সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বঘোষিত গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণ অব্যাহত৷
শনিবারই প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলে গোরক্ষকদের তুলোধোনা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি৷ রবিবার তেলেঙ্গানায় একটি তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ফের এ ব্যাপারে তিনি মুখ খোলেন৷ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “গোরক্ষার নামে দেশে, সমাজে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে৷ এই সব ভুয়া গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে৷ তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷” দলিত নিগ্রহ নিয়ে তাঁর আরও দাবি, “কোনও দলিতকে আক্রমণ করবেন না, আমাকে করুন৷ কোনও দলিতকে গুলি করবেন না, আমাকে গুলি করুন৷” যদিও তাঁর মন্তব্যের সামালোচনা করেছেন বিরোধীরা৷ তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী লম্বা-চওড়া ভাষণ দিলেও তাঁর আদর্শগত সহকর্মীরা গোরক্ষার নামে দেশে সন্ত্রাস চালাচ্ছে৷ উত্তরপ্রদেশের দাদরি কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী চুপ কেন, তা নিয়েও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন৷ তাঁদের তির স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি ও সংঘ পরিবারের দিকে৷
রবিবার তেলেঙ্গানার অনুষ্ঠানে গবাদি পশুকে দেশের সম্পদ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর দাবি, “অল্প কয়েকজন মানুষ গোরক্ষার নামে অস্থিরতা তৈরি করছে৷ দেশের মানুষের কাছে আমার আবেদন, এদের বিষয়ে সতর্ক থাকুন৷ ক্ষুদ্র স্বার্থে যারা আমাদের ভাল কাজগুলিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, তাদের সফল হতে দেবেন না৷” সামাজিক বিভেদ তৈরির নামে এই ধরনের কাজ যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে বলেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের দেশের একতা ও বৈচিত্র রক্ষা করা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব৷ গরুকে রক্ষা করা, তাদের সেবা করা আমাদের কর্তব্য৷ কিন্তু ভুয়া গোরক্ষকরা দেশ ও সমাজকে নষ্ট করছে৷” শনিবার প্রথম ‘টাউন হল’ বৈঠকেও গোরক্ষকরা আসলে ব্যবসা করছে, তাদের অপরাধী বলে তোপ দেগেছিলেন মোদি৷ এদিন প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে কেন্দ্র-রাজ্যকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে৷ তাঁর মত, মানুষের জন্য কাজ করার সদিচ্ছা থাকলে সমস্ত সমস্যার সমাধানই সম্ভব৷ জল সংরক্ষণের গুরুত্বের কথা বলেন মোদি৷ তিনি বলেন, একমাত্র সংকটের সময় আমরা জলের গুরুত্ব বুঝি৷ রাজ্যের প্রথম নিরাপদ পানীয় জল প্রকল্প ‘মিশন ভগীরথ’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী৷
Honoured to launch Mission Bhagiratha Phase-I Project in Gajwel. This will greatly benefit Telangana. pic.twitter.com/fO2CtUhZqO
— Narendra Modi (@narendramodi) August 7, 2016
অবশ্য তাঁর কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধীরা৷ কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, “গত বছর দাদরি হত্যা মামলায় মোদিজি চুপ ছিলেন কেন? বেছে বেছে কয়েকটি ঘটনা নিয়ে তিনি মুখ খুলছেন৷ কেন তিনি আরএসএস-কে চাপ দিচ্ছেন না বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ভেঙে দেওয়ার জন্য? কেন বজরং দলের কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? ওঁর সমভাবাদর্শে বিশ্বাসী মানুষরাই তো গোরক্ষার নামে আতঙ্ক তৈরি করছে৷” একই সুরে জনতা দলের (ইউনাইটেড) পবন ভার্মা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আগে মুখ খুললে গো-রক্ষার নামে এই দাপাদাপি এতটা বাড়ত না৷ কিন্তু তিনি মুখ বন্ধ রেখে অন্য বিষয়ে টুইট করা পছন্দ করতেন৷ এত দেরি কেন করলেন?” গুজরাতে দলিত নিগ্রহ নিয়ে মুখ না খোলায় মোদির সমালোচনা করেন সিপিআইয়ের ডি রাজা৷ যদিও বিজেপির দাবি, বিরোধিতার নামে দেউলিয়া রাজনীতি করা হচ্ছে৷ দলের জাতীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেন, “অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন৷ ওঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের কিছুই বলার নেই৷ তাই ব্যর্থতা ঢাকতে এভাবে ওঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.