Advertisement
Advertisement

আবেশের মৃত্যুতে গাফিলতি কার, খুঁজছে পুলিশ

অমিত চৌধুরি কি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতেন না আবেশকে?

Amidst demands for
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 1, 2016 9:19 am
  • Updated:August 1, 2016 9:40 am  

অর্ণব আইচ: বালিগঞ্জের সানি পার্কে স্কুলছাত্র আবেশ দাশগুপ্তকে খুন করা হয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়৷ কিন্তু তদন্তের পর একটি বিষয়ে পুলিশ অনেকটাই স্পষ্ট যে, আবেশ দাশগুপ্তর মৃত্যুর জন্য দায়ী ‘গাফিলতি’ও৷ আঘাত যে ভাবেই লাগুক, জরুরি ছিল দ্রুত চিকিৎসা। সেটা না পাওয়াটাও আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে লালবাজার।

কোনও বিশেষ একজনের উপর নয়, আবেশের কয়েকজন বন্ধু থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজনের গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছিল আবেশের৷ লালবাজারের একটি সূত্র জানিয়েছে, গাফিলতি হয়ে থাকলে কী কী কারণে হয়েছে ও গাফিলতির জন্য মূলত কারা দায়ী, তার একটি তালিকাও তৈরি করছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’৷ সেই সূত্র ধরে এবার শুরু হয়েছে তদন্ত৷ গাফিলতির কারণে ‘খুন’ বা মৃত্যু, এই অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ‘সিট’ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে৷

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, রক্তাক্ত অবস্থায় আবেশকে কি আরও তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে বাঁচানো যেত না? বার বার অ্যাম্বুল্যান্স ডাকার চেষ্টা না করে আরও আগে কোনও গাড়িতে করেই কি আবেশকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারত না তারই কোনও বন্ধু? যখন আবেশের বন্ধুরা তাকে তুলে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল, তখন কেন এগিয়ে আসেননি সানি পার্কের বহুতল আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী ও ড্রাইভাররা? আবাসনের বাসিন্দারা কি কিছুই দেখতে পাননি, নাকি জেনেও এড়িয়ে গিয়েছেন? লেখক অমিত চৌধুরি কি আরও তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতেন না তাঁর মেয়ের বার্থ ডে পার্টিতে আসা ওই কিশোরকে? সিসিটিভির ফুটেজে এমন কয়েকজনকে দেখা গিয়েছে, যাঁদের সামনেই আবেশের জন্য দৌড়াদৌড়ি করছিল ওই কিশোররা৷ সেদিন তাঁদের ভূমিকা কী ছিল?

এই গাফিলতির কারণ খুঁজতে রবিবারও আবেশ দাশগুপ্তর দশজন বন্ধু ও বান্ধবীকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ শনিবার ১৪ কিশোর ও কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল৷ জেরা করা হয় আবাসনের সাতজন নিরাপত্তারক্ষী, লিফ্টম্যান ও গাড়ির চালককেও৷ একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন যাদের জেরা করা হয়েছে, চলতি সপ্তাহেও তাদের ডেকে জেরা করা হবে৷ এমনকী, লেখক অমিত চৌধুরিকেও ডেকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন গোয়েন্দারা৷ এদিকে, গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার আবেশের তিন বন্ধু ও বান্ধবীকে আলাদাভাবে বসিয়ে তাদের বক্তব্য লিখতে বলা হয়৷ আগেই তাদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল৷ এর পর তাদের বয়ান ভিডিওগ্রাফিও করা হয়৷ কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তাদের বক্তব্যে দেখা দিয়েছে অসংগতি৷ বিশেষ উপায়ে দু’জনের আঙুলের ছাপও সংগ্রহ করা হয়েছে৷ যে ভাঙা বোতলের কাচে মৃত্যু হয়েছ আবেশের, তা থেকে ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে আঙুলের ছাপ৷ তার সঙ্গে ওই দু’জনর আঙুলের ছাপও মেলানো হবে৷ অন্তত চারজন কিশোর-কিশোরীকে এই মামলায় সাক্ষী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘সিট’৷

আবেশের মৃত্যুর পর তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে বেশ কিছু গাফিলতি৷ আবেশকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে ঘটনাস্হলে থাকা কয়েকজন কিশোর ও কিশোরীদের মধ্যে কয়েকজন অ্যাম্বুল্যান্স ডাকার চেষ্টা করে৷ কয়েকজন কিশোরী ওলা ও উবের ট্যাক্সি এবং লালবাজারেও ফোন করে৷ ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল আবেশের এক বাল্যবন্ধু৷ ওই বন্ধুর গাড়িতে আবেশ সারাদিন ঘুরেছিল৷ ঘটনার ঘণ্টা দেড়েক আগে ওই কিশোরের অডি গাড়ি করেই সে ও আবেশ মদ কিনতে যায়৷ আবেশের ওই বন্ধু তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিল৷ অন্য বন্ধু ও বান্ধবীরা যখন অ্যাম্বুল্যান্স ডাকার চেষ্টা করছে, তখনও সে তার ছোটবেলার বন্ধু আবেশকে তার গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি৷ আবেশের ধমনি কেটে তখন রক্ত পড়ছে৷ প্রত্যেকটি সেকেন্ড তখন গুরুত্বপূর্ণ৷ গোয়েন্দাদের হিসাব অনুযায়ী, ওই কিশোরটি আহত আবেশকে তার গাড়ি করে অন্তত দশ মিনিট আগে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারত৷ তখনই তার চিকিৎসা শুরু হত৷ কিন্তু আবেশর চিকিৎসা যখন শুরু হয়, ততক্ষণে তার শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে৷

পুলিশের প্রশ্ন, ওই উচ্চবিত্তদের আবাসনের পার্কিং লটেই রয়েছে প্রচুর গাড়ি৷ এক মহিলা-সহ আবাসনের কয়েকজন বাসিন্দা দেখেছিলেন আবেশকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে৷ তাঁদের কেউ কি কোনও গাড়িতে করে তাড়াতাড়ি আবেশকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতেন না? ঘটনার প্রায় দশ মিনিট পর লেখক অমিত চৌধুরি তাঁর আটতলার ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমে আসেন৷ এর পর তিনি ও তাঁর স্ত্রী একটি গাড়ি করে আবেশকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন৷ পুলিশের কাছে খবর, আবেশের দুই বান্ধবী উপরে গিয়ে তাঁদের খবর দেন৷ এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে লিফ্টম্যানদের জেরা করা হচ্ছে৷ কিন্তু পুলিশের কাছে খবর, তার একটু আগেই অমিত চৌধুরির ড্রাইভার তাঁকে ফোন করে খবর দেন৷ অমিত চৌধুরি বা তাঁর স্ত্রী কি একটু আগে নিচে নেমে আবেশকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতেন না? এই ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও গাফিলতি ছিল কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে৷

আবেশের এক বান্ধবী তার বক্তব্যে পুলিশকে জানিয়েছে, আবেশকে যখন রক্তাক্ত অবস্থায় বসানোর চেষ্টা চলছে, তখন আবাসনের বেশ কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়ির চালক দূর থেকে ঘটনাটি দেখছিলেন৷ ওই কিশোরী তাঁদের চিৎকার করে বলেছিল সাহায্য করতে৷ কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে আবেশকে ধরেননি৷ কেউ আবাসনের কর্তাদের কোনও খবর দেননি৷ ওই আবাসনে একাধিক চিকিৎসক বাস করেন৷ তাঁদেরও খবর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি নিরাপত্তারক্ষীরা৷ কোনওভাবে ‘ফার্স্ট এইড’ করে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়নি৷ শুধু আবেশের এক বন্ধু তার নিজের জামা খুলে আবেশের ক্ষতে বেঁধে দিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করে৷ অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে ‘মজা’ দেখছিলেন৷ তাঁদের প্রত্যেকের ভূমিকায় গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে৷ সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে প্রায় প্রত্যেকদিনই নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়ির চালকদের ডেকে জেরা চলছে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement