স্টাফ রিপোর্টার: তোলাবাজি-সিন্ডিকেট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও তাঁর কড়া মনোভাব বুঝিয়ে দেওয়ার পর নতুন করে ধরপাকড় শুরু করল পুলিশ৷ আর শুধু ধরপাকড়ই নয়, তোলাবাজ ও সিন্ডিকেট চক্র সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো যেভাবে ধসিয়ে দিচ্ছে, তার গভীরে গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাইছে প্রশাসন৷ সে কারণেই মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে শুধু নিউটাউন থেকেই গ্রেফতার হয়েছে চার চাঁই৷ জলাশয় ভরাট, বেআইনি প্রোমোটিং বা সিন্ডিকেট আর তোলাবাজি নিয়ে মঙ্গলবার সকালেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজের কঠোর মনোভাব জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তৃণমূলের নাম তো নয়ই, তাঁর নাম করেও এবার মিলবে না রেহাই৷ প্রশাসন সূত্রে খবর, তারই জেরে নতুন করে অভিযান শুরু হয়েছে৷
ধৃতদের মধ্যে দু’জন ভজাই-বিরোধী গোষ্ঠীর দুই সিন্ডিকেট-চাঁই হিসাবে পরিচিত৷ তাদের নাম দীপঙ্কর প্রামাণিক ও ষষ্ঠী প্রামাণিক৷ নিউটাউনের প্রামাণিক পাড়ায় তাদের বাড়ি৷ বাকিদের মধ্যে বারবার অভিযোগ পেয়ে ধরা হয়েছে বাগুইআটি চত্বরে অটো-ইউনিয়নের তোলাবাজ-চাঁই সাধন সর্দারকে৷ গৌরাঙ্গনগরে বাড়ি সাধনের৷ এক সময় স্থানীয় দুষ্কৃতী বাবাই বিশ্বাসের বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত ছিল সাধন৷ অভিযোগ, আচমকাই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে সে৷ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনুগামীদের সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে৷ সাধনের নতুন করে উত্থানের সময় তার উপর নাগেরবাজার, তেঘরিয়া, বাগুইআটি-সাতগাছি, বাগুইআটি-জগৎপুর ও উল্টোডাঙা– পূর্ব শহরতলির এই প্রধান পাঁচ রুটের অটোর দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ অন্যদিকে, মন্দির কমিটির নামে তোলাবাজি চালানোর অভিযোগেও ধরা হয়েছে আরও এক দুষ্কৃতী দেবকুমার বৈরাগীকে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, বাগুইআটি-নিউটাউন এলাকা থেকে তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট-রাজের কোমর ভাঙার উদ্দেশ্যেই শুরু হয়েছে এমন সাঁড়াশি অভিযান৷ ধৃতদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও অস্ত্র মামলায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ ভোটের পরবর্তী পর্যায়ে একেবারে শুরু থেকে এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে যথেষ্ট কড়া হয়েছে প্রশাসন৷ যার জেরে গত মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৬১টি গ্রেফতারির ঘটনা ঘটল৷
সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মাঝে সমাজে অর্থনৈতিক ধস নামিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এই তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট-রাজ৷ শহরকেন্দ্রিক বেশ কিছু এলাকায় একেবারে তৃণমূলের নাম করে চলছে এই তোলাবাজি বলে অভিযোগ৷ তার পরই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন দুষ্কৃতীদের সমাজ থেকে সাফ করতে হবে৷ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “পরিষ্কার করে বলছি, জলাশয় ভরাট করলে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ অভিযোগ সত্যি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ৷ রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতী পাঠিয়ে জলাশয় ভরাট করে প্রোমোটিং মেনে নেব না৷ পুলিশকে গুন্ডাদমন করতে হবে৷ গুন্ডামি ঠেকানোই পুলিশের কাজ৷” মুখ্যমন্ত্রী এটাও বুঝিয়েছেন, অনেক সময়ই তৃণমূলের নাম জড়িয়ে ফেলা হয়৷ কিন্তু অভিযোগ কতটা গ্রহণযোগ্য, তা দেখতে হবে৷ বলেছেন, “কে তোলা তুলছে, সত্যিটা দেখতে হবে৷ উকুন বাছা আমার কাজ নয়৷” দলের ক্ষেত্রেও কড়া মনোভাব মমতার৷ তাঁর মন্তব্য, “কেউ কেউ দলের নাম করে নিজের ব্যবস্থা করছে, ব্যক্তিস্বার্থ দেখছে৷ এটা অন্যায়৷ দল তদন্ত করবে৷” এই পরিস্থিতিতে দলীয় কাউন্সিলদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে৷ কাউন্সিলরদের সীমারেখা কী, তাও বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে দলে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.