চানাচুর কালীর প্রতিমা গড়ছেন রাধাবিনোদ, ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: খেলার ছলেই তৈরি হয়েছিল কালীর মূর্তি। রীতি রেওয়াজ জানতেন না সাধক রাধাবিনোদ। মা কালীর মূর্তি গড়ে তাই চানাচুর দিয়েই প্রথমবার দেবীর পুজো করেছিলেন তিনি। গত ৫৭ বছর ধরে কুলটির কামালপুর মৌজায় মিঠানি গ্রামে পুজিতা হয়ে আসছেন ‘চানাচুর কালী’। তবে দীপান্বিতা অমাবস্যা নয়, প্রতিপদেই পুজো পান তিনি।
কুলটির কামালপুর মৌজার সাধক রাধাবিনোদ মুখোপাধ্যায়ের ডানহাত পোলিও আক্রান্ত। বাঁ হাতেই তিনি সব কাজ করেন। তবে ছেলেবেলা থেকে কঠিন জেদ নিয়ে মা কালীর পুজো করে আসছেন। আজও একহাতে কালীর বিরাটাকার মূর্তি গড়েন। কিন্তু নাম ‘চানাচুর কালী’ কেন? ষাটোর্ধ্ব রাধাবিনোদ মুখোপাধ্যায় জানান, মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি কালী গড়তেন খেলার ছলে। পুজোর আগে কালী প্রতিমা গড়ার কাজ সম্পূর্ণ হত। কিন্তু তারপর কী করতে হবে, তিনি জানতেন না। তাই পুজোর রাতে তিনি কৌটো থেকে চানাচুর দিয়ে মায়ের আরাধনা করতেন। আর কান্নাকাটি করে বলতেন, “এই আমার সামর্থ্য, মা তুমি গ্রহণ করো।” পরবর্তীকালে যখন তাঁর জ্ঞান হয় তখন তিনি পুরোহিত ধরে পুজো করাতেন। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতা থাকায় সেই পুজোর খরচ চালাতে তিনি ভিক্ষাবৃত্তিও করেছেন বলে দাবি। রাধাবিনোদবাবু জানান, তখন থেকেই ‘চানাচুর কালী’ নামকরণ হয়ে যায়।
পরবর্তীকালে রাধাবিনোদবাবু চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিনের কারখানায় চাকরি পান। অবস্থার উন্নতি হয়। কিন্তু পরম্পরা রেখে তিনি আজও ভিক্ষাবৃত্তি করেন। বাজার থেকে কালীপ্রতিমা না এনে নিজেই ঠাকুর গড়েন। ‘চানাচুর কালী’র অপর নাম ‘ছোট মা’।সাধক বিনোদবাবুর দাবি, তিনি যখন ছোট ছিলেন মিঠানি গ্রামে তখন থেকেই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের শ্যামাকালীর পুজো হয়ে আসছে। যা ‘বড় মা’ নামে খ্যাত। তিনি স্বপ্নাদেশ পান, বড় মায়ের পুজোর পর তাঁর তৈরি কালীর পুজো হবে। তাই তাঁর আরাধ্য কালীর নাম ‘ছোট মা’। অমাবস্যায় বড় মায়ের পুজোর পর প্রতিপদে পুজো হয় রাধাবিনোদের ‘ছোট মায়ের’। এটাই পরম্পরা। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। পরম্পরা মেনে আটকলাইয়ের পরিবর্তে মায়ের ভোগে আজও নিবেদন চানাচুর করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.