জ্যোতির্ময় কর্মকার, নয়াদিল্লি: যুক্তিতর্কের তুমুল বাদানুবাদের মধ্যেই দেশের সর্ববৃহৎ কর কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে বড়সড় পদক্ষেপ করল সংসদ৷ জিএসটি বা পণ্য ও পরিষেবা করের পথ সুগম করতে রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেল সংবিধান সংশোধনী বিল৷ যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সরকারের আনা সব সংশোধনীতেই মিলল ১০০ শতাংশ সমর্থন৷ টানা প্রায় ১০ ঘণ্টার আলোচনায় প্রাক্তন ও বর্তমান দুই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং অরুণ জেটলির নজিরবিহীন বাকযুদ্ধের সাক্ষী থাকল পুরো দেশ৷ সাংবিধানিক ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে মূল জিএসটি-র দু’টি বিল আসার রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে গেল স্বাভাবিক নিয়মে৷
তবে মুখে সমর্থনের কথা বললেও বুধবার আগাগোড়া একঝাঁক শর্ত সামনে রেখেই ময়দানে নামে বিরোধীরা৷ রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়, যে সব জায়গায় এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার পরই বিল সমর্থনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেস, বাম, এআইএডিএমকে-সহ অধিকাংশ বিরোধীই৷ বিল পাস হয়ে যাওয়ার পর কোনও পরিস্থিতিতেই সরকার যেন জিএসটি-র মূল বিলকে মানি বিল বা অর্থ বিলে রূপান্তর করে না নেয় সেই বিষয়েই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস চান সকলে৷ কারণ এর আগে আধার, প্রাইভেট মেম্বার বিল-সহ একাধিক বিল রাজ্যসভাকে এড়িয়ে মানি বিলে রূপান্তর করে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার৷
এদিন জিএসটি নিয়ে সংবিধান সংশোধনী বিলের উপর আলোচনার আগেই কার্যত ঐক্যমত্যে পেঁছে গিয়েছিল শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই৷ এর পরও আলোচনায় বিরোধীদের তোলা প্রতিটি উদ্বেগের বিষয় নিয়েই জবাব দেন জেটলি৷ জিএসটি লাগু হলে কেন্দ্র-রাজ্য দুই তরফেরই স্বার্থ সুরক্ষিত করে পথা চলা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, জিএসটি-র রূপরেখা কী হবে তা ঠিক করবে জিএসটি কাউন্সিল৷ আর এই কাউন্সিলে প্রতিটি রাজ্যের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই থাকছেন৷ কারণ প্রতিটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়েই গঠিত হয়েছে এমপাওয়ার্ড কমিটি৷
আলোচনার শুরুতেই বিলের খসড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চিদাম্বরম৷ রাজ্য এবং কেন্দ্রের কনসলিডেটেড ফান্ডে কত শতাংশ করে টাকা যাবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ সবচেয়ে জোর দেন, জিএসটি-র ১৮ শতাংশ ক্যাপের উপর৷ একই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন ইয়েচুরিও৷ বলেন, পরোক্ষ কর সব সময়েই গরিব মানুষের উপর বোঝা চাপায়৷ ফলে পণ্য পরিষেবা করকে ১৮ শতাংশেই বাঁধতে হবে৷ কিন্তু পরে জবাবী বক্তৃতায় জেটলি জানিয়ে দেন, করের হার যথা সম্ভব কম রাখার বিষয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে আগেই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে৷ ছোট ব্যবসায়ীদের করের উপর রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন৷ এ বিষয়েও সরকার নজর দিয়েই সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশ্বাস দেন জেটলি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.