ছবিতে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির ঠাকুর দালান, সেখানে প্রতিমার শেষমুহূর্তের কাজ চলছে।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল বাগনানের চন্দ্রভাগ গ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।
সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ঝাঁটার কাঠির ব্যবসা করতেন ছকুরাম চট্টোপাধ্যায়। একদিন তাঁর স্বপ্নে এলেন মহাকালী। কথিত আছে দেবী স্বপ্নাদেশে ছকুরামকে মাটির তলায় পুঁতে রাখা গুপ্তধনের সন্ধান দেন। দেবীর নির্দেশমতো মাটি খুঁড়ে সিন্দুক ভরতি মোহর আবিষ্কার করেন ছকুরাম। পরে ডাকাতরা ডাকাতি করতে এসেও মোহর হাতাতে না পেরে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে এই গুপ্তধন পেয়েই ছকুরামের ভাগ্য রাতারাতি বদলে যায়। তিনি মা দুর্গার আরাধনার সিদ্ধান্ত নেন। বাগনান থানার চন্দ্রভাগ গ্রামে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে সেই থেকেই দুর্গা আরাধনার শুরু।
বাগনানের বাসিন্দা হলেও ছকুরামের আদি বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুরে। ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি চন্দ্রভাগ গ্রামে এসে পড়েন। সেখানেই শ্মশানের পাশে পর্ণকুটির তৈরি করে থাকতে শুরু করেন। একইসঙ্গে ঝাঁটার কাঠির ব্যবসাও। তখন গ্রামের দুপাশে বইছে দামোদর ও রূপনারায়ণ নদ। তবে সেসব দিন আজ আর নেই। গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকা ছেড়ে দুই নদ পূর্ব পশ্চিমে অনেকটাই সরে গিয়েছে। ছকুরাম বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা বান্ডিল বান্ডিল ঝাঁটা কাটি নৌকোয় করে শহর হয়ে বিদেশে রপ্তানি করতেন। এরপর দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল। পার্শ্ববর্তী বাঁটুল গ্রামের ঘোষাল জমিদারের মেয়েকে বিয়ে করলেন। জমিদারিও পেলেন। এদিকে কুলীন ব্রাহ্মণ হয়ে ঘোষাল বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করায় বেজায় চটলেন ছকুরামের বাবা হরনাথ চট্টোপাধ্যায়। ছেলেকে ত্যাজ্য করলেন তিনি। যদিও বাবা-মায়ের প্রতি ছেলের ভক্তি কোনও অংশেই কম ছিল না। তাই তিনি চন্দ্রভাগ গ্রামে পিতা হরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মাতা ভুবনেশ্বরীদেবীর দুটি মন্দির স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই এলাকায় ১৪টি শিবের মন্দির, একটি নাটমঞ্চ ও একটি আটচালা নির্মাণ করেন। এবং বেনারস থেকে ১৪টি শিবলিঙ্গ এনে মন্দিরে স্থাপন করেন। সেই সময় ছকুরাম প্রথমে গ্রামে কালীপুজো শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর পরে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। ছকুরামের নির্দেশ মত আজও ১৪টি শিব মন্দিরের মধ্যে মাত্র একটিতেই মহিলারা প্রবেশাধিকার পান। বাকি ১৩টি মন্দিরে পুরুষরাই সেবাইতের কাজ করে থাকেন।
বর্তমান প্রজন্মের প্রবীর চট্টোপাধ্যায় ও প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়রা জানালেন, এখানে শাক্ত মতে দুর্গাপুজোর প্রচলন আছে। মহালয়ার পরদিন প্রতিপদ থেকেই পুজো শুরু হয়ে যায়। সপ্তমীর দিন বাঁটুলের ঘোষাল বাড়ি থেকে শালগ্রাম শিলা “দামোদর”কে চন্দ্রভাগের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে আনা হয়। সেখানেই দশমী পর্যন্ত পুজিত হওয়ার পর দামোদরকে ফের ঘোষাল বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসার রীতি রয়েছে। রীতি অনুযায়ী চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোর কোনও উপাচারেই অব্রাহ্মণদের অংশগ্রহণের অধিকার নেই। যদিও পুজো দেখতে আসা বা ভোগ গ্রহণে কোনও নিষেধ নেই। নবমীর দিন মহাভোজে এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এলাকার অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। এবছরও পুজো উপলক্ষে দূর-দূরান্তে থাকা বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা চন্দ্রভাগ গ্রামে আসতে শুরু করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.