সিদ্ধান্ত একটাই৷ তাতে কারও দিলখুশ৷ কোথাও বা বেজায় অশান্তি৷ একটু বিরোধিতার কুঁইকুই৷ এদিকে বাবু যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুন৷ ফলে কথায় বাড়ে কথা৷ জমে ওঠে বিতর্ক৷ বিতর্কে কতদূর পৌঁছল বছরটা, বেলাশেষে তারই সালতামামিতে সংবাদ প্রতিদিন
নোট বাতিল
দেশে কালো টাকার লেনদেন রোখার কথা দীর্ঘদিনই বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু এমন পদক্ষেপ যে তিনি নিতে পারেন, ঘুণাক্ষরেও তার আভাস মেলেনি৷ ৮ নভেম্বর রাতে আচমকা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’৷ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন নরেন্দ্র মোদি৷ সে নিয়ে তুমুল বিতর্ক৷ রে রে করে উঠেছে বিরোধীরা৷ কখনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত বলে তোপ দেগে দেওয়া হয়েছে৷ কখনওবা বলা হয়েছে তুঘলকি সিদ্ধান্ত৷ সে যাই হোক সাধারণ মানুষ ভোগান্তি সত্ত্বেও মেনে নিয়েছে এই সিদ্ধান্ত৷ তবে তাতে দেশ এগলো না পিছলো, তা নিয়ে ঘোর বিতর্ক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক মহলে৷ বছর শেষ হতে চলল, কিন্তু সে বিতর্কের ট্রাডিশন সমানে চলছে৷
দিল্লিতে জোড়-বিজোড় ফরমুলা
দূষণের সঙ্গে লড়াই করতে কেজরি সরকারের দাওয়াই দিল্লিতে অড-ইভেন পলিসি চালু করা৷ প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে যেগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বরের শেষ জোড় নম্বর, সেগুলো রাস্তায় নামবে একদিন৷ অন্যদিন চলবে বিজোড় রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়িগুলি৷ এতে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমবে৷ ফলে কমবে দূষণও৷ বেজিংয়ের আদলে লাগু হয়েছিল এই নিয়ম৷ কিন্তু এ নিয়ে বেশ মতবিরোধ দেখা যায় দিল্লিবাসীদের মধ্যে৷ পরে এই নিয়ম তুলে নিতে বাধ্য হয় কেজরি সরকার৷
জেএনইউ-কানহাইয়া-দেশদ্রোহিতা
বছরের গোড়াতে হইচই ফেলেছিল জেনএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা৷ যে ঘটনা থেকে উত্থান ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের৷ দেশদ্রোহী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে৷ সে নিয়ে আটকও করা হয় ছাত্রনেতাকে৷ জঙ্গিদের সমর্থন কেন শোনা গেল ছাত্রদের মুখে তা নিয়ে জোর বিতর্ক৷ সময় গড়ালে সে ঘটনার রেশ থিতিয়েছে, তবে দেশে ছাত্রনেতাদের মধ্যে প্রতিবাদী মুখ হয়ে উঠেছেন কানহাইয়া কুমার৷
অসহিষ্ণুতা আঁচে আমির
দেশের পরিস্থিতি এমনটাই যে তাঁর স্ত্রী দেশ ছাড়ার ভাবনাও ভেবে ফেলেছিলেন৷ ঘরে গোমাংস রাখার অপরাধে মহম্মদ এখলাখের মৃত্যুর পর দেশের অস্থির অবস্থার প্রেক্ষিতে এ কথাই বলেছিলেন বলিস্টার আমির খান৷ আর তাই নিয়েই ধুন্ধুমার৷ যে দেশ তাঁকে সুপারস্টার বানিয়েছে সেই দেশ সম্পর্কেই কেন এহেন মন্তব্য, তা নিয়ে ঝড় ওঠে৷ পরে অবশ্য নায়ক জানান, তিনি দেশ সম্পর্কে খারাপ কোনও কথা বলতে চাননি৷তবে এই ঘটনার পরই অতুল্য ভারতের বিজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়েন আমির৷ অহিষ্ণুতার আঁচে পড়েছিলেন অপর সুপারস্টার শাহরুখ খানও৷ অনুমান করা হয়েছিল, অসহিষ্ণুতা বিতর্ক ছাপ ফেলবে তাঁদের ছবির ব্যবসাতেও৷ অবশ্য প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, যে কোনও ঘটনাকে ভুলিয়ে দিতে সময়ের জুড়ি মেলা ভার৷
