নব্যেন্দু হাজরা: লেজ আছে। কিন্তু তিমি নেই। উৎসবের শহরে আচমকাই এবার হট কেক এহেন শরীরী আলপনা। ট্যাটুপ্রেমী মহানগরবাসীর পুজোর সাজ হঠাৎ করে ‘মৎস্যমুখী’। সৌজন্যে অধুনা শোরগোল ফেলা অনলাইন গেম ‘ব্লু হোয়েল।অবশ্য পুরোপুরি মৎস্যমুখী বলাটা ভুল। কারণ পুরো তিমি নয়, ট্যাটুপ্রেমীদের প্রেম শুধু তিমির লেজের অংশটুকুতেই। কখনও তরুণীর সুগভীর বক্ষ বিভাজিকা দিয়ে উঁকি মারছে ছোট্ট মাছের লেজ। কিংবা যুবকের বাইসেপের নিচে বেরিয়ে আছে লেজের পুচ্ছ। দেখলে ‘ব্লু হোয়েল ফোবিয়া’ ভেবে ভ্রম হওয়াটাই স্বাভাবিক! কিন্তু সে ভ্রম অমূলক। মাত্র দুই স্কোয়ার ইঞ্চি মাপের এ ট্যাটু লেজেই শুরু, লেজেই শেষ। । তা সে অষ্টাদশী তন্বী হোক, বা জিমের ক্র্যাশ কোর্স করা পেশি ফোলানো কিশোর। অবশ্য তারপরও যে আলোচনা থেমে যাচ্ছে, তা ভাবা ভুল। পেন দিয়ে প্রাথমিক ভাবে নকশা। তারপর তিনমুখী ছুঁচ দিয়ে শুরু আউটলাইন তৈরির কাজ। গ্রাহকদের পছন্দমতো রং দিয়ে শেড। তবে এক্ষেত্রে ৯ মুখী বা ২২ মুখী ছুঁচ ব্যবহারে চোখ ধাঁধানো হাতের কাজ। আর তা দিয়েই শরীরে আলপনা।
[পুজোর আগে রোগা হতে চান? এই উপায়গুলি মেনেই দেখুন]
কিন্তু শুধু কি মাছের লেজ? শহরের নামী পার্লারের ট্যাটু শিল্পীরা জানাচ্ছেন, তা ঠিক নয়। তবে গতবছরও যেমন গলায়, ঘাড়ে বা হাতে ট্যাটু আঁকানোর প্রবণতা ছিল, এবার তা একটু বদলেছে। এবছর ঝোঁক বেড়েছে উন্মুক্ত পিঠ বা বাইসেপের নিচে বা মেয়েদের বুকের ওপরে ট্যাটু করার উপর। ধরনটাও আলাদা। মাছের লেজ, বা প্রজাপতির একটা ডানা, পাখির লেজ এই জাতীয় নকশাই চলছে বেশি। পোশাকের বর্ডার লাইন যেখানে শুরু, ট্যাটু শেষ হচ্ছে সেখা্নেই। যেমন বাইরে থেকে কারও বুকের কাছে একটা প্রজাপতির ডানা দেখা যাচ্ছে। বাকি অংশটা ঢাকা। মনে হবে গোটা প্রজাপতিটাই আঁকা আছে। দেখার চেষ্টা করলে কিন্তু পাবেন না। কারন ওই ডানাটুকুই শুধু আছে। বাকি প্রজাপতিটা তো আঁকাই হয়নি। সাধারণ মানুষের মনে আগ্রহ বাড়াতেই নয়া এই ট্যাটুর ফান্ডা। জানাচ্ছেন নিউ মার্কেট এলাকার এক পার্লারের ট্যাটু শিল্পী।
একসময়ে রূপটানে ফেসিয়াল, স্পা, নিদেনপক্ষে নতুন হেয়ার কাটে মজত বাঙালি তরুণী। কিন্তু চলতি ফ্যাশনে ত্বক সাজছে নানা রঙের আলপনায়। শাড়ি থেকে শুরু করে ওয়েস্টার্ন আউটফিট, বঙ্গললনাদের কেনাকাটা চলছে এই ট্যাটুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। বক্ষ বিভাজিকায় আঁকা ট্যাটু প্রদর্শনে কেউ সি থ্রু শাড়ি কিনছেন। ঠিক ঘাড়ের নিচে জড়িয়ে থাকা কাঁকড়াবিছা দেখাতে কারও ওয়ারড্রোবে জায়গা করে নিয়েছে শুধুই হল্টারনেক।
[এক বছর পূর্ণ করল Jio, এই ১০টি তথ্য জানলে চমকে উঠবেন]
হাজার দেড়েক থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে নকশা আঁকার প্যাকেজ। জেন ওয়াইয়ের মধ্যে হঠাৎ এমন হিড়িকে রমরম করছে শহরের ট্যাটু পার্লারগুলো। অনেকে আবার পুজো উপলক্ষে টেমপোরারি ট্যাটুও করাচ্ছেন। তবে চাঁদনি চক চত্বরে ই—মলের এক পার্লারের ট্যাটু শিল্পী কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “টেমপোরারি ট্যাটু খুব একটা কেউ করান না। কারণ যখন তখন তা উঠে যেতে পারে। ট্যাটু করানো একটা প্যাশন। তাই এটা পারমানেন্ট করাতেই বেশি পছন্দ করেন সবাই।” ট্যাটুর ডিজাইন করতে করতেই বললেন, “অনেকে পুজোয় নতুন যে ব্লাউজ বানিয়েছেন, তা পরেই হোয়াটস অ্যাপে ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছেন, কোন ডিজাইন তাঁকে মানাবে তা জানতে চেয়ে। আমরা সেই রকমই মানানসই ডিজাইন পাঠিয়ে দিচ্ছি।”শরীরে অন্তুত আটটি নানা নকশার ট্যাটু আঁকিয়েছেন লেক গার্ডেন্সের সোহিনী। কিন্তু তাতেও থামতে নারাজ তিনি। জানালেন, পুজোর আগে আবারও ট্যাটু আঁকাবেন। তবে এবার মাছের লেজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.