চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মহিষাসুরের মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে গেল যুদ্ধ। দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধ এবার দেখতে পেলেন না কুলটিবাসী। বিষন্ন দুর্গা তাই একাই বসে রইলেন মন্দির প্রাঙ্গনে। অসুররূপী সিংরাই বাবার মৃত্যুতে দুর্গারূপী বিষন্ন দুলারী দেবী একাই বসে রইলেন মন্দির প্রাঙ্গনে। নিয়ামতপুরের সিংরাই বাবার দুর্গাপুজো এবার হল খানিকটা নমো নমো করে। গত আগস্টে মারা যান আদিবাসীদের ধর্মগুরু সিংরাই মারাণ্ডি। পুজোর মুখে সিংরাইয়ের মৃত্যুতে দুর্গা পুজো হবে কিনা সংশয় ছিল। শেষপর্যন্ত পুজো হলেও ছিল জাঁকজমকহীন।
আদিবাসীদের আশ্রম হলেও এখানে দুর্গাপুজো হয় নিয়ম করে। আদিবাসী মন্ত্রেই পুজো করতেন সিংরাই মারাণ্ডি। পুজোর মূল আকর্ষণ ছিল নবমীর দিন দুর্গার সঙ্গে মহিষাসুরের লড়াই। সিংরাই বাবা অসুরের রূপ ধরতেন। দুর্গারূপে থাকতেন তাঁরই স্ত্রী দুলারী দেবী। তাঁদের যখন যুদ্ধ চলত তখন আশ্রমের অন্য ভক্তরাও নিজেদের স্ত্রীর সঙ্গে একইভাবে লড়াই করতেন। স্বামীরা এদিন অশুভ শক্তির ভূমিকা নিতেন, স্ত্রীরা নিতেন শুভ শক্তির রূপ। এরপর অশুভ শক্তির পরাজয় হতো। ঢাক আর মাদলের আওয়াজে দুপক্ষের যুদ্ধ সত্যিকারের মারপিটে রূপ নিত। সিংরাই বাবা দুলারীর কাছে পরাজয় বরণ করার পর যুদ্ধ থেমে যেত। অভিনব এই লড়াই দেখতে আসতেন নিয়ামতপুরের বাসিন্দারা।
দুলারী দেবী বলেন, ‘বাবা নেই তাই এবার যুদ্ধ হল না। ভবিষ্যতে হবে কিনা বলতে পারব না।’ ভক্তরা বলেন, এই দুর্গাপুজোর জন্য কোনও ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতকে ডাকা হয় না। সিংরাই বাবা বেশকিছু মন্ত্রকে আদিবাসী ভাষায় রূপান্তরিত করেছেন। সেই মন্ত্র পড়ে তিনি সপ্তমীর পুজো শুরু করতেন। তারপরেই ভক্তরা পুজোর ডালি নিয়ে আসেন ও নিজেরাই পুজো করেন। আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল মা দুর্গার পরিবার ও অসুরের একচালার প্রতিমার সঙ্গে এখানে দেখা যায় বিষ্ণুর এক অবতারকে। নৃসিংহের মূর্তিটি থাকে কার্তিকের পাশেই। দুর্গাপুজো চালুর আগে এরকমই এক প্রতিমার স্বপ্ন দেখেছিলেন বাবাজি তাই সেভাবেই প্রতিমা তৈরি হয়।
তবে এখানে দশমীর বিষাদ নেই। কারণ মা দুর্গাকে রেখে দেওয়া হয় এক বছর। পঞ্চমীর দিন নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুরানো মূর্তি বিসর্জন করে দেওয়ার রীতি এখানে। এবারেও তাই হয়েছে।
ছবি : মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.