Advertisement
Advertisement

Breaking News

অনিন্দ্যর ২ শাগরেদ ধৃত, প্রকাশ্যে আরও কীর্তি

ভয় কাটিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷

Back-to-back arrests of two aides of Salt Lake councillor Anindya Chatterjee
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 15, 2016 10:09 am
  • Updated:August 6, 2021 5:45 pm  

স্টাফ রিপোর্টার: তোলাবাজির অভিযোগে ধৃত বিধাননগর পুরনিগমের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করল পুলিশ৷ অনিন্দ্যর তোলাবাজির বিশাল সাম্রাজ্য সামলানোর দায়িত্ব মূলত এই দুজনকেই দিয়ে রেখেছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷ এদের নাম মহম্মদ নাসিম ও সিন্ধু কুণ্ডু৷ বৃহস্পতিবার সল্টলেক থেকে এদের গ্রেফতার করে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ৷ এই দুজনের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, সাধারণ মানুষকে মারধর করা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ আছে৷ এদিন সল্টলেকের বিডি ব্লক থেকে নাসিমকে আটক করেন সাদা পোষাকের পুলিশ আধিকারিকরা৷ সিন্ধুকে টোপ দিয়ে ডেকে আনা হয় চার নম্বর গেটের কাছে৷ তারপর তাকে গ্রেফতার করা হয়৷

(কাউন্সিলর অনিন্দ্যর জীবনযাপনে নজর গোয়েন্দাদের)

Advertisement

ধৃত নাসিম ও সিন্ধু দুজনেই সল্টলেকের দত্তাবাদ সংলগ্ন এলাকার কুখ্যাত তোলাবাজ হিসেবে পরিচিত৷ একসময় সিপিএমের ছত্রছায়ায় থাকা সিন্ধু এলাকার সিন্ডিকেট ব্যবসায় নামে বছর কুড়ি আগেই৷ সল্টলেকের সিটি সেন্টার এবং উল্টোডাঙা ব্রিজ নির্মাণে ইমারতি দ্রব্য সাপ্লাইয়ের যে সিন্ডিকেট খোলা হয়েছিল তাতে নাম লিখিয়েছিল সে৷ সেখান থেকে আস্তে আস্তে সিন্ডিকেট মাফিয়া হিসাবে পরিচিতি পায় এই মাসলম্যান৷ অভিযোগ, ভোটে জিততে এই মাফিয়ার সাহায্য নিয়েছিল কাউন্সিলর অনিন্দ্য৷ জিতে আসার পর তোলাবাজির সাম্রাজ্য বিস্তারে সিন্ধু কুণ্ডুই তুরুপের তাস হয়ে ওঠে কাউন্সিলরের৷ পাঁচিল ভাঙা বা দলবল নিয়ে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার কাজটা সিন্ধুই করত প্রধানত৷ আর ধমক দেওয়ার পর টাকা নিতে যেত মহঃ নাসিম৷ নাসিম বাগুইআটি থানার দশদ্রোণ এলাকার গোরা তরফদার এলাকার বাসিন্দা৷ সল্টলেকে একটি দোকান চালায় সে৷ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে টাকা তোলার জন্য নিয়মিত তাগাদা দেওয়া এবং নিজে হাতে করে টাকা নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার৷ মোটা টাকার লেনদেন তার মাধ্যমেই সারত অনিন্দ্য৷ তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকা সত্বেও কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে কেউ অভিযোগ জানাতে সাহস করেননি এতদিন৷ অনিন্দ্য গ্রেফতার হতেই একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকে৷

অন্যদিকে সিন্ধু কুণ্ডুর বিরুদ্ধে এর আগে বহু অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে৷ মাস তিনেক আগে সল্টলেকের করুণাময়ী অঞ্চলের কাছে এক সুলভ শৌচালয় তৈরির সময় মোটা টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সিন্ধুকে গ্রেফতার করে বিধাননগর পুলিশ৷ তারপর অবশ্য ছাড়া পেয়ে যায় সে৷ তোলাবাজির জন্য যে গ্যাং তৈরি করেছিল অনিন্দ্য তা সামলানোর ভার সিন্ধুকেই দেওয়া ছিল বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে৷  নাসিম বা সিন্ধু শুধু নয় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের তোলাবাজি-সাম্রাজ্যের বহু রথী মহারথীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে পুলিশ৷ তবে কমিশনারেটের উচ্চপদস্হ এক কর্তার আশঙ্কা, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর তার শাগরেদদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছে৷

(অনিন্দ্যর সঙ্গীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা)

এত তোলাবাজি, এত টাকার প্রয়োজন পড়ত কেন? আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন জীবনযাপন৷ ব্র্যান্ডেড জামাকাপড় থেকে দামি গাড়ি৷ রোজ রাতে কলকাতার বড় পানশালায় মদ্যপান৷ সেখানে টাকা ওড়ানো৷ ছোট ব্যবসা ও কাউন্সিলরের ভাতা নিয়ে এই সংগতিহীন জীবনযাপন বজায় রাখতেই এলাকার ফুচকাওয়ালা থেকে রিকশাওয়ালা, সবার কাছ থেকেই তোলা আদায় করত সল্টলেকের ধৃত কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়৷ স্থানীয় ও অনিন্দ্যর ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা যায়, আগে সে একটি সুইফট গাড়ি চড়ত, যদিও হঠাত্‍ সেই গাড়ি বদলে প্রায় দ্বিগুণ দামের ইনোভা গাড়ি ব্যবহার করা শুরু করে সে৷ শহরের নামীদামি রেস্তোরাঁয় খাওয়া ও সন্ধে হতেই বড় পানশালায় মনোরঞ্জন৷ এই ছিল অনিন্দ্যর রোজনামচা৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, তার জন্য আতঙ্কে থাকতেন এলাকার মহিলারাও৷ নাম প্রকাশ না করতে চেয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মাস তিনেক আগে সল্টলেকের ঝুপড়িবাজার এলাকায় নিজের গাড়ি নিয়ে রাস্তার উপর প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল অনিন্দ্য৷ সেই সময় এলাকার কয়েকজন মহিলা সেখানে বাজার করতে আসেন৷ তাঁদের দেখে অশালীন মন্তব্য করে অনিন্দ্য৷ শুধু অশালীন মন্তব্যই নয়, এই মহিলাদের কুপ্রস্তাবও দেয় সে৷ এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে মারমুখী হয়ে ওঠে অনিন্দ্য৷ মহিলাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, “জানিস আমি কে?” যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা এসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন৷ জোরজুলুম, মারধর, মহিলাদের কটূক্তি, রাস্তায় বসে মদ্যপান এত কিছু পরও শাসক দলের কর্মী হওয়ার কারণে মুখ বুজে সহ্য করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ তবে অনিন্দ্যর হাজতবাসের পর সব ক’টি অভিযোগ সামনে আসছে৷ ভয় কাটিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement