সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবার খোদ ঢাকায় জঙ্গি দমন অভিযানে বড় সাফল্য পেল পুলিশ-র্যাব-ডিবি-সোয়াটের যৌথ বাহিনী। মঙ্গলবার ভোরে এ অভিযানে ৯ জঙ্গি মারা গিয়েছে। জখম হয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। রাজধানীর কল্যাণপুরের ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের সময় গোলাগুলিতে নিহত নয়জনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুরে সোয়াটের নেতৃত্বাধীন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গি ও গুলশানে জঙ্গি হামলায় নিহত ৬ ছয়জন একই গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিঞা। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। জঙ্গি আস্তানায় চালানো অভিযান ‘স্টর্ম-টোয়েন্টি সিক্স’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে অভিযান ও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার।
অন্যদিকে, ঢাকার উপশহর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহতরা সন্ত্রাসী কর্ম-কাণ্ড ঘটাতে তৈরি হয়েছিল মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা নিহত হওয়ায় দেশ ‘ভয়াবহ বিপর্যয় পরিস্থিতি’ থেকে রক্ষা পেয়েছে। মঙ্গলবার নিজের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকাল ৮ টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে আইজিপি বলেন, ওই বাড়ি থেকে বড় হামলার পরিকল্পনার তথ্য পুলিশের কাছে আগে থেকেই ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মহম্মদ আছাদুজ্জামান মিঞাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় প্রচুর বোমা-বারুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিঞা। সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে অভিযান চালানোর সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির পর কল্যাণপুরের ওই বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। এদিন স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫১ মিনিট (ভারতীয় সময় ভোর ৫টা ২১ মিনিট) পুলিশ-র্যাব-ডিবি-সোয়াট নিয়ে গঠিতস্টর্ম-টোয়েন্টি সিক্স অভিযান শুরু করে। এক ঘণ্টায় খতম হয় ৯ জঙ্গি। বিশেষায়িত টিম সোয়াত এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়। এ সময় পুলিশ, র্যাব, ডিবি এবং ফায়ার সার্ভিসের রেসকিউ টিম সঙ্গে ছিল। পুলিশের ওপর হামলার সময় জঙ্গিরা ‘আল্লা হু আকবর’ স্লোগান দেয়। ‘ক্রাইম সিন’ সংগ্রহ করেছে সিআইডি।
ঢাকার মিরপুর-কল্যাণপুরে ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামে পরিচিত ৭ তলা ভবনে জঙ্গি আস্তানা রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মধ্যরাতে পুলিশ অভিযান চালায়। ভবনের তিনতলা পর্যন্ত ওঠার পরে পাঁচতলা থেকে দুই যুবক নেমে এসে গুলি চালায়। এসময় এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে গুলি লাগে। একই সঙ্গে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমানিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে হাসান নামে এক জঙ্গি জখম হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। জখম হাসান পুলিশকে জানায় ওই মেসে ৯ জন রয়েছে।রাত প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলি বিনিময় চলে। ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে পুলিশ, র্যাব, ডিবি যৌথ অভিযান শুরু করলে ফের শুরু হয় গুলি বিনিময়। এক ঘণ্টার অভিযানে ৯ জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
স্থানীয়রা জানান, ভবনটির নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত ফ্যামিলি ভাড়া দেওয়া আছে। পঞ্চম থেকে সপ্তম তলায় চারটি করে ইউনিটে প্রত্যেকটিই মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলা অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার রাত ১২টার পর পুলিশ জাহাজ বিল্ডিং নামের ওই ছয়তলা বাড়িতে যায়। প্রথম দফায় রাত দেড়টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে ‘জঙ্গিদের’ গুলিবিনিময় চলে। খবর পেয়ে সোয়াট, র্যাব ও ডিবি ঘটনাস্থলে যায়। এরপরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে আরেক দফা গুলিবিনিময় চলে। ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে অভিযান শুরু হয়। পুলিশ জানায়, একপর্যায়ে ‘জঙ্গিরা’ দরজা খুলে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গুলিবিনিময়ে নয় জন নিহত হয়। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আরও জানিয়েছেন, “আমাদের এই সন্ত্রাস অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে এবং এটা প্রতিরোধ করতেই হবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। মানুষের জীবন-মান নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাইনা- আমাদের দেশটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভয়ারণ্য হোক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.