মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে বসার পর থেকেই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালেও তাঁর বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে বারবার অপদস্থ হতে হয়েছে আমেরিকানদের। বছরের প্রথম থেকেই করোনা মহামারীর জন্য পৃথিবীর প্রায় সবকিছুর অভিমুখ বদলে গেলেও বদলাননি ‘দুর্মুখ’ ট্রাম্প। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের গুজরাটের মোতেরা স্টেডিয়াম থেকে গত ৫ নভেম্বরের হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক বৈঠক। সবজায়গাতে স্বমহিমায় বিরাজমান ছিলেন ডোনাল্ড। বছরের শেষলগ্নে এসে তাঁর কিছু মধুর ‘বাণী’ তুলে ধরল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
স্বামী বিবেকানন্দের নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে ল্যাজে-গোবরে ট্রাম্প
তাঁর দেশের শিকাগো শহরেই বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে ১৮৯৩ সালে বক্তৃতা দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাটে এসে স্বামী বিবেকানন্দের নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে ল্যাজে-গোবরে হন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ভারতীয়দের ইচ্ছাশক্তির জোর বোঝাতে স্বামী বিবেকানন্দের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। কিন্তু, বিশ্ববরেণ্য মানুষটির নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে হাসির খোরাক হন। বলেন, ‘স্বামী বিবেকামুন্নন’। শুধু এখানেই শেষ নয়, বলিউড থেকে ক্রিকেট, ট্রাম্পের উচ্চারণ-বিভ্রাট ছিল সর্বত্র। বলিউডি সিনেমার কথা বলতে গিয়ে ‘শোলে’কে ‘শোজে’ বলে ফেলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটের কথা বলতে গিয়ে শচীন তেন্ডুলকর বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুচিন তেন্ডুলকর’। বিরাট কোহলির উচ্চারণ হয়ে দাঁড়ায় ‘বিরুট কোলি’। আর বেদ হয়ে যায় ‘ভেসতাস।
#NamasteTrump
US President Donald Trump quotes Swami Vivekananda in his speech🇮🇳- 🇺🇸 pic.twitter.com/C6qOSH4lRo
— All India Radio News (@airnewsalerts) February 24, 2020
করোনা রুখতে হাতিয়ার জীবাণুনাশক! আজব টোটকা ট্রাম্পের
এপ্রিলের মাঝামাঝি বিশ্বজুড়ে তখন নিজের দাপট দেখাচ্ছে করোনা (Corona)। অতি সংক্রামক এই ভাইরাসকে রুখতে সারা বিশ্বেই গবেষণার কাজ চলছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মন্তব্য পৃথিবীজুড়ে ঝড় তোলে। করোনা রোখার নিদান দিতে টাস্কফোর্সের সদস্যদের তিনি প্রশ্ন করেন, শরীরে জীবাণুনাশক ইনজেক্ট করে ফুসফুস সাফ করা যায় না? ট্রাম্প বলেন, ‘জীবাণুনাশক করোনা ভাইরাসকে এক মিনিটে খতম করে দেয়। আমরা কী এমন কিছু করতে পারি যাতে দেহের মধ্যে জীবাণুনাশক ঢুকিয়ে দেহকে একেবারে জীবাণুমুক্ত করে ফেলা সম্ভব হয়। তা পরীক্ষা করে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এটা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে।’
তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে লাইজল ও ডেটল প্রস্তুতকারী কোম্পানি ক্রেতাদের তাদের জীবাণুনাশক পণ্য সেবন না করা বা ইঞ্জেকশন হিসেবে না নেওয়ার আবেদন জানান। ডেটল ও লাইজল প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ কোম্পানি রেকিটবেনকিসার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, তাদের জীবাণুনাশক পণ্য সেবন মানব শরীরের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পণ্যের বিশ্বের প্রথমসারির সংস্থা হিসেবে আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, কোনও অবস্থাতেই আমাদের জীবাণুনাশক পণ্য মানব শরীরে প্রবেশ করানো উচিত নয়।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের জন্য ভারতকে হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্টের
করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবের জেরে আমেরিকায় তখন হাহাকার চলছে। করোনার প্রকোপ রুখতে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করছে আমেরিকা। এদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেই ওষুধ তৈরি করলেও আমেরিকাকে দিতে পারবে না ভারত। এই নিয়ে টানাপোড়ের মাঝেই করোনা মোকাবিলায় তৈরি টাস্কফোর্সকে ব্রিফিংয়ের সময় হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, “ভারত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহারই করছে এবং আমি এমন কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না যে তারা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। আমি রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমি বলেছি যে আপনি যদি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহের ব্যবস্থা করেন তবে আমরা এই পদক্ষেপকে সম্মান করব। আর যদি সরবরাহের অনুমতি না দেন, তাহলেও ঠিক আছে! কিন্তু হ্যাঁ, আমাদের থেকেও এরপর এমনই ব্যবহার পাবেন তা জেনে রাখবেন।”
কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ড নিয়েও বেফাঁস মন্তব্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের
গত জুন মাসে মিনিয়াপোলিসের পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে আমেরিকায় প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। এই আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “গত সপ্তাহে কী ঘটেছে, আমরা সকলেই দেখেছি। এ সব আমরা হতে দিতে পারি না। আশা করি, জর্জ এখন উপর থেকে সব দেখছেন। আর মনে মনে বলছেন, আমাদের দেশের জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার হল। আজ ফ্লয়েডের জন্য একটা দারুণ দিন।’’
‘বন্ধু’ মোদির স্বচ্ছতা অভিযান নিয়েই প্রশ্ন ট্রাম্পের
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল বিশ্ব উষ্ণায়নের বিষয়টি। সেই নিয়ে কথা বলতেই গিয়ে ভারত, চিন ও রাশিয়ার সমালোচনা করেন ট্রাম্প।
এপ্রসঙ্গে বলেন, ‘চিনের হাল দেখুন। কিরকম নোংরা একটি দেশ। রাশিয়া বা ভারতের অবস্থা দেখুন, কি নোংরা, বাতাস মারাত্মক দূষণগ্রস্ত।’ প্রশ্ন তোলেন প্যারিস পরিবেশ চুক্তি নিয়েও। তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তিতে গেলে বাণিজ্যিক দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়ত আমেরিকা।
ভোটপ্রচারে ‘হাস্যকর’ দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের
নির্বাচনের প্রচারে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বিডেন তাঁকে সবথেকে বড় বর্ণবিদ্বেষী মানুষ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তার জবাব দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমিই সবথেকে কম বর্ণবিদ্বেষী, কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য যা করেছি, কেউ করেনি’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হয়েও হার মানেননি
গত ৩ নভেম্বরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হয়। তাতে ট্রাম্পকে পরাজিত করে ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বিডেন। যদিও নিজের হার কোনওভাবেই মানতে চাননি ট্রাম্প। গত ৫ নভেম্বর কারও নাম করে হোয়াইট হাউস থেকে আমেরিকানদের উদ্দেশে এক বার্তায় ট্রাম্প জানান, বড় মিডিয়া ও বড় কোম্পানিগুলি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও সন্দেহাতীত ভাবে তিনিই জয়ী হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘যদি বৈধ ভোট গোনা হত তা হলে তিনিই বিজয়ী হতেন।’ প্রতিপক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, ‘ভোটারদের নিয়ে জালিয়াতি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে যা ভোট পড়েছে, তা যাতে গোনা না হয়, তা ডেমোক্র্যাটরা নিশ্চিত করেছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.