পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন দমদম পার্ক তরুণ সংঘের পুজো প্রস্তুতি৷
সুচেতা সেনগুপ্ত: ‘তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,/ এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি-/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যর এই কবিতাই ছিল অনুপ্রেরণা। আর সময় যত এগিয়েছে, নগরায়নের দাপট যতই বেড়েছে, পরবর্তীতে এই কবিতাই সতর্ক করেছে। সেই সচেতনতা এবারের দুর্গাপুজোয় মাধ্যমে সকলের কাছে তুলে ধরতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন থিমশিল্পী রিন্টু দাস। দমদম পার্ক তরুণ সংঘের পুজোর মধ্যে দিয়ে। এবছর তাদের থিম – ২০১৯এ দাঁড়িয়ে ২০৯১কে দেখা।
সবুজের ফিকে রং তো কবেই ঢেকে গিয়েছে কংক্রিটের সারিতে। জলাশয়ে আর গাছেদের নিবিড় ছায়া পড়ে না। যৌবনবতী পুকুরের শরীর শীর্ণ হয়েছে। তার জমিতে বড়সড় থাবা বসাচ্ছে বহুতল, প্রমোটাররাজ। গাছেরা মৃত, অক্সিজেন বাড়ন্ত, ঝুঁকির মুখে জীবন। একটু শ্বাস নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে মানবজাতির মধ্যে। সুন্দর এ পৃথিবীর রূপের এমন ভয়াবহ বদল আর খুব বেশি দূরে নয়। যে হারে নগরজীবন বর্ধিত হয়ে চলেছে, তাতে প্রাণধারণের জন্য এই ঠোকাঠুকি লাগল বলে!
নাগরিক সভ্যতার বাড়বাড়ন্ত শিল্পীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এই ভয়াল ছবি। আর তিনি যেন সহসাই জেগে উঠছেন, বুনতে শুরু করেছেন এক কাহিনি। দমদম তরুণ সংঘের থিমের আড়ালে শিল্পী রিন্টু দাস আসলে সেই গল্পই বলছেন। তাঁর কথায়, ‘২০৯১তে পৃথিবীর চেহারা কেমন হবে, কী অবস্থা হবে, এসব তা আজকের ফ্ল্যাট কালচারই অনেকটা আভাস দেয়। সব জলাজমি বুঝে বহুতল তৈরি হবে, অক্সিজেন থাকবে না, তার জন্য মারামারি শুরু হবে, অক্সিজেন নিয়েই বড়সড় কেলেঙ্কারি হবে, কালোবাজারি হবে।’
কীভাবে ভয়াবহ দৃশ্যরচনার আড়ালে ভবিষ্যৎ পৃথিবী সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে আমজনতাকে? একটু একটু করে সেজে ওঠা মণ্ডপের বিভিন্ন অংশ দেখিয়ে রিন্টু দাস তার উত্তর দিলেন। বললেন, ‘আমি গাছের ডালগুলোকে ব্যাকবোন বানিয়েছি, যার উপর তৈরি হচ্ছে বহুতলের সারি। গাছে যে ফল বা ফুল থাকার কথা, সেখানে রয়েছে ছোট বাচ্চারা। তাদের মুখে মাস্ক, পিঠে স্কুলের ব্যাগ। কিন্তু সেই ব্যাগ নিয়ে তারা স্কুলে যাচ্ছে না। যাচ্ছে অক্সিজেনের খোঁজ করতে। তখন আর কেউ পুজো নিয়ে ভাববে না। তখন বেঁচে থাকার লড়াই তীব্র হয়ে উঠবে। এভাবেই আমি সবটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’
মণ্ডপের ভিতর অর্থাৎ দেবীমূর্তির অধিষ্ঠান যেখানে, সেই জায়গার সজ্জা আবার অন্যরকম। সেখানে আশার আলো জ্বালিয়েছেন শিল্পী রিন্টু দাস। একটি সাবেকি দুর্গাদালান, হাঁড়িকাঠ, খাঁড়া, তুলসীমঞ্চ। ছোট মন্দিরে টিমটিমে প্রদীপের আলোয় দেখা যাচ্ছে দশভুজার বিগ্রহ। মন্দির ঘিরে রয়েছে একটিমাত্র গাছ, যার সবুজই মন্দিরের প্রাণ। পাশে আরেকটি চারা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে।
শিল্পী এখানে বলতে চেয়েছেন, ২০৯১এর আঁধারঘেরা পৃথিবীতেও এই মন্দির, বিগ্রহ, গাছই আলোর দিশা হয়ে থাকবে। সমগ্র মণ্ডপ ঘুরে দেখে বোঝা গেল, দমদম পার্ক তরুণ সংঘের থিমগল্পের নীতিকথা এইই যে, সময়মতো সতর্ক না হলে এমন হতশ্রী দশাই ভবিতব্য। দেবীদর্শনের আড়ালে নীতিকথা শুনতে নাই আসতে পারেন, কিন্তু স্বচক্ষে কল্পনির্মিত ভবিষ্যৎ দেখতে নিশ্চয়ই একবার পা রাখবেন দমদম পার্ক তরুণ সংঘে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.