সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চামোলিতে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে চিনের লাল ফৌজের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়ার সময় উপস্থিত বলে মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের৷ অবসরপ্রাপ্ত উইং কম্যান্ডার প্রফুল বক্সি বৃহস্পতিবার বলেন, “চিনের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়া উচিত কেন্দ্রের৷” তিনি আরও জানিয়েছেন, ছোট বা সীমিত যুদ্ধের জন্যও ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷
চামোলি জেলার বারাহোতিতে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডের বেশ কিছুটা ভিতরে চলে আসে লাল ফৌজ৷ অতি দুর্গম পার্বত্য এলাকা পেরিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢুকেছিল তারা৷ পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে চামোলির জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল টিম সেখানে পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু লাল ফৌজের কমান্ডিং অফিসার তাদের চলে যেতে বলে৷ পরিষ্কার ইংরেজিতে চিনা সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলাকাটি তাদের৷ তাদের ভাষায় এলাকাটির নাম ‘উ জে’৷ আইটিবিপি’র জওয়ানরা তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা কিছুক্ষণ সেখানে থেকে পুরনো অবস্থানেই ফিরে যায়৷
প্রফুল বক্সি জানিয়েছেন, “এই ঘটনাকে লঘু করে দেখলে চলবে না৷ কেন্দ্রের উচিত চিনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা৷ সীমিত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের৷ আমরা ভয় পেয়ে গেলে বা নীরব থাকলে চিন সুবিধা পেয়ে যাবে৷” তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০-৩০ বছর আগের একটি মানচিত্র মোতাবেক উত্তরাখণ্ডকে নিজেদের জমি বলে দাবি করা শুরু করে চিন৷ চিনা সেনা এর আগেও ওই অঞ্চলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে৷”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন, এলএসি নিয়ে দু’পারেই অস্পষ্টতা আছে৷ দু’দেশের সেনাদের টহলদারি দল ভুল করে প্রায়ই এলএসি অতিক্রম করে থাকে৷ এটা নতুন কিছু নয়৷ আইটিবিপি পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে৷ জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী এই ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী ও আইটিবিপি-র উচিত চিনা সেনার অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়ে যথাযথ তদন্ত করে দেখা৷ চিনা সেনার অনুপ্রবেশের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতও৷
এর আগে গত ১৯ জুলাই লালফৌজের একটি কপ্টার মিনিট পাঁচেকের জন্য ভারতের আকাশসীমা লঙঘন করে উত্তরাখণ্ডের ৫০০ মিটার ভিতরে ঢুকে পড়ে৷ কিছুক্ষণ চক্কর মেরে তা ফিরে যায়৷ এর কয়েক ঘণ্টা পরই বেশ কয়েক জন সশস্ত্র চিনা সেনা সেনা-ট্রাকে চেপে এলএসি পেরিয়ে বেশ কয়েক শো মিটার ভিতরে ঢুকে পড়ে৷ তাদের কাছে সার্চ লাইট, শক্তিশালী দূরবীন, মেশিনগান, রকেট লঞ্চার ও দূরপাল্লার রাইফেল ছিল৷
উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে চিনের ৩৫০ কিলোমিটারের সীমান্ত আছে৷ লাদাখ, অরুণাচলে চিন সীমান্ত যথেষ্ট ভারতীয় সেনা সুরক্ষিত করলেও রীতিমতো দুর্গম উত্তরাখণ্ডে চিন সীমান্ত অনেকটাই অরক্ষিত থেকে গিয়েছে৷ লাল ফৌজ সেই সুযোগটাই নিয়েছে৷ সম্প্রতি চিনের প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করে লাদাখ সীমান্তে নজিরবিহীন সেনা সমাবেশ করেছে ভারত৷ পাকাপাকিভাবে তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু বাঙ্কার, ল্যাম্পপোস্ট ও ভারী পরিকাঠামো৷ ভারত তড়িঘড়ি শতাধিক অত্যাধুনিক অর্জুন ট্যাঙ্ক (টি-৯০ এস ট্যাঙ্ক) মোতায়েন করেছে চিন সীমান্তে৷ এর পরই চিনা বিদেশমন্ত্রক হুঁশিয়ারি দেয়, ভারতের বেপরোয়া সমরসজ্জায় ভারতে চিনা বিনিয়োগ ধাক্কা খাবে৷ ভারতীয় কূটনীতিকদের একটি মহল মনে করছে, লাদাখ, অরুণাচলে সীমান্ত সুরক্ষা মজবুত করায় তুলনামূলক অরক্ষিত উত্তরাখণ্ড সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে নয়াদিল্লিকে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ল লাল ফৌজ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.