স্টাফ রিপোর্টার: রক্তাক্ত মেঝের এক কোণে পড়ে রয়েছে বোনের দেহ৷ অন্য দিকে ভাইয়ের নিথর দেহে জড়ানো বিদ্যুতের তার৷ ঘটনাস্থলে পাওয়া হাতুড়ি থেকে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুষ্কৃতীরা হাতুড়ি দিয়ে প্রথমে আঘাত করে খুন করে৷ পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার জড়িয়ে দেওয়া হয় ইলেকট্রিক শক৷ এমন ঘটনায় তাজ্জব নদিয়া জেলা পুলিশ৷
নদিয়ার ধানতলা থানার দত্তফুলিয়া কালোপুরে থাকতেন নয়নতারা বাড়ুই (৪৮)৷ স্বামীহারা এই বধূ একাই থাকতেন৷ এক বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান৷ দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলেও মারা গিয়েছেন কিছুদিন আগে৷ আর এক ছেলে থাকেন দিল্লিতে৷ ওই এলাকাতেই থাকতেন তাঁর এক সম্পর্কের ভাই সুভাষ বিশ্বাস (৪৫)৷ দিদিকে দেখাশোনা করতেন তিনি৷ ফুলের ব্যবসা করতেন সুভাষবাবু৷ তাঁকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল এনে দিয়ে ব্যবসায় সাহায্য করতেন নয়নতারা৷ দু’জনের সম্পর্ক খুব ভালই ছিল বলে জানিয়েছেন দুই পরিবারের সদস্যরা৷
রবিবার রাতে সুভাষ বাড়িতে বলে যান, কালোপুরে দিদির বাড়িতে যাচ্ছেন৷ রাতে বাড়ি না ফেরায় সোমবার সকালে কালোপুরে স্বামীর খোঁজ করতে যান সুভাষের স্ত্রী লাবণী বিশ্বাস৷ বাড়িতে ঢুকতে গিয়েই সন্দেহ হয় তাঁর৷ দরজা বাইরে থেকে শিকল তোলা৷ শিকল নামিয়ে দরজা খুলতেই চিৎকার করে ওঠেন লাবণীদেবী৷ ছুটে আসেন আশপাশের প্রতিবেশীরাও৷ তাঁরা দেখতে পান, ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে নয়নতারা বাড়ুইয়ের মৃতদেহ৷ গোটা ঘর রক্তাক্ত৷ খানিক দূরেই পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা সুভাষের দেহ৷ ঘরের মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে একটি হাতুড়ি৷ নয়নতারা বাড়ুইয়ের মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে৷
প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করেছিল, এটি আত্মহত্যার ঘটনা৷ অবৈধ সম্পর্কের জেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে নয়নতারা ও সুভাষ৷ কিন্তু পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে, দু’জনের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল৷ কোনও খারাপ কিছু কোনওদিনই লক্ষ্য করা যায়নি৷ সুভাষের স্ত্রী লাবণী বিশ্বাস বলেন, “আমার স্বামীর ফুলের ব্যবসা৷ ও মাঝেমধ্যেই নয়নতারা দিদির বাড়িতে যেত৷ দু’জনের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল৷ ঝগড়া-বিবাদের কোনও ঘটনা কোনওদিন ঘটেনি৷ কী কারণে এইভাবে খুন হতে হল বুঝতে পারছি না৷” নয়নতারার ভাই মোহন মণ্ডল জানান, “এইভাবে খুন হতে হবে কোনওদিনও ভাবিনি৷ ভাই-বোনের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল৷” এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “প্রাথমিকভাবে খুনের ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে৷ পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ একাধিক লোকের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে৷”
পুলিশ জানার চেষ্টা করছে, ব্যবসার সঙ্গে সুদের কারবারের লোকজন ছিল কি না! ওই এলাকার অন্যান্য ফুল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তথ্য জোগাড় করছে পুলিশ৷ ঘটনাস্থল থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মাত্র আট কিলোমিটার দূরে৷ ফলে দুষ্কৃতীরা চোরাপথে পালিয়ে এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তার তদন্তও শুরু করেছে ধানতলা থানার পুলিশ৷ একই পরিবারের মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনায় হতচকিত এলাকার লোকজন৷ এদিন সকালে পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা৷ দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন এলাকার মানুষজন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.