এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশনের পুজোর প্রস্তুতি৷
সুচেতা সেনগুপ্ত: মায়াজাল, বিভ্রম, প্রহেলিকা – দশভুজা দর্শনে বেরিয়ে কলকাতার ঠিক এই মণ্ডপে এসে এমন অনুভূতির মুখোমুখি হন দর্শনার্থীরা। ঠিকই ধরেছেন, যোধপুর পার্কের ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশনের (95 Pally Association) কথা বলছি। বরাবরই দেবী প্রতিমার রূপ এখানে অন্যরকম। যেন সোজা স্বর্গ থেকে নেমে আসা। তাই তো তাঁকে ঘিরে একটা আস্তরণ, ধোঁয়াশা, স্বর্গীয় আবহ। এবছরও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আর করোনা কালে দুর্গাপুজোয় (Durga Puja) ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশনের এই অন্যরকম আবহ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। দেবী আর ভক্তের মধ্যে থাকছে নির্দিষ্ট দূরত্ব, যে দূরত্ব তৈরি করছে প্রতিমাকে ঘিরে থাকা কয়েকটি স্তর। সেই স্তর ভেদ করে তাঁর দর্শন পেতে হলে দৃষ্টিশক্তির প্রসার ঘটাতে হবে ভক্তদের। এমনই ভাবনা নিয়ে ‘লৌকিক’ থিমে সেজে উঠছে যোধপুর পার্কের ৯৫ পল্লির মণ্ডপ।
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর সংকট। তার মধ্যেই উমা আসছেন বাপের বাড়ি, পা রাখছেন মর্ত্যে। তাঁকে নিরাপদে বাপের বাড়িতে ক’টা দিন কাটাতে হলে সেইভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাটাতে হবে। তিনিই বা ব্যতিক্রমী হবেন কেন? তাই এবারও ৯৫ পল্লির মণ্ডপে দুর্গাকে ঘিরে থাকবে বেশ কয়েকটি স্তর। এমনই জানাচ্ছেন শিল্পী সুশান্ত পাল। এই মণ্ডপের বিশেষত্ব আলোর কাজ। সেই কাজই মরীচিকাসুলভ একটা আবহ তৈরি করে। এবছরও মণ্ডপের বিশেষ আকর্ষণ আলো। তবে সূর্যের আলোকে এবার প্রাকৃতিকভাবে ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছে। তা মণ্ডপের ভিতরে যেন প্রতিমুহূর্তে নতুন নতুন প্রতিফলন তৈরি করে, সেভাবেই বাকি সজ্জা তৈরি হচ্ছে।
আসলে এবছর একেবারে ভিন্ন পরিস্থিতিতে উমা আবাহানের প্রস্তুতি। তাই চিরাচরিত বেশ কিছু উপায়ে কাটছাঁট করতেই হয়েছে। বাজেটের কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিকল্পনাতেও কিছুটা বদল আনতে হয়েছে। শিল্পী সুশান্ত পালের কথায়, ”এবছর তো সেভাবে উৎসব নয়, এবছর শারদ অঞ্জলি দিচ্ছি আমরা। এবছর পরিকল্পনা যা ছিল, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ কাজ করছি আমরা। ‘লৌকিক’ থিমের আড়ালে আসলে প্রান্তিক মানুষজনের মুখে হাসি ফুটিয়ে, তাঁদের হিতার্থে কোনও কাজ করে আমরা আনন্দ পেতে চাই। আনন্দ তো একা নয়, সবাইকে নিয়ে। আর এই কাজ যদি মানুষ এসে না দেখেন, তাহলে তো কাজের কোনও সার্থকতাই নেই।” এই ভাবনা থেকে পুজোর আগে বিভিন্ন জেলার যে সব শিল্পী নানা কাজে কলকাতার পুজোর সঙ্গে ফি বছর যুক্ত থাকেন, অথচ এবছর করোনা আবহে তা পারেননি, তাঁদের সঙ্গে দেখা করে পুজোর উপহার তুলে দিয়েছেন ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশন। নাই-বা হল এবার কলকাতায় এসে পুজো দেখা, তবু শারদোৎসবের আনন্দ যাতে এতটুকুও ম্লান না হয়, তাই জন্যই এই উদ্যোগ। এভাবেই তাঁরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও সবাই শামিল করছেন তাঁদের এই কর্মযজ্ঞে।
এমনিতে ৯৫ পল্লির মণ্ডপ খোলামেলাই হয়। ভিড়ের মাঝেও প্রতিমা দর্শনে কোনও বাধা তৈরি হয় না দুর্গাকে এক বিশেষ ঘেরাটোপে রাখা শিল্পীর হাতের মুন্সিয়ানায়। এবারও তেমনটাই হবে। সরকারি বিধি মেনে মণ্ডপের অধিকাংশই খোলা থাকছে। ‘লৌকিক’-এর ছোঁয়া পেতে আসছেন তো ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশনে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.