চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়,আসানসোল: পুড়ে খাক আমাজন। পৃথিবীর ফুসফুসের সঙ্গে দহন জ্বালা ভোগ করছে বন্যপ্রাণ। গাছপালা, জীবজন্তুর সঙ্গে এখন অস্তিত্ব বিপন্ন আদিম জনজাতিরও। পৃথিবীর এই গভীর অসুখের ছবিই এবার ফুটে উঠবে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বার্নপুর নববিকাশের পুজোয়। তাদের এবারের থিম – সবুজায়ন ও বন্যপ্রাণ রক্ষা।
শুধু মণ্ডপসজ্জা বা প্রতিমাতেই সবুজের বার্তা দিয়ে থেমে থাকছে না বার্নপুর নববিকাশ ক্লাব। একেবারে আগা থেকে গোড়া – সবেতেই পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা দিতে তৎপর ক্লাবের সদস্যরা। দিন কয়েক আগে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে হয়েছে তাঁদের খুঁটি পুজো। তাঁদের শারদ পত্রিকা ‘হিল্লোল’-এর প্রচ্ছদেও রয়েছে সবুজ বাঁচানো, সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার বার্তা। জানা গিয়েছে, আদিবাসী সমাজের একটুকরো গ্রাম ও জীবনযাত্রা উঠে আসবে মণ্ডপসজ্জায়। দেবী দুর্গা-সহ অন্য দেবদেবীর মুখও আদিবাসীদের আদলে গড়া হচ্ছে। বাঁশ, মাটির হাঁড়ি, মাটির ঘোড়া, আদিবাসী সমাজের মুখোশ, মাটির বাসনপত্র, আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনকারী মডেল ও পরিবেশ বান্ধব উপকরণ দিয়ে সাজানো হবে পুজো মণ্ডপ। এখানে তুলে আনা হবে আদিবাসীদের মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানের ব্যবহৃত সামগ্রীও।
ক্লাব কর্তারা বলছেন, গত এক বছরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকবার আমাজনের জঙ্গল অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে। জঙ্গল কেটে নগর সভ্যতা সম্প্রসারণের জন্য যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটা নাশকতা, তেমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়েই। আরেকদিকে, আদি সেন্টিনাল দ্বীপের আদিবাসীদের বিরক্ত করতে সেখানেও উঁকিঝুঁকি মারছে শহুরে মানুষজন। কিন্তু প্রকৃতির ভারসাম্য আর বৈচিত্র্য বজায় রাখতে বন ও আদিবাসী জনজীবন সংরক্ষণ প্রয়োজন। সেই বার্তা দিয়েই এবারের থিম নববিকাশের।
ক্লাব সম্পাদক বাপ্পা তালুকদার বলেন, “বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণের মাত্রাও। পরিত্রাণ পেতে একমাত্র উপায় বৃক্ষরোপন, সংরক্ষণ। তাই কংক্রিট জঙ্গল থেকে প্রকৃতির মাঝে ফিরে আসার বার্তা দেবে বার্নপুর নববিকাশ ক্লাব।” পুজো এবং ও শারদ পত্রিকার সম্পাদক রূপক সরকার ও সায়নদীপ নাগের কথায়, “নববিকাশের পুজো এবার দশ বছরে পড়ল। বনভূমি সংরক্ষণের বার্তা দিয়েই স্বল্প খরচায় থিম তৈরি হয়েছে।” তাঁদের আশা, দুর্গাদর্শনের পাশাপাশি এবার মণ্ডপ থেকে সচেতনতার বার্তা নিয়ে ফিরবেন দর্শকরা। যা পরবর্তী সময়ে তাঁদের ভাবাবে।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.