সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি দলিত৷ তাই পাড়ার কুয়ো থেকে তাঁকে জল নিতে দেয়নি উচ্চবর্ণের প্রতিবেশী৷ তাতে অবশ্য হাল ছাড়েননি তিনি৷ বদলে যা করেছেন তা যেন দলিতদের অধিকার অর্জনের এক নজির৷ বুন্দেলখণ্ডের আদিবাসী রমণী কস্তুরী নিজের হাতে আস্ত একটি কুয়োই খুঁড়ে ফেলেছেন৷ সে কুয়োর জলেই এখন তৃষ্ণা মিটছে খান চল্লিশেক পরিবারের৷
বুন্দেলখন্ডের দুদ্ধি গ্রামের বাসিন্দা কস্তুরী৷ কুয়ো থেকে জল নিতে গিয়ে অপমানিত হওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা৷ আর জাতের বজ্জাতিতে হ্যান্ড পাম্পে তো হাত দেওয়ার অধিকারই নেই৷ এরকমই এক দিন অপমানিত হওয়ার পর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে৷ সেদিনই গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কস্তুরী৷ তখন তাঁকে অনেকেই পাগল ভেবেছিলেন৷ এমনকী তাঁর সন্তানরাও তাঁকে এ কাজ করতে নিষেধ করেছিল৷ যেখানে উচ্চবর্ণের মানুষের অপমান নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, তখন এটাকেই নিয়তি বলে ভেবে নিয়েছিলেন দলিত সম্প্রদায়৷ এর যে অন্যথা হতে পারে তা ভেবেও দেখেননি কেউ৷ কস্তুরীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাননি কেউই৷ কিন্তু নিজের ভাবনায় অটল ছিলেন কস্তুরী৷ তিনি উঠে যান গ্রাম ছেড়ে একটু দূরে৷
প্রতিবেশীর লাঞ্ছনা-গঞ্জনা থেকে মুক্তি পেয়ে সেখানে একদিক থেকে ভালই ছিলেন৷ কিন্তু পানীয় জলের সমস্যা তো মিটল না৷ সম্বল বলতে একটি ঝির বা ঝর্ণা৷ কিন্তু তাতে কী আর কাজ চলে! এক কলস জল ভরতে হয়তো সারাদিন লেগে যেত৷ এরপরই কুয়ো খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ কাজ করতে করতে কখনও কখনও তাঁর মনে হয়েছে, আর বোধহয় পারবেন না৷ কিন্তু ভেঙে না পড়ে আবার কাজ শুরু করেছেন৷ নিজের হাতেই এ কাজ করে চলেছিলেন তিনি৷ পরে তাঁর পরিশ্রম দেখে পরিবারের মানুষও হাত লাগান৷ দেখাদেখি আরও ৪০টি পরিবারের মানুষ এসে কাজ শুরু করেন৷ সকলের সমবেত চেষ্টায় অবশেষে ২৫ফুট গভীর আস্ত একটা কুয়ো খনন করা সম্ভব হয়৷
সে কুয়োর জলেই এখন ৪০টি পরিবার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে৷ নাহ, উচ্চবর্ণের কোনও গঞ্জনা আজ আর তাঁদের শুনতে হয় না৷ জলের আর এক নাম জীবন, জলের সূত্রেই আক্ষরিক অর্থে নতুন এক জীবনের স্বাদ পাচ্ছেন কস্তুরীরা৷
ছবি-প্রতীকী
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.