কৃষ্ণকুমার দাস: অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার দমকলের সমস্ত গাড়িতে জিপিএস পরিষেবা চালু করছে রাজ্য সরকার৷ দমকলের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের সদর দফতরে সেই পরিষেবা ব্যবহার করে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো নিয়ে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণও শুরু করে দিলেন দমকলকর্মীরা৷ অফিসার ও কর্মীদের এই প্রশিক্ষণ দেখতে বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকা সদর দফতরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং মন্ত্রী এবং দমকলের ইউনিটে জিপিএস চালুর মূল উদ্যোক্তা শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ দমকলের শীর্ষ আধিকারিকরা দাবি করেছেন, “দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম দমকলের গাড়িতে জিপিএস পরিষেবা চালু হচ্ছে৷”
ঘটনাটি এমনই৷ অভিনেতা প্রসেনজিতের বালিগঞ্জ ফাঁড়ির বাড়ি উৎসব-এর রান্নাঘরে গত ১৯ জুলাই আগুন লাগে৷ খবর পেয়ে দমকলের গাড়ির আগেই ওই বাড়িতে পৌঁছে যান স্বয়ং বিভাগীয় মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ কিন্তু আগে রওনা হয়েও, ঠিকানা জানা সত্ত্বেও দমকলের গাড়ি অভিনেতার বাড়ি খুঁজে পাচ্ছিল না৷ ফাঁড়ি ও মডার্ন স্কুলের মাঝে সাইরেন এবং ঘণ্টা বাজিয়ে ঘুরছিল আগুন নেভাতে আসা ইউনিটগুলি৷ ততক্ষণে মন্ত্রী নিজেই কার্যত রাস্তার মাঝে ওই গাড়ি থামিয়ে ঠিকানায় পাঠান৷ যদিও মন্ত্রী ও গাড়ি পৌঁছনোর আগেই অভিনেতার বাড়ির সদস্যরাই শর্টসার্কিট থেকে হওয়া ছোট্ট আগুন নিভিয়ে দিয়েছিলেন৷
কিন্তু ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দমকল মন্ত্রী শোভনবাবু উপলব্ধি করেন, যদি জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) পরিষেবা দমকলের ওই গাড়িতে থাকত, তবে অভিনেতার বাড়ির ঠিকানায় সটান পৌঁছে যেতে পারত দমকলের ইউনিট ও অফিসাররা৷ কার্যত সেদিনই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তৎক্ষণাৎ দমকলমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, পরিবর্তিত নগরজীবনের স্বার্থে রাজ্যের সমস্ত অগ্নিনির্বাপণ গাড়িতেই জিপিএস পরিষেবা চালু হবে৷ বিষয়টি নিয়ে দফতরের ডিজিকে কর্মীদের প্রশিক্ষণ চালুর নির্দেশও দেন তিনি৷ এদিন দমকলের সদর দফতরে পৌঁছে মন্ত্রী সেই প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেন এবং কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও৷ মন্ত্রী এদিন জানান, “শহর ক্রমশ ঘিঞ্জি হচ্ছে৷ রাস্তা, বাড়ির ঠিকানা ধরে বিপর্যয় মোকাবিলা করতে গিয়ে দমকলকে জিপিএস পরিষেবা নিতেই হবে৷ এটা এখন গোটা বিশ্বে চলছে, এবার কলকাতায় চালু হল৷”
তবে প্রায় চার দশক পর এই প্রথম ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দমকলের সদর দফতরে এসে সর্বস্তরের অফিসার ও কর্মীদের সঙ্গে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করলেন রাজ্যের নয়া দমকল ও আবাসন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ বৈঠক করে বেরিয়ে এসে আবেগাপ্লুত অফিসার ও কর্মীরা বললেন, “মুখোমুখি এই প্রথম কোনও মন্ত্রীকে বিভাগীয় সমস্যা ও সঙ্কটের কথা প্রাণ খুলে বলতে পারলাম৷ আর মন্ত্রীও সঙ্গে সঙ্গে ফোনেই অনেকগুলি সমস্যা মিটিয়ে দিলেন, বেশ কিছু পরিকাঠামো উন্নয়নের নির্দেশ দিলেন৷ এমন হতে পারে তা কখনও আমরা ভাবতে পারিনি৷” ঘণ্টা তিনেক পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় মন্ত্রী জানিয়েছেন, এবার থেকে মাঝে-মধ্যেই ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের এই অফিসে বসেই তিনি দফতরের বৈঠক করবেন, ফাইলও দেখবেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.