Advertisement
Advertisement

Breaking News

দেশভাগের যন্ত্রণা

দেশভাগের অভিশাপ মুছতে দুর্গতিনাশিনীর আশীর্বাদপ্রার্থী কেষ্টপুরের এই পুজোমণ্ডপ

শিল্পী অমর সরকারের সৃজনে কীভাবে চলছে প্রস্তুতি? দেখুন ভিডিও।

Durga Puja 2019: Kestopur Prafulla Kanan theme is division of country
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 24, 2019 4:32 pm
  • Updated:September 24, 2019 4:35 pm  

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দের পুজো প্রস্তুতি৷

সুচেতা সেনগুপ্ত: ‘এমন দুঃখ আছে, যাকে ভোলার মতো দুঃখ আর নেই।’ রবীন্দ্রনাটক রক্তকরবীতে হাহাকারের সুরে বিশু পাগলের এই সংলাপের সঙ্গে কখনও কখনও ব্যক্তিগত অনুভূতির মিল পাই আমরা। বাঙালি জীবনে বাংলা বিভাজনই বুঝি সেই দুঃখ, যা ভুলে যাওয়া আত্মবিস্মৃতিই নয়, আত্মপ্রবঞ্চনার সামিল। তাই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আবহেও সেই দগদগে ঘা শুকোয় না। দুই বাংলা আলাদাভাবে মেতে ওঠে দুর্গাবন্দনায়। দুই বাংলা জলসীমান্তের অদৃশ্য রেখায় দেবী বিসর্জনের বিষাদ অনুভব করে। এক হৃদয়ে, পৃথকভাবে। সেই বেদনা চিরন্তনী। বঙ্গভঙ্গের বেদনা তাই বেজে ওঠে পুজো উদ্যোক্তাদের বুকেও। যেমন কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দ। এই দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে তাদের এবারের থিম – একই মাটির সন্তান। সৃজনে শিল্পী অমর সরকার।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ঈশ্বরের রূপ ও ভক্তির মেলবন্ধনে এবার উজ্জ্বল হবে দমদম পার্ক ভারতচক্রের পুজো]

দেবী আগমনের সময় একেবারেই আসন্ন। তাঁকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে। আর এমনই সময়ে আমরা ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেলাম কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দের মণ্ডপে। দেখা গেল, সাদা-কালো কিছু ফটোগ্রাফ, যা আগে কখনও চোখে পড়েনি। ছবির বিষয়বস্তু, কাঁটাতার, দেশভাগ। ছবি ছাড়াও বাস্তবতা ফোটাতে জায়গায় জায়গায় তৈরি হচ্ছে বন্দি শিবির, জেলখানা, কাঁটাতারের বেড়া। দেখেই বোঝা গেল, দেশভাগের যন্ত্রণার আবহে এঁরা দেবীকে আহ্বান জানাচ্ছেন। রাতের দিকেও এখানে কাজের কোনও বিরাম নেই। সকলেই ব্যস্ত নিজেদের কাজ করতে। এমনকী স্বয়ং শিল্পীও।

kestpur-prafullakanan
তাঁকেই জিজ্ঞাসা করলাম, এমন আনন্দের সময় কেন এমন এক বিষণ্ণ থিম তৈরির ভাবনা? তিনি বললেন, ‘৭৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৪৭এ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু স্বাধীনতার আনন্দ ভালভাবে উপভোগ করতে পারিনি, দেশভাগের যন্ত্রণায়। শরণার্থী শিবিরগুলো দেখে বিষণ্ণ হয়েছিলাম আমরা। আজ পর্যন্ত ভারতের একটা সঠিক মানচিত্র তৈরি হতে পারল না। কত জায়গা আছে, যার নির্দিষ্ট অবস্থান আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আজও সীমান্তে হানাহানি, স্বজনহারার বেদনার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। সেই আবহমানকালের যন্ত্রণাই এবারের থিম করেছি। বাঙালি তো এই যন্ত্রণা ভুলতে পারবে না কোনওদিন।’

kestpur-prafullakanan1

এ তো গেল ভাব। মণ্ডপে এই ভাব ফুটিয়ে তোলা খুব সহজ কাজ নয় মোটেও। কিন্তু সৃজন যেখানে শিল্পী অমর সরকারের, সেখানে কঠিন কাজও অনায়াসে হয়ে যায় দুর্দান্ত। খুব জাঁকজমক, আলোর মধ্যে তো যন্ত্রণা ফুটে ওঠা যায় না। তাই কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দের মণ্ডপ এবার আঁধারঘেরা। এলে মনে হবে, সত্যিই একটা বন্দিশিবিরের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। আপনার সামনে যতটা দৃশ্যমান, সেটা আসলে কাঁটাতারের ওপার। সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি টের পাবেন। এর জন্য অমর সরকার ব্যবহার করেছেন কিছু শব্দ। যেখানে শিকড়ছেঁড়ার যন্ত্রণা। প্রতীক হিসেবে রয়েছে, ঘরের মাঝে পাঁচিল। যার দু’দিকে দাঁড়িয়ে একে অন্যকে না দেখেও যেন দুজন কথা বলে যাচ্ছে অনর্গল। আসলে এটাই অন্তরের টান। এই আবহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমা তৈরি করছেন পরিমল পাল।

kestpur-prafullakanan2

[আরও পড়ুন: পুজোয় টলিউডের এই তারকাদের কী প্ল্যান জানেন?]

এবছর কিছুটা আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে পুজো কমিটিগুলো। কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন অধিবাসীবৃন্দও তার ব্যতিক্রম নয়। এনিয়ে পুজো উদ্যোক্তারা বলছেন, চলতি বছরে বিজ্ঞাপনে টান রয়েছে। তা জোগাড় করতে বিজ্ঞাপনদাতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁদের আশা, চিরন্তন নস্টালজিয়ার হাতছানিতেই উৎসবপ্রেমী বাঙালি পা রাখবেনই প্রফুল্লকাননের এই পুজোমণ্ডপে।

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement