স্টাফ রিপোর্টার: আবেশ মৃত্যুরহস্যে গোয়েন্দা প্রধানের নেতৃত্বে ‘সিট’ গঠন করল কলকাতা পুলিশ৷ বালিগঞ্জে কিশোরের রহস্যমৃত্যুতে তার মায়ের দায়ের করা খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ পড়ুয়াকে জেরা শুরু করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা৷ বালিগঞ্জের ওই বহুতল আবাসনের বেসমেন্টে জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত ওই পড়ুয়ারা মৃত কিশোর আবেশ দাশগুপ্তর সঙ্গেই ছিল৷ এখনও পর্যন্ত এই মৃত্যুরহস্যে রয়ে গিয়েছে বেশ কিছু অসংগতি৷ দেখা দিয়েছে বেশ কিছু প্রশ্ন৷ লালবাজারের গোয়েন্দাদের মতে, ওই অসংগতি কাটাতে ও তদন্তের ‘মিসিং লিঙ্ক’গুলি খুঁজে বের করার জন্য সিট গঠন করা হল বলে খবর লালবাজার সূত্রে৷
তবে তদন্তে নামা গোয়েন্দাদের প্রশ্ন মেয়ে অরুণার বার্থডে পার্টির কথা সত্যিই কি জানতেন না বাবা অমিত চৌধুরি? একই সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোর ঋষভ নন্দীর বাবার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, কেন প্রেরণার মায়ের কাছে আবেশের নামে এবং আবেশের মায়ের কাছে প্রেরণার নামে মিথ্যা-খারাপ অভিযোগ করেছিলেন? ঋষভের বাবাকেও লালবাজারে ডাকা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর৷
(আবেশের মৃত্যুতে গোয়েন্দাদের নজরে সাহিত্যিক অমিত চৌধুরিও)
গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাব থেকে মদ্যপানের পর ফের ওই আবাসনের নিচে এসে তারা মদ্যপানের সিদ্ধান্ত নিল কেন? দ্বিতীয়বারের জন্য মদ্যপানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কে বা কারা ইন্ধন জুগিয়েছিল? বহুতল আবাসনটির পার্কিং লটের মধ্যে যে লুকিয়ে একসঙ্গে এতজন মদ্যপান করতে পারে, সেই বুদ্ধিই বা তাদের কে বা কারা দিয়েছিল? যখন হাতে মদের বোতল নিয়ে পার্কিং লটে যান আবেশ, তখন বাকি পড়ুয়ারা কে কী করছিল, সেই তথ্য চায় লালবাজার৷ গোয়েন্দারা জেনেছেন যে, মদভর্তি বোতল নিয়েই পার্কিং লটের ঢালে পড়ে যায় আবেশ৷ আহত হওয়ার ফলে জায়গাটি রক্তে ভরে যায়৷ ওই অবস্থায় সে উঠে দাঁড়ায়৷ কুড়ি মিটার যাওয়ার পর ফের সে পড়ে যায়৷ এর পর সে আর উঠতে পারেনি৷ তখন কেনই বা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা আবেশকে তোলেনি তার বন্ধুরা, সেই সময় তাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তা জানতে ১৬ পড়ুয়ার প্রত্যেককেই দফায় দফায় আলাদাভাবে ডেকে জেরা করা হবে৷ বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আবেশের বন্ধু ও সহপাঠী ঋষভ ও বান্ধবী প্রেরণাকে আলাদাভাবে ও মুখোমুখিও জেরা করা হবে৷ জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুরো বয়ানের ভিডিও রেকর্ডিং করা হতে পারে বলে জানিয়েছে লালবাজার৷
এদিকে, সোমবার সকালে মৃত কিশোর আবেশ দাশগুপ্তর মা ও মামাকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়৷ লালবাজার থেকে বেড়িয়ে আবেশের মা জানিয়েছেন, জয়েন্ট সিপি আশ্বাস দিয়েছেন ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হবে৷ উল্লেখ্য আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, তাঁর ছেলেকে বোতল দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে৷ আবেশের দাদু শান্তনু পাল এদিন জানান, রিমঝিম ও আবেশের মামা বিদেশ এদিন দুপুর বারোটা নাগাদ লালবাজারে পৌঁছন৷ তাঁরা তাঁদের অভিযোগের বিষয়টি পুলিশের কাছে আবার বলবেন৷ জানা গিয়েছে, তাঁদের লালবাজারের গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসা করছেন, তাঁরা কাউকে সন্দেহ করেন কি না৷ ঋষভের সঙ্গে আবেশের কীরকম সম্পর্ক ছিল৷ এমনকী, আবেশে সঙ্গে প্রেরণা ও ঋষভের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়েও মা ও মামাকে জিজ্ঞাসা করবেন গোয়েন্দারা৷
আবেশের রহস্যমৃত্যুর অসংগতি কাটাতে শনিবার সকাল থেকে কী হয়েছিল, আবেশ তার মাকে কী বলেছিল, আবেশের সঙ্গে তার মায়ের কখন শেষ কথা হয়েছিল, তখন আবেশ কী বলেছিল, এই বিষয়ে তথ্যও তাঁদের কাছ থেকে গোয়েন্দারা আবেশের মা ও মামার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবেন৷ আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত তাঁর ছেলেকে সন্ধ্যা ছটা নাগাদ ফোন করেন৷ তখন তাঁর ছেলেরে মোবাইলে রিং বেজে গিয়েছিল৷ ছেলে ফোন ধরেনি৷ রিমঝিম দাশগুপ্তর মতে, এর পিছনে কোনও রহস্য রয়েছে৷ সেই রহস্যেরও সমাধান করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা৷
প্রাথমিকভাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, খুন করা হয়নি ওই কিশোরকে৷ দুর্ঘটনাবশত মদের বোতল ভেঙে বগলের তলায় ঢুকে যায়৷ কাচ ঢুকে যায় কব্জিতেও৷ মদের বোতালের ধারালো কাচ ভেঙে কেটে দেয় শিরা ও ধমনী৷ ক্রমাগত রক্তপাতের ফলেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরের৷ তবে বুক বা পেটে যে বোতলের কাচ ঢুকে যায়নি, ময়নাতদন্তের পর সেই বিষয়ে নিশ্চিত চিকিৎসকরা৷ ওই ভাবে পড়ে কারও মৃত্যু হতে পারে কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে রবিবার রাতেই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি টিম বালিগঞ্জের ওই বহুতলে তদন্ত করতে যান৷ তাঁরাই আবেশের দেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন৷ এদিন তদন্তের জন্য ফের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ওই বহুতলে যেতে পারেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.