সরোজ দরবার: স-এ সন্দীপ। স-এ সব্যসাচী। স-এ সমাপতন। অবাক করাই বটে। সত্যজিৎ, জটায়ু চলে যাওয়ার পরও, বাঙালিকে বড় পর্দায় ফেলুদা ফিরিয়ে দেবে যে জুটি, বিধাতার জন্মদিনের খাতায় তাঁদের নাম লেখা একই দিনে। হ্যাঁ আজ, ৮ সেপ্টেম্বরই, ইন্ডাস্ট্রিতে জ্বলছে শুভেচ্ছার ‘ডবল’ মোমবাতি। কেননা আজ পরিচালক সন্দীপ রায় আর তাঁর ফেলুদা, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীরও জন্মদিন।
নয়ের দশকের মাঝামাঝি অবধি বাঙালির কাছে ফেলুদা বলতে ছিলেন শুধুই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ই। তাঁর ওই বুদ্ধিদীপ্ত চাহনিতেই বাঁধা ছিল পর্দায় ফেলুদা অভিযানের সীমা। বিকল্প খোঁজার কথা ভাবেননি কেউ। সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ-এর পরিচালক নিজেও ভাবেননি। তবে ফেলুদার জন্য নয়, কারণ স্বতন্ত্র। এরই মাঝে আটের দশকের শেষ দিকে, লম্বা এক যুবক গিয়ে পৌঁছেছিল ভারতীয় সিনেমার দীর্ঘকায় মানুষটির কাছে। আবদার, ফেলুদার চরিত্রে অভিনয়। কিন্তু পরিচালক সত্যজিৎ যে আর ফেলুদা করবেন না বলে মনস্থির করেই রেখেছেন। আর ফেলুদা করবেনই বা কী করে! তাঁর জটায়ু, অদ্বিতীয় সন্তোষ দত্ত যে চলে গিয়েছেন ৮৮-তে। সেদিন তিনি ওই যুবককে পাঠিয়ে দিলেন তাঁর ছেলের কাছে। তিনি নিজে না করুন, ছেলের ভাবনায় হয়ত থাকতে পারে ফেলুদার কথা। ততদিনে ফটিক চাঁদ বানানো হয়ে গিয়েছে সত্যজিৎ তনয়ের। একাধিক ছবিতে বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে ‘লিগ্যাসি’ বয়ে ফেলুকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটি সেদিন তাঁর উপরই যেন দিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বখ্যাত বাবা। তখনই অবশ্য দুয়ে দুয়ে চার হল না। হল যখন টেলিভিশন সিরিজের জন্য ফেলুদার গল্পের চিত্ররূপ দেওয়ার কথা ভাবলেন সন্দীপ রায়। অবধারিত ডাক পড়ল সব্যসাচী চক্রবর্তীর। বাকিটা বাংলা সিনেমা ও বাঙালির প্রাপ্তির ইতিহাস। ছোটপর্দায় স্বমহিমায় ফিরল ফেলুদা। আর আমরা দেখলাম, কী অসামান্য দক্ষতায়, সৌমিত্র-সীমানা পেরিয়ে ফেলুদাকে নিজের মতো করে গড়ে তুললেন অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। সত্যজিৎ-সৌমিত্র যুগলবন্দি পেরিয়ে ফেলুদাকে দর্শক-মানসে নতুন প্রতিষ্ঠা দেওয়া সহজ ছিল না। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল সন্দীপ-সব্যসাচী জুটি। বড় পর্দায় ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’র অভাবনীয় সাফল্য জানান দিয়েছিল, সে চৌকাঠ তাঁরা পেরোতে পেরেছিলেন দক্ষতার সঙ্গেই।
ছবি: শুভেন্দু চৌধুরি
১৯৯৬-এ তাঁদের একসঙ্গে পথচলা শুরু। মাঝে গঙ্গা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। বড় পর্দায় সন্দীপের জটায়ু, বিভু ভট্টাচার্যও চলে গিয়েছেন। ফেলুদার ইতিহাসে ঢুকে পড়েছে আবির চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তবে প্রযোজনা সংক্রান্ত জটিলতার নিরিখে আবার ফেলুদা বাছতে গিয়ে, সন্দীপের নির্বিকল্প পছন্দ সব্যসাচীই। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েওছিলেন, অভিনেতা সব্যসাচীর রেঞ্জ অতুলনীয়। যার উপর ভরসা করতে পারেন তিনি। সুতরাং আবার শুরু পার্টনারশিপ। এবার তাই দর্শকের প্রাপ্তি হতে চলেছে ‘ডবল ফেলুদা’।
মজা এই যে, এই জুটির পথচলা যেন পূর্বনির্ধারিতই ছিল। একজন নিজের বাড়ির চৌহদ্দিতেই দেখেছেন ফেলুদার জন্ম। বাড়ির একজনের মতোই আজীবন ভেবে এসেছেন ‘ফেলু’কে। অন্যজনের অভিনয়ের স্বপ্নে সেই কৈশোর থেকেই দাগ রেখে গিয়েছিলেন ফেলুদা। একজনের কাছে ফেলুদা সহোদর হলে, অন্যজনের কাছে দোসর। ফেলুর জন্যই ক্যামেরার এপারে ওপারে এই দু’জনের একসঙ্গে আসাটা তাই যেন অনেকটা অবধারিতই ছিল। তবে সিনে-পথ তো পরের কথা, তাঁদের জীবনের পথ পরিক্রমাও শুরু একই দিনে। বছর তিনেকের এপার ওপারে যাত্রা শুরু করে, ঋজু পথচলায় আজও বাঙালিকে ঋদ্ধ করে চলেছেন দু’জনেই। ৮ সেপ্টেম্বর মানে ইন্ডাস্ট্রিরও তাই ‘ডবল’ প্রাপ্তি। দুই কাছের মানুষ ‘বাবুদা’ আর ‘বেণুদা’র জন্মদিন। হ্যাঁ, তাঁদের চেনা ডাকনামের শুরুতেও অদ্ভুত মিল। সম্মেলনের এই অভাবনীয় সমাপতনেই আবারও পর্দায় উঠে আসুক ফেলুদা। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে তাঁদের থেকে এ রিটার্ন গিফট-এর প্রত্যাশাতেই বাঙালি দর্শক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.