সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: ভরা কোটাল ছিলই, এবার নিম্নচাপের ভারী বৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে রাজ্যের একাংশ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হল৷ বিশেষ সতর্কতা জারি করা হল দক্ষিণবঙ্গের ছ’টি জেলায়৷ কড়া নজরদারি চলছে নদী বাঁধ ও জলাধারগুলিতে৷
পরিস্থিতির পর্যালোচনায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন নবান্নের কর্তারা৷ আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি চলবে৷ তারপর নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডে ঢুকে গেলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে৷ তবে আকাশ মেঘলা থাকবে৷ চলবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি৷ মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা রয়েছে৷
রবিবার দিনভর বৃষ্টির ফলে ছুটির দিনটা ঘরবন্দি হয়েই কাটিয়েছে রাজ্যবাসী৷ রাত বাড়তেই বেড়েছে বৃষ্টির দাপট৷ মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনায় বৃষ্টির দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন৷ রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সন্ধ্যায় জানান, বিকেল পর্যন্ত কোনও নদীবাঁধ উপচে প্লাবিত হওয়ার খবর নেই৷ তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিটি নদীবাঁধেই ২৪ ঘণ্টার টহলদারির ব্যবস্থা রয়েছে৷ জলাধারগুলিতেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি৷ খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম৷ সেখান থেকেই চলবে ‘মনিটরিং’৷ রাজীববাবু নিজেও রাতে কন্ট্রোল রুমে থাকবেন বলে সূত্রের খবর৷
শনিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসির জল ছাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ এদিন নবান্নের পক্ষ থেকে দফায় দফায় যোগাযোগ রাখা হয় ডিভিসির সঙ্গে৷ মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বেশ কয়েকবার কথা বলেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে৷ রাজ্যের মনোভাবের কথা জানিয়ে একটি কড়া চিঠিও দেওয়া হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও এদিন বেশ কয়েকবার জল ছাড়ে ডিভিসি৷
নবান্ন সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর পর্যন্ত দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে প্রায় ৬৩,০২৬ কিউসেক ও মাইথন থেকে ৫৪,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়৷ দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় বর্ধমান, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়ার নিচু এলাকায় জল ঢুকেছে৷ জেলাগুলির জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে৷ আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মৌসুমি অক্ষরেখার ফাঁস ছিলই৷ এর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ঢুকে পড়া গভীর নিম্নচাপ হাত মেলানোয় ফের বৃষ্টি-বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে রাজ্য৷ মুর্শিদাবাদ ও মানিকচকে গঙ্গার জল বিপদসীমা ছুঁইছুঁই৷ একই পরিস্থিতি হাওড়ার দামোদর ও নদিয়ার ব্রাহ্মণী নদীর৷ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ছুটি বাতিল হয়েছে সেচ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের৷
এমনিতেই এখন ভরা কটাল চলছে৷ ফলে গঙ্গা-সহ রাজ্যের সব নদীরই জলোস্তর বেড়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি৷ এদিন সকাল থেকে মন্দারমণি ও দিঘার সমুদ্র ছিল উত্তাল৷ জলচ্ছ্বাসের জেরে অনেক জায়গায় সমুদ্রের জল ঢুকে এসেছে হোটেলের মধ্যে৷ মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যেতে বারণ করা হয় জেলা প্রশাসনগুলির তরফে৷ দিঘায় ৫০টি ট্রলারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ সুন্দরবনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সতর্ক করতে হোটেলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও বন দফতরের ক্যাম্পগুলিতে বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে৷ বকখালিতেও সমুদ্রে নামতে বারণ করা হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.