বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আনন্দ দেশ-দেশান্তরের সীমানা ছাড়িয়েও। তাই দেবী আরাধনার আয়োজনে মেতেছেন সৌদি আরবের প্রবাসীরাও। আর সেই আনন্দে গা ভাসিয়ে সংবাদ প্রতিদিন. ইনের জন্য কলম ধরলেন রিয়া বসু।
সৌদি আরব। নাম শুনলেই মনশ্চক্ষে ভেসে ওঠে ধু-ধু মরুভূমি, তেলের খনি, মাথায় সাদাকালো শমাগ পরা পুরুষ আর ধর্মীয় গোঁড়ামি। সোজা কথায়, সৌদি আরব আর দুর্গাপুজো- এই দুটো বিষয় একসঙ্গে কোনও অংশে সোনার পাথর বাটির চেয়ে কম পরস্পরবিরোধী নয়। তাই বলে কি এ দেশ বাঙালি বর্জিত? একেবারেই না! জীবিকার খাতিরে অসংখ্য বাঙালি ছড়িয়ে রয়েছে সৌদিজুড়ে। আর তেমনই একটা জায়গা হল আমাদের কউস্ট ক্যাম্পাস। সৌদির অন্যতম শহর জেড্ডা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে এই এলাকা। যেখানে দুর্গাপুজো হয় দুর্গা প্রতিমাকে চোখের দেখা না দেখেই।
কউস্ট আসলে কিং আবদুল্লা ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ২০০৯ সালে কিং আবদুল্লা প্রতিষ্ঠা করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়। আর তারই ক্যাম্পাসের বিশাল এলাকা জুড়ে এখন দম নেয় ছোট্ট একখানা শহর। যেখানে এই মুহূর্তে ছোট-বড় পরিবার মিলিয়ে ৪৭জন বাঙালির বসবাস। সৌদির বাকি এলাকা থেকে তথাকথিত বিধিনিষেধের বেড়া এই শহরে একটু আলগা হলেও মূর্তিপুজো কিন্তু এখানেও নিষিদ্ধ। অনুমতি মেলে না কোনও রকমের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনেরও। তাহলে? পুজোর পাঁচটা দিন এখানকার বাঙালিরা কী করেন? ফেসবুকে বাড়ির বা পাড়ার পুজোর ছবি দেখে মন খারাপ করেন? নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হন? উঁহু! একেবারেই না। রীতিমতো নতুন জামাকাপড় পরে বাঙালিয়ানায় ডুব দেন কউস্টের প্রবাসী বাঙালিরাও।
না-ই বা থাকল টানা চোখের দুর্গাপ্রতিমা, কুমোরটুলির ছোঁয়া, মন্ত্রোচ্চারণ কিংবা ১০৮ প্রদীপ জ্বালা সন্ধিপুজো। লোহিত সাগরের এপার থেকেও দুর্গাপুজো ভরপুর উপভোগ করেন তাঁরা। দেবীপক্ষের কোনও এক সপ্তাহান্তে পাটভাঙা শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে এই বাঙালিরা একত্রিত হন অন্য কোনও এক বাঙালিরই বাড়িতে। সকাল থেকে চলে কোমর বেঁধে কষিয়ে রান্নাবান্না। আর কবজি ডুবিয়ে বাঙালি খাওয়াদাওয়া, সান্ধ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সিঁদুরখেলা এবং অবশ্যই আড্ডা। কউস্টের পুজো এবার ৫ বছরে পা রাখল। ২০১৫ সালে ক্যাম্পাসের বাঙালিরা মিলে যে বেঙ্গলি কমিউনিটি তৈরি করেছিলেন, তার সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে। আগামী ১১ অক্টোবর, ত্রয়োদশীর দিন, কলকাতায় যখন দুর্গাঠাকুর ভাসবে গঙ্গায়, তখন লোহিত সাগরের পাড়ের এই শহরে ৪৭ জন বাঙালি আবাহন করবেন মা দুর্গাকে। তবে মন্ত্র, ধুনো, বরণডালা ছাড়াই।
পুজোর আয়োজন নিয়ে কউস্টের পুরনো বাসিন্দা মৃণালকান্তি হোতা জানালেন, আড্ডার জায়গা, খাবারের মেনু ঠিক হয়ে গিয়েছে একমাস আগেই। মেনুতে দুই স্টার আইটেম অবশ্যই ইলিশ মাছ আর খাসির মাংস। বাংলাদেশি দোকানে তার অর্ডারও চলে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে বাজার হবে আগের দিন। সবাই মিলে হই-হই করে। তাই এখন শুধুই সাগ্রহ অপেক্ষা ‘মা আসার’। মূর্তিরূপে চোখের সামনে না হোক, মনেই সই। কী ভাবছেন! বাঙালিকে দুর্গা পুজো থেকে বের করে নিতে পারেন? কিন্তু, মশাই দুর্গাপুজোকে বাঙালির থেকে বের করতে পারবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.