নব্যেন্দু হাজরা ও অভিরূপ দাস: বন্ধুরা অনেকেই শুকনো নেশার কথা বলছিল ক্লাসে। চরস, গাঁজা, ব্রাউন সুগার, হাসিস। সম্পর্ক ভাঙার দুঃখ ভুলতে নাকি শুকনো নেশা দারুণ কাজ দেয়। কিন্তু, কোথায় মিলবে নেশার সামগ্রী? ভেবে পাচ্ছে না সদ্য ব্রেক আপ হওয়া নিউ আলিপুরের সায়ন্তিকা। ঠিকানা বাতলে দিল কলেজেরই এক সিনিয়র। “নেটে দেখ না। আমরা তো ওখান থেকেই কিনি। ডার্ক নেট, ইবে—তে দিব্যি মিলছে সবকিছু। বাড়িতে এসে একেবারে দিয়ে যাবে রাংতায় মোড়া চরস, হাসিস, এলএসডি।”
[ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের আড়ালে নিষিদ্ধ ড্রাগস পাচার, সল্টলেকে মাদকচক্রের পর্দাফাঁস]
এতদিন তো এসব ছিল কার্যত মরীচিকা। নাগালের মধ্যে পাওয়াই যেত না। চোরাপথে কেউ কেউ জোগান দেয় বটে। কিন্তু তাতেও থাকে ধরা পড়ার ভয়। “বাট! অনলাইন?” প্রথমটায় বিশ্বাস হয়নি সায়ন্তিকার। কোকেন, ব্রাউন সুগারও অনলাইনে? স্মার্ট ফোন ঘাটতেই অবাক কেমিস্ট্রি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ‘মাত্র’ ৪২০০ টাকাতেই মিলছে ২০ গ্রাম হাসিস। একেবারে বাড়িতে ডেলিভারি। কিনে আনার ঝামেলা নেই। বন্ধ ঘরে শুধু টেনে নিলেই হল। ব্রেক আপের যন্ত্রণা ভুলে একেবারে স্বপ্নের জগতে। ঘুণাক্ষরে জানতে পারবে না বাড়ির লোকজনও। মদের মতো কোনও গন্ধ যে নেই!
[সেলিব্রিটি ডিজের মুখোশের আড়ালে কীভাবে মাদকের কারবারে মেতেছিল নিখিল?]
কিন্তু কিনবে কীভাবে? ফেসবুকে আলাপ হওয়া বয়সে বড় ডিজে বন্ধুই বাতলে দিল পথ। ‘উইড’ (গাঁজা, হাসিস, চরসকে এই নামেই এখন ডাকছে জেন ওয়াই) কিনতে গেলে গুগলে সার্চ মারলেই হবে। লিখতে হবে ‘বাই উইড অনলাইন।’ তারপরই খুলে যাবে নেশার জানালা। মারিজুয়ানা থেকে চরস, ক্যানাবিস স্যাটিভা, অরগ্যানিক্স মিক্সচার—সহ নানা নামেই মোড়কে মিলবে হাসিস, গাঁজা, চরস, এলএসডি। এমনকী বিভিন্ন সময়ে ডিসকাউন্টও দিচ্ছে তারা। কোথাও আবার ওষুধের মোড়কে বিক্রি হচ্ছে নেশার জিনিস। শুধু কলেজ পড়ুয়া বা সাধারণ মানুষ নন। অনলাইনে ড্রাগস কেনাবেচা করে চলছে মাদক পাচারের বড় র্যাকেট। এই র্যাকেট চালানো লোকজন বিট কয়েন এবং অন্যান্য অনলাইন ট্রানজাকশনের মাধ্যমেই চালাচ্ছে কারবার। চলছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।
[মাদকচক্রের পর্দাফাঁস, রেভ পার্টির আগে পার্ক স্ট্রিটের নাইটক্লাবের ডিজে-সহ ধৃত ৩]
কিন্তু কী এই বিট কয়েন? বিট কয়েনের অর্থ ভারচুয়াল মানি। অনলাইন অ্যাকাউন্টে অর্থের বিনিময়ে এই কয়েন কিনতে হয়। নেশার জিনিস কেনার সময় এই বিট কয়েনের মাধ্যমেই পেমেন্ট করতে হয়। সাইবার বিশেষজ্ঞদের চোখে ধুলো দিতেই মাদক পাচারকারীরা তৈরি করে ফেলেছে এই ভিপিএন বা ভারচুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। এটি ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে অর্ডার দিলে ক্রেতার আইপি অ্যাড্রেসের নাগাল পাবেন না দুঁদে গোয়েন্দাও।
[হ্যাকারের দখলে হোয়াটসঅ্যাপ, অশ্লীল মেসেজ নিয়ে বিভ্রান্ত যুবক]
একথা গল্পের মতো শোনালেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। তাঁদের কথায়, শহরের অভিজাত কলেজ এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছে ড্রাগ পৌঁছে যাচ্ছে সহজেই। তারা কিনছে অনলাইনে। কেউ বা ডিলারের মাধ্যমে। অনেক ছাত্রছাত্রী তো আবার পেডলারের (লেনদেনের) কাজ করছে। এনসিবি—র পূর্বাঞ্চলের ডিরেক্টর দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, “ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু প্রথম সারির স্কুল—কলেজের নাম উঠে এসেছে। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা এলএসডি, হাসিস, চরস কিনছে। কেউ পেডলারের কাজ করছে। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হবে।” পাশাপাশি তিনি জানান, ঘটনার কিংপিন নিলয় অনলাইনে ড্রাগ কিনত। তাকে জেরা করে ডার্কনেট লিংক নামের একটি অনলাইন শপিং সাইটের নাম পাওয়া গিয়েছে। বাই পোস্টে এবং কুরিয়রের মাধ্যমে এই জিনিস তার কাছে আসত। দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, “আমরা স্কুল—কলেজে ড্রাগবিরোধী সচেতনতামূলক প্রচারের কাজ শুরু করেছি।”
[হাওড়া-শেওড়াফুলি লোকালের ‘হীরকপ্রাপ্তি’, ইতিহাস খুঁজল মঙ্গলবারের EMU]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.