মন্দির চত্বরে মানতের প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।
অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: নিষ্ঠামাফিক পুজোর পাশাপাশি কবিগান গেয়ে মাকে শোনানোটাও ইসলামপুরের ঋষিপুরের কালীপুজোর নিয়মের মধ্যে পড়ে। পুজোর আরেক নিয়ম, মায়ের কাছে পাঁঠা অথবা পায়রা যা-ই মানত করা হোক, তা বলি দেওয়া চলবে না। এমনকী, মানতে প্রচুর পরিমাণে সোনা-রুপোর অলংকার দেবীকে দেওয়া হয়। তাতে কারও হাত দেওয়ার অধিকার নেই। ওই সব অলঙ্কার সহযোগেই পুজোর পরের দিন রাত ১২টার পরে মন্দির সংলগ্ন বড়বিলার জলে মায়ের বিসর্জন হয়। কিন্তু অবাক কাণ্ড, বিসর্জনের পর বিলের জলে ডুব দিয়ে এযাবৎ এক টুকরো অলঙ্কারও কেউ উদ্ধার করতে পারেনি।
ঋষিপুরের কালীপুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ রাজু সরকার বলেন, খাতা কলমে কোনও প্রমাণ নেই। তবে জনশ্রুতি, তিনশো থেকে ৩৫০ বছরের পুরনো এই পুজো। পরম্পরাগত ভাবে যা শুনে এসেছি তা হল তৎকালীন সময়ে খুবই প্রত্যন্ত এলাকা ছিল ঋষিপুর। বড়বিলার সঙ্গে অন্য অনেক এলাকার যোগাযোগ ছিল এমনকী, বিল ছিল নৌকোপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। আশপাশে হেরামপুর, টেঁকা, দৌলতপুর, পাহাড়পুর, পমাইপুর প্রভৃতি গ্রাম ছিল বর্ধিষ্ণু। সেখানে ছিল জমিদারদের বসবাস। ঋষিপুর বিলের ধারের এক নির্জন এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। এককথায় ডাকাতদের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে সুপরিচিত ছিল এই ঋষিপুর। শীতের শুরুতে কালীপুজো করেই দস্যুরা ডাকাতির কাজ শুরু করত। ক্রমে এই এলাকায় জনবসতি বাড়তে থাকে। কমতে থাকে ডাকতদের উপদ্রব। ওই সময় বিলের জলে জেলেরা মাছ ধরতেন। শোনা যায় রাতে মাছ ধরার সময় বিলের জলে নানান রকম অলৌকিক সব জিনিস দেখতে পেতেন তাঁরা। পরে তাঁরাই ডাকাতদের ছেড়ে যাওয়া মন্দিরে মায়ের পুজো দেওয়ার পর দেখেন বিলের জলের ওই সব অলৌকিক দৃশ্য উধাও।
স্থানীয়দের কথায়, এখন এই পুজো উপলক্ষে বসা একদিনের মেলা মানুষের মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজো, মেলা নিয়ে সমান উৎসাহী। পুজো কমিটির সম্পাদক বঙ্কিম সরকার, সভাপতি নবকুমার মণ্ডলরা জানান, মায়ের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে মানত করে যাঁরা উপকৃত হয়েছেন, তাঁরাই নানাভাবে পুজোর খরচ বহন করেন। কেউ নতুন প্রতিমা নিয়ে আসেন। এবারও মূল প্রতিমার সঙ্গে বাইশটি মানত করা প্রতিমারও পুজো হবে। দীপান্বিতা অমাবস্যার আগে তারই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.