হৃতিক-কঙ্গনা লাভব্যাটল
বলিপাড়ায় নায়ক-নায়িকারা হামেশাই নানা বিতর্কে জড়িয়ে থাকেন৷ তবে এবছর কঙ্গনা-হৃতিকের বিতর্কে উত্তপ্ত ওঠে সিনেদুনিয়া৷ একে তো সুজানের সঙ্গে বিয়ের বাঁধন ছিড়েছে হৃতিকের৷ তার উপর সম্পর্ক নিয়ে নানারকম অভিযোগ তোলেন নায়িকা কঙ্গনা রানাওয়াত৷ রীতিমতো ফাঁস হয় ইমেল কথোপকথন৷ যথারীতি নায়ক তা অস্বীকার করেন৷ এদিকে তাঁকে বাঁচাতে আসরে নামেন বাবা রাকেশ রোশনও৷ দেখেশুনে নায়িকার শ্লেষ, এই বয়সেও বাবার হাত ধরে বাঁচতে হচ্ছে! সব মিলিয়ে চাপান-উতোরে বেশ কিছুদিন সরগরম ছিল বলিপাড়া৷
ধর্ষণ বিতর্কে সলমন
সুলতান ছবিতে কুস্তিগির হতে হয়েছিল সলমন খানকে৷ আর সে কারণে তাঁকে নাকি এত খাটতে হয়েছিল যে, নিজেকে ধর্ষিতার মতো মনে হয়েছিল তাঁর৷ ক্লান্তি বোঝাতে ধর্ষণ! প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ৷ যে দেশে ধর্ষণ এক সামাজিক ব্যাধি সেখানে জনপ্রিয় নায়কের থেকে এ ধরনের মন্তব্য কতখানি কাম্য, তা নিয়ে বিতর্ক জমেছিল৷ অবশ্য সলমনের মহিলাভক্তরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, সাময়িক বিতর্ক জমলেও, তাঁরা তেমন কিছু মনে করেননি৷ ভাবখানা এই, বড় বড় নায়কের ছোট ছোট কথা আবার ধর্তব্যের মধ্যে নাকি!
নো হেলমেট নো পেট্রল
দুর্ঘটনা কমানোর উপায় কী? নিরন্তর মাথাব্যথা প্রশাসনের৷ অনেক সচেতনতা প্রসার করেও কোনও লাভ হয়নি৷ শেষমেশ নিদান এল হেলমেট ছাড়া পেট্রল মিলবে না৷ এমনই ফরমান দিয়েছিল মহারাষ্ট্র সরকার৷ তা নিয়ে বিতর্ক জমলেও, দুর্ঘটনা রুখতে এ প্রয়াস বেশ প্রশংসা পেয়েছিল৷ অন্যান্য রাজ্যগুলিও পথ নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছিল৷
উড়তা পাঞ্জাব বিতর্ক
পাঞ্জাবের ড্রাগচক্র ছবিতে তুলে ধরতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ৷ সেন্সর বোর্ড ৮৯টি দৃশ্য কাটে তবে ছবি মুক্তির নিদান দেয়৷ ছবির সংলাপে ব্যবহৃত ভাষা নাকি তেমন শিষ্ট ছিল না৷ জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত৷ শেষপর্যন্ত একটি কাটেই মুক্তি পায় ছবিটি৷ সেন্সরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শিল্পের জয় হিসেবেই দেখা হয় এই ঘটনাটিকে৷
ডোপ কেলেঙ্কারিতে নরসিং
এবারের ওলিম্পিকে ভারতের বড় বাজি ছিল নরসিংহ৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিপর্যয়৷ ডোপ টেস্টে ধরা পড়েন ভারতের অন্যতম সেরা কুস্তিগির৷ অভিযোগ উঠেছিল ষড়যন্ত্রের৷ সেখানে নাম জড়িয়েছিল সুশীল কুমারেরও৷ তবে শেষমেশ হার স্বীকার করতে হয় নরসিংহকেই৷ ওয়াডার নিদানে চার বছর নির্বাসিত হন তিনি৷
ঢাকার রাজপথ না রক্তনদী!
