খালড়ের মহাকালী।
সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা শ্যামা মা হল বাগনানের খালড়ের মহাকালী। মোঘল সম্রাট আকবরের প্রধান মন্ত্রী আবুল ফজল ইবন মুবারক তাঁর রচনায় খালড়ের উল্লেখ করেছেন। অনিবার্যভাবেই চলে এসেছে মহাকালীর প্রসঙ্গও। তিনি আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে তৎকালীন হাওড়ার এই অখ্যাত অঞ্চলকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই সময় হাওড়া ছিল বর্ধমানের রাজাদের জমিদারী। মহারাজা কন্দর্প নারায়ণ রায় প্রথম কালীপুজোর সূচনা করেছিলেন। সেইসময় আট ফুটের দক্ষিণাকালীর মৃন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। ১২৯৫ বঙ্গাব্দে সেই প্রতিমা বিনষ্ট হয়ে গেলে একটি দারুমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কথিত আছে দ্বিতীয় মূর্তিটিও বিনষ্ট হয়ে গেলে শ্যামপুর নিবাসী দারু শিল্পী গণেশ চন্দ্র মণ্ডল ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তারপর একটি মাত্র নিম কাঠের সাহায্যে মন্দিরের বর্তমান মূর্তিটি নির্মাণ করেন। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ৩২ আষাঢ় সেই মূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা হয়। তারপর থেকে সেই মূর্তিতেই পুজিতা হয়ে আসছেন দেবী।
মন্দির চত্বরে বিশাল নাটমণ্ডপের পাশে দুটি আটচালা মন্দিরে দেবীর ভৈরব বানলিঙ্গ ও মৃত্যুঞ্জয় শিব প্রতিষ্ঠিত। মহাকালী মন্দিরের পশ্চিমে অবস্থিত একদালান মন্দিরে অসংখ্য কূর্মমূর্তি-সহ ধর্ম দেবতা অধিষ্ঠিত। এই মন্দির চত্বরে মায়ের জন্মদিন ছাড়াও ভাদ্র ও পৌষ মাসের অমাবস্যা তিথিতে তালকালী ও মুলোকালীর মেলা বসে। কালীপুজোর দিনেও মহা সমারোহের সঙ্গে সারারাত ধরে ভক্তি ভরে পুজো অর্চনা চলে। দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। বাগনান রেলস্টেশন থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে বাগনান-শ্যামপুর রোডের উপরে এই মন্দিরটি অবস্থিত। ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা খালোড় মহাকালীর মন্দিরের মাহাত্ম্য আজ জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
এটি হাওড়া জেলার অন্যতম একটি পর্যটন স্থান হিসাবেও চিহ্নিত হয়েছে। বাগনান রেলস্টেশনের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে অসংখ্য থিমের পুজোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু খালোড়ের মা মহাকালীর মন্দিরের পুজোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা থাকে চরমে। পুজোর দিন সন্ধ্যাবেলায় মন্দির চত্বরে মাটির প্রদীপ ও মোমবাতির আলোয় ভরিয়ে তোলেন স্থানীয় মহিলারা। এবছরেও ৪০০ বছরের এই পুজোকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্দির কমিটির সদস্য বৃন্দ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.