত ভট্টাচার্য, সুমন মিশ্ররা জানান, মহালয়ার পরদিন প্রতিপদে ঘট প্রতিষ্ঠার পর দশমী পর্যন্ত দেবীর আরাধনা হয় এখানে৷ আগে সুপারি বলির রীতি ছিল অষ্টমীতে৷ এক বস্তা সুপারি এনে অনুশীলন করা হতো৷ তারপর বলি দেওয়া হতো সুপারি৷ কিন্তু এখন আর বলি হয় না বলে জানিয়েছেন পুরোহিতরা৷
নবমীতে কুমারী পুজোরও রীতি রয়েছে এখানে৷ রাজ এস্টেটের ম্যানেজার জয়চাঁদ চট্টোপাধ্যায় জানান, বর্তমান রাজকুমার প্রণয়চাঁদ মহতাব ও তাঁর সহধর্মিনী নন্দিনী মহতাব এখনও অষ্টমীর রাতে এখানে আসেন৷ নবমীর দিনটি এখানে থেকে পুজোয় শামিল হন৷ বর্ধমান রাজবাড়ির ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, আগে পুজোর সময় জলসা হতো৷ তবে রাজবাড়ির পটেশ্বরী পুজোয় সংযোজিত হয়েছে গুজরাতি ডান্ডি নাচ৷ কারণ বর্ধমান রাজবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় গুজরাতি সম্প্রদায়ের বহু মানুষ বসবাস করেন৷ তাঁদের নবরাত্রি উৎসব বিখ্যাত৷ বর্ধমানে সেই অর্থে নবরাত্রি পালিত না হলেও ওই সম্প্রদায়ের মানুষজন পটেশ্বরী পুজোয় ডান্ডি নৃত্য করেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.