Advertisement
Advertisement

বাস-ট্যাক্সি ধর্মঘটের ‘হুমকি’ বরদাস্ত করবে না রাজ্য

সরকারি পরিবহণ পরিকাঠামোর নেটওয়ার্ক গত পাঁচ বছরে এতটাই সুসংবদ্ধ হয়েছে যে উত্তরবঙ্গে বেসরকারি পরিবহনে ধর্মঘটে ডাকলে কোনও প্রভাব পড়বে না৷

Any enforced strike wont be allowed by Goventment
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 2, 2016 1:03 pm
  • Updated:July 2, 2016 1:03 pm  

বিশেষ সংবাদদাতা: হুমকি দিয়ে, মানুষকে বিপাকে ফেলে বাস বা ট্যাক্সির মতো জনপরিবহণের ক্ষেত্রে কোনও ধর্মঘট রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী৷ একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সরকারি পরিবহণ পরিকাঠামোর নেটওয়ার্ক গত পাঁচ বছরে এতটাই সুসংবদ্ধ হয়েছে যে উত্তরবঙ্গে বেসরকারি পরিবহনে ধর্মঘটে ডাকলে কোনও প্রভাব পড়বে না৷ মাস কয়েক বাদে দক্ষিণবঙ্গে একইভাবে সরকারি সড়ক এবং জলপথ পরিবহণ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেলে ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে আর কোনও লাভ হবে না৷ পুজোর আগে রাজ্যে আরও ২৫৫ টি নতুন বাস নামছে৷ এর মধ্যে ৪০ টি বাস শীতাতপনিয়ন্ত্রিত৷ এগুলি দক্ষিণবঙ্গে চলবে৷ ওলা ও উবের-এর পাশাপাশি হলুদ ট্যাক্সির জন্যও অ্যাপ চালু হচ্ছে৷ এজন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় অনুমতি দিয়েছে বলে জানান শুভেন্দু৷
পরিবহণমন্ত্রী হিসাবে শুক্রবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করে প্রথম ভাষণেই বিরোধীদের একের পর এক তোপ দাগার পাশাপাশি পরিষেবা বৃদ্ধির নানা ঘোষণা দিয়ে মাত করে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী৷ ২০০৬ সালে প্রথম দফায় বিধায়ক হয়ে আসার পর টানা তিন বছর বিধানসভায় বসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের ‘২৩৫-৩০-র দাম্ভিক আচরণ দেখেছিলেন সেই স্মৃতিচারণা করেন৷ উদাত্ত কণ্ঠে বাম বেঞ্চের দিকে আঙুল তুলে ‘হার্মাদদের পার্টি’র অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি শহিদ তীর্থ নন্দীগ্রাম থেকে এবার প্রতিনিধি হয়ে এসেছি৷’ এরপর পরিবহণ বাজেটে বাম জমানায় কথায় কথায় বাস ও ট্যাক্সি ধর্মঘটের প্রতি কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন,“জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সময়ে রাজ্য থেকে বন্ধ ও ধর্মঘট সংস্কৃতি পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে৷ তাই হুমকি দিয়ে বাস-ট্যাক্সির মতো কোনও জনপরিবহণে ধর্মঘট করা যাবে না৷ কোনও অবস্থাতেই রাজ্য সরকার তা বরদাস্ত করবে না৷ জনস্বার্থে সবার আগে৷ দাবি-দাওয়া বা সমস্যা থাকতেই পারে৷ সে সমস্ত কিছু নিয়ে আলোচনায় আসতে হবে৷ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব৷” বাজেট বিতর্কে বিরোধী দলের বক্তাদের তথ্য ত্রুটিপূর্ণ এবং অসম্পূর্ণ বলে পাল্টা পরিসংখ্যান দিয়ে মা-মাটি-মানুষ সরকারের পাঁচ বছরের সাফল্য তিনি তুলে ধরেছেন৷ আগামীর পরিকল্পনা হিসাবে শুভেন্দু বলেছেন, “আগামী বছরে পরিবহন দফতরে রাজস্ব ১৭১৫.