এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের পুজোর প্রস্তুতি৷
সুচেতা সেনগুপ্ত: শিশুমন কল্পনার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। তাই তো তারা ‘শরৎমেঘে’ দেখতে পায় ‘রবীন্দ্রনাথকে’। কিন্তু এই মহামারী পরিস্থিতিতে সংকট থেকে ওদের নিরাপদ দূরত্বে রাখার পাশাপাশি যেন ওদের মনের সঙ্গেও দূরত্ব খানিকটা বাড়িয়ে ফেলেছে বড়রা। এ নিয়ে ভারী অভিমান। ওরাও তো স্কুলে যেতে পারছে না, প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে খুনসুটি, ভালবাসাবাসি নেই, টিফিন নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি নেই – এসব আর ক’দিনই বা ভাল লাগে? কই, এসব কথা তো বড়রা ভাবছে না। কেউই কি ভাবছে না? মোটেই তা নয়। ভেবেছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের (Hazra Park Durgotsav) কাকু, জেঠুরা। তাই তো এবার দক্ষিণ কলকাতার এই বিখ্যাত পুজো মণ্ডপের আগাগোড়া শিশুদের ছোঁয়া। সহজ, সরল ভাবনা আর হাতের কাজ নিয়ে মা দুগ্গার জন্য মণ্ডপ সেজে উঠছে ‘সহজিয়া’ থিমে। নেপথ্যে শিল্পী কৃশানু পাল।
করোনা (Coronavirus) মহামারীর কালেও কিন্তু ”এসেছে শরৎ/ হিমের পরশ/লেগেছে হাওয়ার পরে…”। মাস্কে মুখ ঢেকে নিউ নর্মালের হাজারটা নয়া দৈনন্দিন নিয়মকানুন মেনে চলতে গিয়ে বড়দের চোখ হয়ত এড়িয়ে গিয়েছে, ছোটরা কিন্তু সব দেখেছে ওদের উদার আর মুক্ত দৃষ্টি দিয়ে। তাই তো রং পেন্সিল, প্যালেট-তুলি নিয়ে সাদা কাগজে ফুটিয়ে তুলেছে ওদের দেখা শরৎকাল, ওদের ভাবনার আগমনি আবহ। আর ওদের এই অপূর্ব সৃষ্টি চোখে পড়েছিল হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের সদস্যদের। তখনই ভাবনা, এবার এসব ছবি দিয়েই সাজানো হবে মণ্ডপ। এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের সহ-সম্পাদক সায়নদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, ”এই পরিস্থিতিতে আমরা সবসময়েই করোনা, ভয়াবহতা, মৃত্যু – এসব নিয়েই আলোচনা করছি বেশি। বাচ্চারা যেন আমাদের আলোচনা থেকে হারিয়ে গিয়েছে। ওদের মধ্যে যে সহজ-সরল ব্যাপার, তা কোথাও যেন আড়াল হয়ে গিয়েছে। তো সেই জায়গা থেকেই এবার আমরা ভেবেছি, শিশুদের চোখে দুর্গাপুজো (Durga Puja) – এই ভাবনার উপর কাজ করব। সেই অনুযায়ী থিমের নাম দেওয়া হয়েছে – সহজিয়া।”
থিমভাবনা কীভাবে রূপ পাচ্ছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের? এর উত্তরে বেশ অন্যরকম গল্প শোনালেন সায়নদেব চট্টোপাধ্যায়। শিশুদের নিয়ে কাজ করা চার থেকে পাঁচটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক হাজার শিশুকে আঁকতে বলা হয়েছিল, তাদের কল্পনার দুর্গাপুজো। সকলেই এঁকে ফেলেছে অপূর্ব সব ছবি। কারও ছবিতে মা দুর্গার মুখে মাস্ক, কারও ছবিতে কাশে ঢাকা বনপথ দিয়ে ত্রিশূল হাতে আসছেন মা দুর্গা, কেউ বা পুজোর আনন্দে একসঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে হিন্দু-মুসলিম সকলকে।
হাজারটা ছবিতে হাজারটা ভাবনার প্রতিফলন। আর এই হাজারটা ছবিতেই সাজবে ৭৮ বছরে পা দেওয়া হাজরা পার্কের এবারের মণ্ডপ। বাদ যাবে না একটিও। প্রতিমাও তৈরি হচ্ছে শিশুদের চোখে মা দুর্গার আদলে। সেভাবেই সবটা সাজাচ্ছেন থিমশিল্পী কৃশানু পাল।
আসলে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের ইতিহাস কিন্তু স্বাধীনতারও আগের। ১৯৪২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাত ধরে কলকাতা পৌর কর্মচারী সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি এই পুজো শুরু করেছিল। কালক্রমে তা আজকের পুজোয় পরিণত হয়েছে। সেদিক থেকেও প্রতি বছর এই দুর্গোৎসবে কিছু না কিছু বিশেষত্ব থাকে। এবছর যেমন শিশুদের একেবারে প্রত্যক্ষভাবে শামিল করা।
এছাড়া করোনা কালে পুজোয় সরকারি বিধি মেনে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা তো থাকছেই। উদ্যোক্তা সায়নদেব জানালেন, ”এবারের মণ্ডপ ৯৫ শতাংশই খোলা। দিনে দু’বার করে স্যানিটাইজেশন হবে। থাকছে থার্মাল স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা। যেসব দর্শনার্থীদের মাস্ক থাকবে না, তাদের এখান থেকেই মাস্ক দেওয়া হবে। এছাড়া কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।”
এ বছর খুব সীমিত বাজেট নিয়েই পুজোর আয়োজন। তা অনেকটাই শেষ। তৃতীয়ার দিন থেকেই খুলে যাবে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের মণ্ডপ। এবার নাহয় ছোটদের চোখ দিয়েই দুর্গাপুজোটা দেখি আমরা…
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.