জার্মানি – ০ ফ্রান্স – ২ (গ্রিজম্যান)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অনেক ছক কষে, অনেক গবেষণা করে, অনেক পরিসংখ্যান ঘেঁটে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদেরই খানিকটা এগিয়ে রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু অঘটনটা আটকানো গেল না৷ জার্মান দূর্গে কামান দাগলেন দেশঁর ছেলেরা৷ উড়ে গেল তারা৷ ফ্রান্স পেল ফাইনালের ছাড়পত্র৷
ইউরোর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নামার আগে বিপক্ষকে নিয়ে খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না জার্মান কোচ জোয়াকিম লো৷ জোর গলায় বলেছিলেন, ফরাসিদের ঘরের মাঠ তো কী হয়েছে? দু’বছর আগে বিশ্বকাপ তো ব্রাজিলে ছিল৷ কী হয়েছিল সকলের নিশ্চয়ই মনে আছে! এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কি ডোবাল জার্মান শিবিরকে? এমন সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ নাহলে সারাক্ষণ বল পায়ে ঘুরল জার্মানদের আর গোল করে গেল ফ্রান্স! প্রথমার্ধে জার্মানি যেন ধরেই নিয়েছিল ডিফেন্সিভ ফুটবলের দিকেই ঝুঁকবে ফ্রান্স৷ আর সেটাই কাল হল৷ জার্মান সমর্থকরা বলতেই পারেন, ভাগ্যক্রমে পেনাল্টিটা পেয়ে যাওয়াতেই এগিয়ে গেল ফরাসি ব্রিগেড৷ কিন্ত ভুলে গেলে চলবে না, স্ট্র্যাটেজি, দর্শনীয় ফুটবল, পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া আর ভাগ্য সবটা নিয়েই তো ফুটবল৷ গোলশূন্য হতে চলা প্রথমার্ধের রং বদলে গেল অ্যাডেড টাইমে৷ বক্সের ভিতর সোয়াইনস্টাইগারের হ্যান্ড বলের সৌজন্যে পেনাল্টি উপহার পেল ফ্রান্স৷ সেমিফাইনালের মতো মঞ্চে ভুল করা চলে না৷ গ্রিজম্যানও করেননি৷ স্কোরবোর্ডে তখন প্রথমার্ধে ১-০ এগিয়ে গেল ফ্রান্স৷
নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে হারের কারণ হিসেবে দলের চোট ও কার্ড সমস্যাকে তুলে ধরতে পারেন লো৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, যে দল বিশ্বকাপে বাকিদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, এই জার্মানির সঙ্গে কি তার তুলনা করা চলে? ইউরোর প্রথম ম্যাচ থেকেই রাখ-ঢাক করে খেলছিলেন জার্মানরা৷ অনেকে মনে করেছিলেন আস্তে আস্তে খোলস ছাড়বে দল৷ কিন্তু নক-আউটেও তেমনটা হল না৷ অর্থাৎ গোটা ইউরোয় মনে রাখার মতো কিছুই করতে পারলেন না লো৷ এদিন খেলার শেষ মুহূর্তে প্রাণ বাজি রেখে কিমিচের হেডার সেভ করলেন ফরাসি গোলকিপার লরিস৷ ফলে একটা গোলও শোধ করা হল না জার্মানির৷
জার্মানির উইং প্লে আর ক্রস পাসকেই ভয় পাচ্ছিলেন ফ্রান্স কোচ দেশঁ৷ কিন্তু কোথায় সেই স্কিল, সেই মাঝমাঠ, সেই উইং ধরে দৌড়! এমনকী যে ফ্রান্সের রক্ষণের ফুটোফাটা খুঁজে নিয়ে আইসল্যান্ডও দু’টো গোল দিয়েছিল, ফ্রান্সের সেই ডিফেন্সকেও এদিন জিতিয়ে দিল জার্মানি৷ উল্টে দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটা গোল হজম করতে হল৷
গ্রিজম্যানের জোড়া গোলে এদিন জোড়া জ্বালা মিটল ফ্রান্সের৷ প্রথমত, ১৯৫৮ সালের পর থেকে জার্মানির বিরুদ্ধে কোনও বড় টুর্নামেন্টে জেতেননি ফরাসিরা৷ সেই খরা কাটল৷ আর দ্বিতীয়ত, ৮২ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বাতিস্তঁকে ঘুঁষি মেরে ফেলে দিয়েছিলেন জার্মান গোলকিপার শুমাখার৷ রেফারি কার্ড দেখাননি, ফ্রি-কিকও দেননি৷ অথচ কোমায় চলে যেতে হয়েছিল বাতিস্তঁকে৷ বদলার তেষ্টা তাতাচ্ছিল জিরুদের৷ কথা কম বলে মাঠেই সবটা প্রমাণ করে দিলেন তাঁরা৷ শাপমুক্তি ঘটিয়ে পর্তুগালের বিরুদ্ধে নামার আগে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলেন পায়েত, পোগবারা৷ ঘরের মাঠে ট্রফি হাতে তোলা থেকে আর মাত্র একদাপ দূরে দাঁড়িয়ে কবিতার দেশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.