৬ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২০৬০ কোটি টাকা করার লক্ষমাত্রা ধার্য করা হয়েছে৷ বাংলার সমস্ত জাতীয় ও স্টেট হাইওয়েতে পরিবহন দফতর বিশেষ চেকিং চালাবে৷ রাজ্য সড়কে নতুন চেক পোস্ট তৈরি হবে৷ সেখানে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, বিমা ও দূষণ-সহ সমস্ত নথি পরীক্ষা করা হবে৷ পরীক্ষা শুরু হতেই যাঁদের নথি নেই তাঁরা সরকারকে প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দেবেন৷ আপনা আপনি রাজস্ব বাড়বেই৷ সর্বত্র ভিজিল্যান্স শুরু হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ২২ জন ঠিকাদার ও দালাল গ্রেফতার হয়েছে৷” বাম জমানায় দলবাজি করতে গিয়ে পরিবহন দফতর যে লোকসানে চলত তা উল্লেখ করে পরিবহনমন্ত্রী বলেন,“ পাঁচটি পরিবহন নিগমই ভরতুকিতে চলত৷ একটি বাস পিছু ১১ জন ক্যাডার নিয়োগ হয়েছিল৷ এখন বাস পিছু পাঁচজন সরকারি কর্মী আছে৷ সমস্ত বাসডিপো আধুনিক ও উন্নতমানের করা হচ্ছে৷ উল্টোডাঙায় এনবিএসটিসির বাসডিপোতে যাত্রীদের জন্য নৈশবিশ্রামাগার তৈরি হবে৷ এনবিএসটিসি ও এসবিএসটিসি নিগম দু’টি এই সরকারের সময়েই লাভের মুখ দেখেছে৷”
সড়ক পরিবহনের পাশাপাশি জলপথ পরিবহনের ক্ষেত্রেও যাত্রী সুরক্ষাকে যে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বাজেট বক্তৃতায় তারও উল্লেখ করেন শুভেন্দু৷ বলেন,“কোলাঘাট, কাকদ্বীপ বা শান্তিপুরের ঘটনার মতো মর্মান্তিক স্মৃতি যাতে আর না ফিরে আসে তার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ মুখ্যসচিবকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গড়া হয়েছে৷ প্রথম ধাপে ৫০টি বড় জেটি চিহ্নিত হয়েছে৷ সেগুলি আধুনিকীকরণ, সংস্কারের পাশাপাশি জেলাপরিষদ ও পুরসভার সঙ্গে কথা বলে যাত্রী ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷” রায়চক ও কুকরাহাটি এবং কালনা ও নৃসিংহপুরের মধ্যে রোরো জলযান এবং এলসিটি জেটির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যাদবপুর ৮-বি, গড়িয়াহাট বাসস্ট্যান্ড এবং বারুইপুর ও কাকদ্বীপে বাসটার্মিনাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে বিধানসভায় শুভেন্দু জানান৷
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প গতিধারার মাধ্যমে ভোটের আগে ৫২ কেোটি টাকা ভরতুকি দিয়ে সরকারের তরফে ৫২৪০ জন বেকারকে গাড়ি দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিবহণ মন্ত্রী৷ এবছর গতিধারায় আরও ৬০৮ জন বেকারকে গাড়ি দেওয়া হয়েছে৷ দায়িত্ব নিয়েই তিনি যে অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে ২৫৫ টি নতুন বাসের জন্য অর্থ বরাদ্দ করিয়েছেন তা উল্লেখ করেন শুভেন্দু৷ বলেন, পুজোর আগেই বাসগুলি চলবে৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ওই সমস্ত বাসে ক্যামেরা ও অন্যান্য পরিকাঠামো থাকবে৷ এর মধ্যে ৪০টি এসি মিনিবাস কলকাতা, হাওড়া ও বারাকপুরের মধ্যে চলবে৷ জেলায় জেলায় হেলিকপ্টার পরিষেবা আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে জানিয়েছে শুভেন্দু বলেন, ১৭টি হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছে৷ আরও সাতটি হচ্ছে৷ অণ্ডালের বিমান পরিষেবা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ আসানাসোলের বাসটার্মিনাস নিয়ে বৈঠক করে এদিন জটিলতা দূর করে নতুন বাস ডিপো তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷ নতুন করে ই-রিকশা নিলে রাজ্য সরকার যে লাইসেন্স দেবে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিবহনমন্ত্রী৷

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement