পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন দমদম তরুণ দলের পুজো প্রস্তুতি৷
সুচেতা সেনগুপ্ত: নারী হয়ে ওঠার সংগ্রাম তো দীর্ঘদিনের। তার খানিকটা ফলপ্রসূ, বেশিরভাগটাই এখনও অধরা। যুদ্ধ জয়ের রাস্তা আজও কঠিন। এবার নারীর দুর্গা হয়ে ওঠার সংগ্রামকেও আত্মস্থ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলার বৃহন্নলারা। দু হাতে শিকল ভেঙে দশভুজা হয়ে ওঠার লড়াই। শরতের আকাশে, আগমনির আলোয় তাঁদের সেই মুক্তির কথাই শোনাবে দমদম তরুণ দল। তাঁদের এবছরের পুজোর থিম – দেবীপক্ষ। গোটা মণ্ডপসজ্জার উপকরণ তাঁদের জীবনযাপনের প্রতিটি খুঁটিনাটি। যা বিমূর্ত হয়েও বড় জীবন্ত।
কলকাতার নামীদামি পুজোর তালিকায় দমদম তরুণ দলের স্থান বেশ খানিকটা উপরের দিকেই। গত কয়েক বছর ধরেই নিজস্ব ভাবনা আর স্বকীয় শিল্পবোধের মিশেলে পুজোর আয়োজন করে তারা নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। এবছরও যে তার ব্যতিক্রম হবে না, বরং আরও বেশি আকর্ষণীয় হবে, তার পরিচয় মিলল প্রথম দর্শনেই। আজকের আধুনিক সময়েও অনেকটা আঁধারের থাকা একটা গোষ্ঠীর জীবনকে তাঁরা আনতে চাইছেন আলোর বৃত্তে। সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনকে ব্রাত্য করে না রেখে আনন্দে তাঁদেরও সমানভাবে শামিল করে নিতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দমদম তরুণ দলের আয়োজকরা। থিম মেকার অনির্বাণ দাস তিন বৃহন্নলাকে নিয়ে তাঁর সৃষ্টিকর্মে মগ্ন। তবু এই পুজোর প্রস্তুতি দেখতে এসে কাজের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারলাম।
থিমশিল্পী অনির্বাণ দাস দমদম তরুণ দলের সঙ্গে দীর্ঘ আট বছর ধরে যুক্ত। শুধুই পেশাগত সম্পর্ক নয়, উদ্যোক্তাদের মনের কথা বুঝে প্রতি বছর তাঁদের নতুন নতুন থিমের ধারণা দিয়ে থাকেন অনির্বাণ। এবছর তাঁর ভাবনায় এসেছে – বৃহন্নলাদের জীবন। তরুণ দলের সদস্যরা তা সাদরে গ্রহণ করেছেন। অনির্বাণ দাসের কথায়, ‘ছোটবেলায় যখন বোঝা যায় যে কোনও একজন তৃতীয় লিঙ্গের বা একটু অন্য ধরনের, তখন থেকেই তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়। সমাজে লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ি থেকে তাকে বেরতে দেওয়া হয় না। কিন্তু অন্তিমত ওদের ইচ্ছেকে বেঁধে রাখা যায় না। ওরা নিজেরাই ওদের জীবনের পথে বেছে সেই পথে চলে যায়। কিন্তু তারপর হঠাৎই ওদের জীবন একমুখী হয়ে যায়। তারপর আর অন্য কোনও পথ খোলা থাকে না।’ আর এখান থেকেই শিল্পীর কল্পনার বিস্তার। অনির্বাণ এঁদের জন্য খুলে দিয়েছেন মুক্তির অজস্র দ্বার। এই দ্বার বেয়ে বৃহন্নলাদের হাততালির বহু পরিচিত শব্দগুলো ডানা মেলে পাখি হয়ে উড়ে যায় অনন্ত আকাশে।
এ তো গেল ভাবনার বৃত্তান্ত। এবার মণ্ডপে তা বাস্তবায়নের দিকে চোখ রাখা যাক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাঁশ, কাপড়-সহ একাধিক সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে চিলেকোঠা, যেখানে প্রাথমিকভাবে আটকে থাকে বৃহন্নলাদের জীবন। সিঁড়ি বেয়ে নামলেই আবার অন্য দৃশ্য। সেখানেই অনির্বাণের ভাবনার গাছে কয়েকটা পাখি বসে আছে হাততালি হয়ে। যেখানে বৃহন্নলা পুজোর থিম, সেখানে দেবীপ্রতিমার রূপেও মিশে গিয়েছেন তাঁরা। স্বনামধন্য শিল্পী সনাতন দিন্দার তুলির টানে মৃন্ময়ী হয়ে উঠবেন চিন্ময়ী।
দমদম তরুণ দলের প্রস্তুতির সিংহভাগই জেনে নিলেন। আর গল্প শোনা নয়, বরাবর যাঁদের পৃথক করে রেখেছে সমাজ, তাঁদের আপন করে নিতে চলে আসুন দমদম তরুণ দলে। উৎসবের হইহুল্লোড় থেকে বেরিয়ে শরৎ সন্ধের কয়েক মিনিট আপনিও পাবেন এক অন্য অনুভূতি, একমুঠো শান্তি।
দেখুন প্রস্তুতির ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.