Advertisement
Advertisement
বিষ্ণুপুর দুর্গাপুজো

দেবীপক্ষের আগেই পুরোদমে পুজো শুরু বিষ্ণুপুরের এই রাজ পরিবারে

এর পিছনে রয়েছে এক অলৌকিক কাহিনি।

Durga Puja begins at Bishnapur Malla Rajbari from Monday
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:September 23, 2019 11:13 am
  • Updated:September 23, 2019 12:00 pm  

টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: অতীত ঐতিহ্য মেনেই পরপর ন’টি তোপধ্বনিতে আজ, সোমবার শুরু হবে মল্ল রাজাবাড়ির কূলদেবী মৃন্ময়ী মাতার পুজো। ১০২১ বছর পেরিয়েও এ পুজোর গরিমা আজ এতটুকুও ম্লান হয়নি। প্রাচীন এই মল্লগড়ে ধুলো পড়া স্মৃতি উসকে ফৌজদারদের পটে আঁকা বড় ঠাকুরানির প্রবেশ করবেন মল্লরাজ দরবারে। শুধুমাত্র এ রাজ্যেই নয়, অবিভক্ত বাংলায় অতীতের মল্লরাজ বংশের প্রাচীনত্ব, আভিজাত্য আর বৈভবের দিক থেকে আজও অন্যতম। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে বা ৩০৩ মল্লাব্দে রাজা জগৎ মল্ল বিষ্ণুপুরের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মা মৃণ্ময়ীদেবীর মূর্তি স্থাপন করেন। এই কূলদেবী মা মৃণ্ময়ী হলেন আদতে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। এভাবে শুরু হল মল্ল রাজ পরিবারের দুর্গাপুজো। সেই থেকে আজও রাজা জগৎমল্লের তৈরি দুর্গা মন্দিরে প্রতি বছর একই মূর্তিতে মল্লরাজবাড়ির দুর্গাপুজো হয়ে চলেছে।

প্রাচীন নিয়ম মেনেই আজ জিতাঅষ্টমীর দিন থেকেই শুরু হবে মৃণ্ময়ীদেবীর পুজো। তিথি মেনে এদিন স্থানীয় একটি সায়র (জলাশয়)-এ পুজো করে মন্দির নিয়ে আসা হবে পটের বড় ঠাকুরানিকে। তিনটি পট একই রকম দেখতে হলেও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে লক্ষ্মীবিলাস (অধুনা লুপ্ত) শাড়ি পরিহিতা বড় ঠাকুরানিকে এখানে মহাকালী রূপে পুজো করা হয়। ন’টি তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন বড় ঠাকুরানি। আর চতুর্থীর দিন ঠিক একইভাবে নিয়ে আসা হবে লাল রঙের শাড়ি পরিহিতা পটেরই মেজ ঠাকুরন অর্থাৎ দেবী মহাসরস্বতীকে। সপ্তমীর দিন মন্দিরে নিয়ে আসা হবে কমলা রঙের শাড়ি পরিহিতা ছোট ঠাকুরানি অর্থাৎ দেবী মহালক্ষ্মীকে।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: বীরভূমের স্নাতক ছাত্রীর হাতে রূপ পাচ্ছেন দুর্গা, মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত পিতা ]

কথিত আছে, আজ থেকে হাজার বছর আগে মল্লরাজা জগত মল্ল তাঁর পোষা বাজপাখিকে নিয়ে শিকারের খোঁজে বেরিয়ে ঘন জঙ্গলের মধ্যে এসে উপস্থিত হন এক বটগাছের নিচে। সেখানেই নানা অলৌকিক কাণ্ডের ঘটে। সে সময়ই দেবী মৃন্ময়ী নিজ রূপ ধরে ওই বটগাছ তলায় তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। এর পরেই জগত মল্ল ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বটগাছের পাশেই মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপন করেন। মল্ল রাজাদের সুদীর্ঘ কাহিনি এখন ইতিহাস। মল্লরাজাদের রাজ দরবারের ইঁটে নোনা লাগলেও এই ঐতিহ্যের এই মন্দিরের ইঁটের গাঁথুনি ঝকঝকে রয়েছে আজও। রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য সলিল সিংহ ঠাকুর জানান, কত না জানা ইতিহাস কথা বলে এ দালান। তাঁর কথায়, “আজও ঐতিহ্য মেনে বলিনারায়ণি পুঁথি ধরে পুজো হয় মা মৃন্ময়ীর। নবমীর নিশুতি রাতে আমরা রাজ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে পুরোহিত উলটোদিকে মুখ করে বসে খচ্চর বাহিনীর পুজো করেন। এবার পুজোর দায়িত্বে রাজ পরিবারের দুই সদস্য সলিল সিংহ ঠাকুর আর অমিতাভ সিংহদেব।”

রাজবাড়ির পুজোয় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ শুরু করেন। সেই বিবাদের আঁচ এসে পড়েছিল দুর্গাপুজোর সময় রাজ দরবারের কামান দাগার রেওয়াজের ওপর। কামান ফাটানোর বৈধতা নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও করেন একপক্ষ। তারপরেই তৈরি হয় জটিলতা। যদিও সেই অভিযোগ শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক মানস মণ্ডলের হস্তক্ষেপেই সমস্যা মেটে। তিনি এদিন বলেন, “অতীত ঐতিহ্য ও রেওয়াজ মেনে প্রতি বছরের মতো এবছরও মা মৃণ্ময়ীর পুজো হবে বিষ্ণুপুরের রাজ পরিবারে।”

[ আরও পড়ুন: জঙ্গল এলাকার মানুষের হাতে পুজোয় নতুন উপহারের ডালি তুলে দিল ‘শের’ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement