সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্মাণের মেরুদণ্ডই হল স্তম্ভ বা খুঁটি। যাতে ভর করেই দাঁড়িয়ে থাকে সৌধ কিংবা স্থাপত্য। ঠিক তেমনই সমাজ ও সভ্যতার নির্মাণের খুঁটি হল শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষতা আর মানবিক মূল্যবোধ। কিন্তু সভ্যতার অতিযান্ত্রিকতায় কোথাও কি ঘুণ ধরছে সেই মূল্যবোধে? শিল্পী রূপক বসুর হাত ধরে সেই ভাবনাই এবার ফুটে উঠছে রায়পুর ক্লাবের পুজোয়। ৭০ বছরে তাদের নিবেদন, খুঁটি পুজো, একদিন নয় প্রতিদিন।
মানব সভ্যতার ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরনো। সময় গড়িয়েছে তার নিজের গতিতেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পালটে গিয়েছে জীবনযাপনের সংজ্ঞাও। বিজ্ঞানের উন্নতি ও প্রযুক্তির আধিপত্য প্রভাব বিস্তার করেছে মানব জীবনে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছে দৈনন্দিন জীবনের ছবিটা। সবমিলিয়ে প্রযুক্তির উন্নতির প্রলেপ লেগেছে সভ্যতার পিলসুজের গায়েও। তাই এই অতি আধুনিকতার মোড়কে কোথাও বন্দি হয়েছে নাগরিক সুখ। ভোগ আর বিলাসেই যেন ভেসে যাচ্ছে শহুরে জীবন। শুধু শহর বললেও ভুল হবে। গ্রাম থেকে মফস্বল, সর্বত্রই এর আঁচ লেগেছে। আর এর সঙ্গে পালটে গিয়েছে খুঁটির সংজ্ঞাও। শুধু দুর্গাপুজোর আগে নয়, বছরভর ক্ষমতাবান শক্ত ‘খুঁটি’কে পুজো করাই এখন দিনযাপনের অঙ্গে পরিণত হয়েছে। সমাজের উচ্চস্তরকে তোষামোদ করাই এখন যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা সে ব্যক্তিগত স্বার্থেই হোক অথবা প্রাণরক্ষার তাগিদে।
সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর ইঁদুর দৌড়ে লক্ষ্যই থাকে না, কখন নির্মাণের অপরিহার্য স্তম্ভ শিক্ষা, সংস্কৃতির অবক্ষয় শুরু হয়। তাই দিনের শেষে ভাল নেই কেউ। ভাল নেই সভ্যতার পিলসুজের অন্তরাত্মা। এই বিষয়টিই রূপক বসুর শিল্পের ছোঁয়ায় ফুটে উঠবে মণ্ডপে। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী সুব্রত মৃধা।
দুনিয়াজুড়ে এখন যুদ্ধ, দাঙ্গা, বিচ্ছিন্নতাবাদ আর ধর্মীয় সংকীর্ণতার দগদগে ঘা। কিন্তু হুঁশ কখন ফিরবে? ফিরবে কি? কালের নিয়মে উৎসব যাবে আসবে। উদযাপনের আড়ম্বরও ফিকে হবে না। তবে মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সম্প্রীতির খুঁটি পোক্ত হলেই সার্থক হবে উৎসব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.