স্টাফ রিপোর্টার: এতদিন শুধু বিদ্বেষ ছড়ানো ও জঙ্গিদের অনুপ্রাণিত করার অভিযোগ ছিল৷ এবার সরাসরি সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের অভিযোগ উঠে গেল বিতর্কিত ইসলাম প্রচারক জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে৷ তা-ও আবার মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রী জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সঈদের সঙ্গে! নানা ধরনের তথ্যপ্রমাণ নিয়ে আপাতত প্রবল চাপে জাকির৷
জাকিরকে চাপে ফেলতে একাধিক ‘প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ ছকে ফেলেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ জানা গিয়েছে, জাকিরের বিরুদ্ধে এফএইআর দায়ের করার পাশাপাশি পিস টিভি-র সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে চলেছে সরকার৷ ব্রিটেন, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় নিষিদ্ধ হলেও জাকিরের আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট চ্যানেল পিস টিভি উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়৷ ওই চ্যানেলেই জাকির ধর্মপ্রচার করেন, নানা বক্তৃতা দেন৷ চ্যানেলটি ভারতে নিষিদ্ধ হলেও কয়েকটি কেবল নেটওয়ার্কে সেটি দেখা যেত৷ লাইসেন্সহীন ওই সমস্ত চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করতে কেবল অপারেটরদের জন্য নির্দেশিকা জারি করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জাকিরের মন্তব্য নিয়ে শুক্রবার বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ বৈঠকে জাকিরের প্রসঙ্গে কথা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ এই অবস্থায় নতুন একটি ভিডিও বার্তায় জাকির দাবি করেন, সংবাদমাধ্যম তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করে অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে৷ বাংলাদেশে জঙ্গি হানার নিন্দা করে জানান, তিনি চিরকাল সন্ত্রাসবাদ ও নিরীহ মানুষকে হত্যার বিরোধী৷
মুম্বইনিবাসী চিকিৎসক জাকির যতই সাফাই দিন না কেন, আপাতত তাঁকে নিয়ে তোলপাড় চলছে৷ তার মধ্যেই জানা গিয়েছে, জামাত-উদ-দাওয়ার ওয়েবসাইটে ধর্মীয় শিক্ষালাভের অন্যতম সূত্র হিসাবে উল্লেখ রয়েছে জাকিরের ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের৷ মুম্বই হামলার প্রধান চক্রী সঈদের সঙ্গে জাকিরের গভীর সম্পর্কের এটাই প্রমাণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বাস্তবে জামাত-উদ-দাওয়ার ওয়েবসাইটে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সংস্থা হিসাবে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের ঠাঁই হয়েছে৷ উল্লেখ্য, ২০০৬-এর মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ফিরোজ ঘাসওয়ালাও তার অনুপ্রেরণা হিসাবে জাকিরের নাম করেছিল৷ ২০০৩-এ শ্রীনগরে জাকিরের বক্তৃতা শুনে সে সন্ত্রাসবাদে উদ্বুদ্ধ হয়৷ তাকে নিয়োগ করেছিল রাহিল শেখ৷ ট্রেন হামলার চক্রান্তকারী রাহিল জীবনের অধিকাংশ সময় জাকিরের ফাউন্ডেশনে কাটিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ওই গোষ্ঠীর সদস্য ইরফান দেশমুখ ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরিয়ান হিসাবে কর্মরত ছিল৷ ঢাকার গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিদের অন্তত দু’জন জাকিরের বক্তৃতা শুনে সন্ত্রাসবাদে উৎসাহিত হয়েছিল বলে অভিযোগ বাংলাদেশ পুলিশের৷
বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারই জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল মহারাষ্ট্র সরকার৷ সেই সূত্রে তাঁর সমস্ত ভিডিও, জনসভায় বক্তৃতা, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পোস্ট পরীক্ষা করছে মুম্বই পুলিশ৷ তাঁর ফাউন্ডেশনের আয়ের উৎসও খতিয়ে দেখা হবে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং শুক্রবার জানান, “আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জাকিরের বক্তৃতা সম্পর্কে তদন্ত শুরু করেছি৷ সিডি পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ বিস্তারিত তদন্ত হবে৷ সরকার কোনও মূল্যেই সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে আপস করবে না৷” কড়া বার্তা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুও৷ তাঁর মত, জাকিরের বক্তৃতাগুলি আপত্তিকর৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এ বিষয়ে পদক্ষেপ করবে বলেও তিনি জানান৷
চাপের মুখে আত্মপক্ষ সমর্থনে চেষ্টার কোনও ত্রূটি রাখেননি জাকির৷ বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি৷ সেখান থেকে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “ভারতের অনেক চ্যানেলেই আমার বক্তৃতার নির্দিষ্ট একটি ক্লিপিং দেখাচ্ছে৷ আসলে যা আমাকে বদনাম করার চেষ্টা৷ আমার বক্তব্যের একটা অংশ সেটা৷” বাংলাদেশি সংবাদপত্রের রিপোর্ট খারিজ করে তিনি জঙ্গি হামলার দায় অন্য ইসলাম প্রচারকদের উপর চাপিয়েছেন৷ জাকিরের দাবি, তাঁর কথায় কেউ ইসলাম সম্পর্কে উৎসাহী হতে পারেন৷ কিন্তু তিনি নির্দোষ মানুষের হত্যা ও সন্ত্রাসবাদের বিরোধী৷ মুসলিম হোক বা অমুসলিম, তিনি কাউকে হত্যায় উৎসাহ দেননি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.