উর্মি খাসনবিশ: গত কয়েকদিন ধরেই নাকি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে একটা নাম ঘোরাফেরা করছে৷ একলব্য চৌধুরি৷ জনাকয়েক ছাত্র-ছাত্রী লিখেছেন, “সো যা বাচ্চে! নেহি তো একলব্য আ যায়েগা৷” কেউ আবার লিখেছেন, “প্রেমিকা বড্ড ঝামেলা করছিল, বললাম একলব্যর কাছে পাঠিয়ে দেব, শুনেই একদম ভিজে বিড়াল হয়ে গেল”, কেউ আবার স্বয়ং একলব্যর ছবি দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন মেমে৷ লেখা, “আই অ্যাম একলব্য অ্যান্ড আই অ্যাম আ পারভার্ট!”
কিন্তু কে ইনি? হঠাৎ তাঁর নাম করে এমন কুমন্তব্য করার কারণ কী? খুঁজতে গিয়ে গুগল করে সবেমাত্র ekala অবধি টাইপ করেছি, স্পষ্ট গুগল নিজে থেকেই সার্চ নিয়ে সবার আগে দেখিয়ে দিল ekalavya chaudhuri৷ মহাভারতের বিখ্যাত চরিত্র একলব্যকেও হার মানিয়ে দিলেন এই ছেলে৷ কারণ সার্চে আসল ‘একলব্য’-কেই হার মানিয়েছেন তিনি৷
কিন্তু ইনি কে?
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্টেলেকচুয়াল কাল্ট’-এ এই ব্যক্তির আধিপত্য৷ কবিতা, প্রেম এবং ‘ফেমিনিজম’ নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনায় তাঁর জুরি মেলা ভার৷ তাঁর লেখা পড়তে গিয়েও তাঁর শব্দচয়ন দেখে অবাক হচ্ছিলাম৷ শ্রদ্ধা জাগে সাধারণত এমন ছাত্রদের দেখলে৷
কিন্তু লেখার বিষয় বস্তু দেখে শ্রদ্ধা উড়ে যেতে বেশি সময় লাগলো না৷ আসলে মেধাবী ছেলের সাহিত্য চর্চার নির্যাস নেওয়ার সুযোগ হয়নি ব্যক্তিগতভাবে৷ ফেসবুক থেকে বেশকিছু স্ক্রিনশট পাওয়া গিয়েছিল শুধু৷ যাতে এই মেধাবী ছাত্র নিজের শিক্ষা এবং শব্দের জোরে তাঁরই এক সহপাঠীকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিলেন৷ প্রস্তাবটি পড়ে মনে হচ্ছিল, যেন কোনও দুঁদে লেখক গল্প লেখার মাঝে রয়েছেন৷ হতেই পারেন উনি দিনেকালে দুঁদে লেখক হবেন৷ কিন্তু যেই প্রশ্ন মাথায় এল, সেটি হল, তবে কি খারাপ কাজকে শৈল্পিক নৈপুণ্যের সঙ্গে করাই পড়াশোনা করার মূল উদ্দেশ্য? লেখাপড়া শিখে যদি দিনের শেষে রুচিটিই না বদলালো তবে সেই শিক্ষাই মূল্যহীন নয় কী?
পথ চলতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই রকের ছোকরারা খারাপ ইশারা করে৷ নারী অঙ্গ নিয়ে কটূক্তি করে, শুনতে খারাপ লাগে৷ কিন্তু এই মহান ছাত্র দুর্দান্ত ভাষায় যে একই কথা বললেন নিজের সহপাঠীকে৷ তথাকথিত ‘অসভ্য’ ছেলেদের সঙ্গে তাঁর ফারাক কোথায় এখন প্রশ্ন সেটাই৷
জানা গিয়েছে, তাঁর শিক্ষিত পারিপার্শ্বিক মহলের দু’একজন মেধাবী একলব্যর পক্ষ নিয়েছেন৷ তাঁর হয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন৷ আর সেই চেষ্টার মাধ্যমে অন্যদের হুমকিও দিচ্ছেন বন্ধুর বিরুদ্ধে মুখ খোলায়৷
কিন্তু ছাত্রর লীলার গল্প তো আর লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না৷ ইতিমধ্যে ১৩ জন ছাত্রী তাঁর শৈল্পিক কুপ্রস্তাব সকলের সামনে নিয়ে এসেছেন৷ তা নিয়ে বিস্তর তর্ক বিতর্কও চলছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক অধ্যাপিকার সুপূত্র এহেন কাণ্ড করায় অনেকেই নাকি প্রশ্ন করছেন, “এত কথার কী আছে বাপু? যখন দেখছ ছেলে বেলাইনে কথা বলছে, তখন ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিলেই পারো৷ স্ক্রিনশট নেওয়ার দরকার কী?” ব্লক না করাটাই যখন মহান অপরাধ তখন একলব্য মহাশয়ের এমন কুপ্রস্তাবকে বাণী ছাড়া আর কী বলা যায় তা জানা নেই৷
কিন্তু যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যাদবপুর এবং যেহেতু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে একাধিকবার নজির গড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা, তাই এবারেও তাঁর অন্যথা হল না৷ অধ্যাপকরা তাঁকে তাঁর অপার গুণের জন্য কিছু বললেন না বটে৷ তবে তিনি ক্লাসে আসা মাত্রই তাঁকে বয়কট করলেন তাঁরই সহপাঠীরা৷ একসঙ্গে ক্লাস ছেড়ে চলে গেলেন৷ ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাঁর এহেন গুণের প্রশংসা করলেন৷
সত্যি শিক্ষার কত রকম ব্যবহারই না দেখা যায়৷ একজন নিজের শিক্ষার ব্যাপ্তি কুপ্রস্তাবেই সীমিত রাখলেন আর অন্যরা কেবল করতালিতেই এমন শিক্ষার ধ্বজাধারীর গালে সপাটে চড় মারলেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.