কৃষ্ণকুমার দাস: গুলশান কাণ্ডের জট খুলতে এবার বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণে কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া জেএমবি জঙ্গি নুরুল হক মণ্ডল ওরফে নাইমকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ সরকার৷ কুখ্যাত জঙ্গি নাইম এখন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-এর হাতে বন্দি৷ নয়াদিল্লি সফররত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সঙ্গে এক বৈঠকে এমনই অনুরোধ করেছেন৷
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ-এর চার্জশিটে নাইমকেই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারকে হটানোর ক্ষেত্রে মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে চিহিত করা হয়েছিল৷ ঢাকার কাছে যাত্রাবাড়ি ও মিরপুরে প্রায় দেড় বছর থেকে জেএমবির বশির ও আনিসকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছিল নাইম৷ বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, দ্রুত নাইমকে ঢাকার হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে রাজনাথ সিং ঢাকাকে সুষ্পষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন৷ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে কমান্ডো প্রশিক্ষণ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে উপকূলবতী সীমান্তরক্ষী এবং সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও নারী পাচার বন্ধে তিনটি মউ স্বাক্ষর করা হবে বলেও দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দুই দেশই একে অপরকে আরও বেশি করে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে৷”
নয়াদিল্লিতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩ সালে হওয়া অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তির সংশোধনীও চূড়ান্ত হয়েছে৷ এই সংশোধনী অবশ্য দুই দেশের সংসদে অনুমোদিত হওয়ার পরই বন্দি প্রত্যর্পণ অত্যন্ত সহজতর এবং দ্রুত করা যাবে৷ কারণ, বহু কুখ্যাত অপরাধী ঘটনার পরই যেমন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসছে, তেমনই আবার পশ্চিমবঙ্গ-অসম-ত্রিপুরা থেকে দুষ্কৃতীরাও চোরাপথে ওপার বাংলায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে৷ গুলশান হামলার পর বাংলাদেশের তরফে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়েছিল, পাঁচ কুখ্যাত জেএমবি জঙ্গি- সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাইফুল্লাহ, লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারি ভারতে আশ্রয় নিয়েছে৷ দিল্লিতে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকে এই পাঁচ জঙ্গির কথাও আসাদুজ্জামান উত্থাপন করেছিলেন বলে খবর৷ তবে এই পাঁচজনই কানাডা, জাপান, মালেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতেই শেষ কয়েকবছর থাকলেও গত মাস কয়েক ধরে ভারতের কোনও অঙ্গরাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী বাসিন্দাদের মধ্যেও আত্মগোপন করে থাকতে পারে৷ ঢাকার গোয়েন্দারা মনে করছেন, খাগড়াগড়কাণ্ডের মূল চক্রী তথা জেএমবি’র সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাস্টারমাইন্ড নাইমকে হাতে পেলে জেরা করে এই পাঁচ জঙ্গির সন্ধান মিলতে পারে৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের সঙ্গে এই সফরে নয়াদিল্লি এসেছেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজি এ কে এম শহিদুল হক-সহ ঢাকার বেশ কয়েক শীর্ষ গোয়েন্দা ও পুলিশকর্তা৷ মোট ১৪ জন প্রতিনিধি এসেছেন নয়াদিল্লিতে৷ দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নেন মাদক নিয়ন্ত্রণ, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও বিএসএফ কর্তারা৷ শহিদুল হকরা তিনদিনের ভারত সফরে এনএসজি, এনআইএ এবং গোয়েন্দা ব্যুরোর কলাকৌশল পর্যবেক্ষণ করেন৷ বিশেষ করে পাঠানকোটে কীভাবে জঙ্গি মোকাবিলা করেছিলেন কমান্ডোরা তার ফুটেজ-সহ নানা অপারেশন দেখেছেন ওপার বাংলার গোয়েন্দারা৷ ভারতীয় কমান্ডোদের কলাকৌশল এবং দক্ষ হাতে জঙ্গিদের মোকাবিলার পদ্ধতি দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল৷ প্রতিনিধি দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, জঙ্গিদমনে বাংলাদেশ সরকার নিজেদের বাছাই সেনা ও পুলিশ অফিসারদের এবার ভারতের কাছ থেকে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নিতে পাঠাবে৷ কারণ, বাংলাদেশ এই প্রথম মৌলবাদী সন্ত্রাস বা জঙ্গিহানার স্বরূপ দেখেছে৷
আগামিদিনে জেএমবি বা অন্য মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদীরা এর চেয়েও ভয়ানক হামলা চালাতে পারে৷ বিশেষ করে ঢাকার কল্যাণপুরে গুলির লড়াইয়ে ৯ জঙ্গি খতম হওয়ার পর এই আশঙ্কা যেমন ওপার বাংলায় বেড়েছে তেমনই ভারত থেকে কমান্ডো প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে শেখ হাসিনা সরকার৷ তাই কমান্ডো প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সন্ত্রাস-প্রতিরোধে এবং গোয়েন্দা-নজরদারিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু আধুনিক সরঞ্জামও ভারতের কাছ থেকে কিনতে চলেছে বাংলাদেশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.