পৃথিবী থেকে অস্তিত্ব হারিয়েছে ‘শান্তি’৷ একদিকে, যেমন মানুষ প্রকৃতির শত্রু হয়ে উঠছে৷ আবার লোভ ও লালসার বশে সেই মানুষ-মানুষেরও শত্রুতে পরিণত হচ্ছে৷ চলতি বছর বারবার যেমন প্রকৃতির রোষের মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বকে৷ তেমনই, ক্ষমতা ও দম্ভের মোহে মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে মানুষ-ই৷ বারবার বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প৷ বছরশেষে সেসব বিপর্যয়ই ফিরে দেখল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
কেরল বন্যা: একটানা বৃষ্টিতে ২০১৮-র ৯ অগস্ট থেকে ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরল। প্রবল ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে সেরাজ্যের ১৪টি জেলা। ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যু হয় ৪৮৩ জন নিরীহ মানুষের। ঘরছাড়া হয়ে পড়েন কমপক্ষে ৬,৬১,০০০ জন মানুষ। গত এক শতাব্দীতে কেরলের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা ছিল এটি। ইতিহাসে প্রথমবার সেরাজ্যের ৪২টি বাঁধের মধ্যে ৩৫টি একই সঙ্গে খোলা হয়েছিল। রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ। উদ্ধারকার্যে নেমেছিল ভারতীয় সেনা ও নৌসেনার ৫২টি উদ্ধারকারী দল। এই উদ্ধার অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল “মদত”৷
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামি: শুরুটা হয়েছিল চলতি বছরের আগস্ট মাসে৷ বালির কাছে লম্বক দ্বীপে ভূমিকম্পে একশোরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ এরপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর পালু লাগোয়া সুলাওয়েসি দ্বীপে একসঙ্গে আঘাত হানে ভূমিকম্প ও সুনামি৷ রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫৷ এরপরেই ওই দ্বীপে আছড়ে পড়ে সুনামি৷ জোড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষের৷
ধুলো ঝড়: চলতি বছরের মে মাসে প্রবল গরমের মধ্যে ভারতের উত্তর ও পশ্চিমের বেশ কয়েকটি রাজ্যে আছড়ে পড়ে ধুলো ঝড়৷ চলতি বছরের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে এটিকে ধরা হয়৷ এই ধুলো ঝড়ের প্রকোপে মৃত্যু হয় প্রায় ১২৫ জনের৷
আফগানিস্তনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ: চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি বিস্ফেরণে কেঁপে ওঠে মধ্য কাবুলের সিদারাত স্কোয়্যার৷ একটি অ্যাম্বুল্যান্সে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তালিবান জঙ্গিরা৷ ঘটনায় মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের, গুরুতর জখম হন ২৩৫ জন৷ প্রশাসন সূত্রে খবর, হামলারকারীদের টার্গেটে ছিল সরকারি দপ্তরগুলি৷
ক্যালিফোর্নিয়া দাবানল: চলতি বছরের ৮ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর দাবানলের গ্রাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ক্যালিফোর্নিয়া৷ আগুনের ভয়াল কোপে প্রাণ যায় ৮৮ জন মানুষের এবং ঘর ছাড়া হন ২৭ হাজার পরিবার৷ প্রায় দু’লক্ষ ত্রিশ হাজার একর এলাকা জুড়ে তাণ্ডব চালায় আগুনের লেলিহান শিখা৷ বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্যারাডাইস নগরী, সান্তা রোজ ভ্যালি, লস এঞ্জেলেস, ভেন্তুরা এলাকা৷ ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম দাবানল বলা হয়েছে এটিকে৷
পাকিস্তানে গাড়িবোমা বিস্ফোরণ: ২০১৮-র ১৩ জুলাই, বালোচিস্তানের মাস্তুঙ্গ এলাকায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ ঘটনায় মৃত্যু হয় বালোচিস্তান আওয়ামি পার্টির নেতা নবাবজাদা সিরাজ-সহ ১৪৯ জনের৷ গুরুতর আহত হন ১৮৬ জন৷
পাকিস্তানে হিট ওয়েভ: চলতি বছরের মে মাসে বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে পাকিস্তানে৷ করাচি-সহ কোনও কোনও শহরে তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বইতে থাকে লু৷ সমগ্র দেশে তাপপ্রবাহে মৃত্যু হয় প্রায় ১৮০ জনের৷ মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন গরিব মানুষ৷
গুয়েতেমালায় অগ্ন্যুৎপাত: চলতি বছরের জুনের প্রথমের দিকে লাভা উদগিরণ শুরু করে গুয়েতেমালার ফুয়েগো আগ্নেওগিরি৷ মৃত্যু হয় ৪২৫ জন মানুষের৷ এলাকার মাটি এতটাই গরম হয়ে ছিল যে, উদ্ধারকার্যে নেমে জুতোর সোল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল উদ্ধারকারীদের৷
সুকমায় মাওবাদী হামলা: চলতি বছরের ১৩ মার্চ আইডি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ছত্তিশগড়ের সুকমার কিস্তরাম এলাকা৷ রুটিন টহলদারি চালানোর সময় আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা৷ ঘটনায় শহিদ হন ন’জন জওয়ান৷ গুরুতর জখম হন আরও ছ’জন৷ বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, জওয়ানদের ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায় ২০ থেকে ৩০ ফুট দূরে৷
ইন্দোনেশিয়ায় অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামি: চলতি বছরের ২২ ডিসেম্বর রাতে ফিরে আসে ১৪ বছর আগের ভয়াবহ স্মৃতি৷ জাভা-সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যবর্তী সুন্দা প্রণালীর আনাক ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরিতে ধস নামার ফলে, সুনামি আছড়ে পড়ে ইন্দোনেশিয়ায়৷ প্রায় ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে৷ গুরুতর আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে হাজারেরও বেশি৷
মাও হানায় খুন সংবাদকর্মী: চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর, বড়সড় মাও হানায় ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় শহিদ হন দুই পুলিশ কর্মী এবং মারা যান দূরদর্শনের চিত্রসাংবাদিক অচ্যুতানন্দ সাউ৷ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সেরাজ্যের বিধানসভা ভোটের সংবাদ সংগ্রহ করতে বেরিয়েছিলেন অচ্যুতানন্দ৷ পুলিশি প্রহারায় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের উপর হামলা করে মাওবাদীরা৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের৷
অলঙ্করণ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.