সন্দীপ চক্রবর্তী ও ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কেন্দ্রের উপর ভরসা না রেখে এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের সাতশোটি দল ব্লকে ব্লকে আধার কার্ড তৈরির কাজ করবে৷ স্কুলে স্কুলে শিবির করে এই কাজ করবে রাজ্যের নিযুক্ত দল৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে৷ গত বুধবারই রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সে জেলাশাসকদের এই কাজে সবরকম সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ ছাত্রছাত্রীরা বৃত্তি ও সাধারণ মানুষ একশো দিনের কাজ বা গ্যাসে ভরতুকির মতো ক্ষেত্রে যাতে কোনওভাবে বঞ্চিত না হন, তাই এমন নির্দেশ রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনের৷
রাজ্যের কাছে তথ্য রয়েছে, সামগ্রিকভাবে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত রাজ্যের ৬০ শতাংশের মতো মানুষ আধার কার্ড হাতে পেয়েছেন৷ সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কলকাতায়, আধার কার্ড হাতে পেয়েছেন মাত্র ৫৩ শতাংশ মানুষ৷ ছাত্রছাত্রীরা বিশেষত তফশিলি জাতি ও উপজাতি বা ওবিসি ও সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা বৃত্তির ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ একশো দিনের কাজ, স্কুলের মিড ডে মিল বা এলপিজির নতুন সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ৷ রাজ্যের ৯ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে আড়াই কোটি মানুষ সরাসরি সরকারি জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ কেন্দ্র আধারের কাজ শেষ করতে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে৷
রাজ্যের মূল অভিযোগ, কেন্দ্রের পোর্টাল খারাপ থাকায় ছাত্রছাত্রীরা স্কলারশিপের টাকা পাচ্ছেন না৷ আধার কার্ড ওয়েবসাইট থেকেও তোলা যাচ্ছে না৷ পাশাপাশি জেলাশাসকরা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আধার কার্ড-সংক্রান্ত কর্মীদের ঢিলেমি রয়েছে৷ কোথাও ক্যামেরা খারাপ, কোথাও বা অন্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি খারাপ৷ আধার কার্ড পেতে মানুষকে হয়রান হতে হচ্ছে৷ এই প্রেক্ষিতেই মুখ্যসচিবের নির্দেশ, প্রতিটি স্কুলে প্রয়োজনে শিবির করে আধার কার্ড করতে হবে৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টের সঙ্গে যুক্ত করাতে হবে একই সঙ্গে৷ এজন্য সাতশোটি দল সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে৷ স্বরাষ্ট্র দফতর থেকেও ক্যামেরা ও অন্য আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগস্ট মাসের প্রথম দিকেই আধার কার্ড নিয়ে সমস্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের অবস্থানে অসন্তোষ প্রকাশও করেন৷ পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদদের দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে৷ মমতার নির্দেশেই বারবার লোকসভা ও রাজ্যসভায় আধার কার্ড নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা৷ অন্য দলগুলিকেও পাশে নিয়েছে তৃণমূল৷ মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন কোনও মানুষ যাতে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন৷ সংখ্যালঘুদের বৃত্তি ও সহায়তাপ্রদান অনুষ্ঠানেও কেন্দ্রকে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মঙ্গলবার আধার কার্ড নিয়ে উলুবেড়িয়া পুরসভায় ভাঙচুরের ঘটনার পরও তিনি বলেন, “আধার কার্ড নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে৷ গুরুতর আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে বাইপাস করে কেন্দ্র নিজের মতো করে সময়সীমা ঠিক করেছে৷ এটা একটা ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ সব সম্প্রদায়ের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন৷”
মুখ্যসচিবের ভিডিও কনফারেন্সে সেন্ট্রাল সেনসাস রিজিওনাল অধিকর্তা ও জেলাশাসকরা ছাড়াও ছিলেন স্কুল শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের সচিব৷ কাজের গতির হিসাবে বলা হয়েছে, বর্ধমানে ৫৬ শতাংশ, নদিয়ায় ৫৪, পূর্ব মেদিনীপুরে ৭৩ শতাংশ ও হুগলিতে ৭৩ শতাংশ মানুষ কার্ড পেয়েছেন৷ সব থেকে বেশি সাফল্য দক্ষিণ ২৪ পরগনায়৷ সেখানে আধার কার্ড হাতে পেয়েছেন প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.