ইদের খুশির মাঝেই অন্য এক কারণে খবরে উঠে এসেছিল বাংলাদেশ৷ পড়শি দেশের অলিগলি ভেসে গিয়েছিল রক্তে৷ আসলে জমা জলের সমস্যা তো ছিলই৷ আর তাতে মিশেছিল কুরবানির রক্ত৷ দুয়ে মিলে ভয়াবহ চেহারা নেয় সে দেশের শহরের গলি থেকে রাজপথ৷ আর এ ছবি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হতেই কুরবানি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে৷ তবে পাল্টা মতও ছিল৷ জমা জলই যে সমস্যার মূল তা বোঝানোর চেষ্টা করেন কেউ কেউ৷ সব মিলিয়ে ভাইরাল ছবি ঘিরে বেশ কিছুদিন সরগরম ছিল নেটদুনিয়া৷
নিষিদ্ধ পাক শিল্পী
উরি হামলায় ভারতীয় সেনাকে বিপর্যস্ত করেছিল পাক জঙ্গিরা৷ তারপরই পাক শিল্পীদের কাজে ফতোয়া জারি করে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা৷ সাফ কথা, সন্ত্রাস আর বন্ধুতা একসঙ্গে চলতে পারে না৷ আর তাই ভারতে সমস্ত পাক শিল্পীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়৷ হলমালিকরাও সায় দিয়ে বলেন, কোনও পাক অভিনেতা থাকলে তাঁরা সিনেমা প্রদর্শন করবেন না৷ সিদ্ধান্তে কতটা যৌক্তিকতা ছিল সে প্রশ্ন পরে, তবে জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী হাওয়ায় বেশ কিছুদিন গনগনে ছিল দেশের আকাশ-বাতাস৷
বিপাকে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’
ফতোয়া জারি৷ কিন্তু সিনেমা শেষ৷ ফলে ঘোর বিপাকে পড়েছিলেন করণ জোহর৷ তাঁর ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবির জন্য৷ কেননা সে ছবিতে কাজ করেছিলেন পাক অভিনেতা ফওয়াদ খান৷ প্রথমে শিল্পীর স্বাধীনতা নিয়ে সওয়াল করেছিলেন পরিচালক৷ কিন্তু শেষমেশ হার মেনে নেন৷ এমএনএস-এর কাছে মুচলেকা দিয়ে ও সেনা তহবিলে অর্থ দিয়েই মুক্তি পায় ছবি৷ একদিকে দেশাত্মবোধের কারণে রাজ ঠাকরের পদক্ষেপকে অনেকে স্বাগত জানায়৷ অন্যদিকে একজন শিল্পীকে রাজনৈতিক দলের কাছে মাথা নত করতে হচ্ছে দেখে আক্ষেপ করেন৷ সব মিলিয়ে বছরের শেষভাগটা উত্তপ্ত থাকে এই বিতর্কে৷
পান মশলা চিবিয়ে বিপাকে ব্রসনান
জেমস বন্ড চরিত্রের অভিনেতা৷ সেই পিয়ের্স ব্রসনান কিনা পান বাহারের বিজ্ঞাপন করছেন! কেন এরকম একটি নেশার জিনিসকে প্রমোট করছেন তিনি- এ নিয়েই জমে বিতর্ক৷ তবে শেষমেশ অভিনেতা জানান, পুরো প্রেক্ষাপট না জেনেই বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলেন তিনি৷
এইসব তর্ক-বিতর্কেই জড়িয়েছিল ২০১৬৷ বিতর্ক থেকেই নাকি নতুন পথের দেখা মেলে৷ আশা করা যায়, নতুন বছর সে পছের হদিশ পাবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.