নিয়ম মেনে চলে গেলেও, প্রতিটি সালই কিছু না কিছু ছাপ রেখে যায়৷ এর অন্যথা করেনি ২০১৮৷ চলতি বছর, এমন অনেক মানুষ নিজ দক্ষতায় নজির সৃষ্টি করেছেন, সময় চলে গেলেও যাঁরা থেকে যাবেন সকলের মনে৷ তাঁদের মনে রাখবেন দেশবাসী তথা বিশ্ববাসী৷ বছর শেষে তাঁদেরকে কুর্নিশ!
হিমা দাস: চলতি বছর ফিনল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত হয় স্প্রিন্ট প্রতিযোগিতার ওয়ার্ল্ড আন্ডার-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ৷ ১২ জুলাই, ২০১৮-তে এই প্রতিযোগিতায় ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করেন ভারতের হিমা দাস৷ মাত্র ৫১.৪৬ সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি অতিক্রম করে ফেলেন ৪০০ মিটারের দূরত্ব৷ এবং প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে আন্তর্জাতিক কোনও ট্র্যাক ইভেন্টে সোনার পদক জয়ের রেকর্ড গড়েন৷ ক্রীড়া জগতের উদীয়মান এই নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচিত হন দেশবাসী৷ তবে, ২০১৮-র ২৬ অগস্টের পর অসমের মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় গোটা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের৷ জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ওইদিন ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের ব্যক্তিগত ইভেন্টে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন হিমা৷ রূপো জেতেন তিনি। এরপর ৩০ অগস্ট, মহিলাদের ৪x৪০০ মিটার রিলেতে প্রথম স্থান অধিকার করেন ভারতীয় মহিলা স্প্রিন্টাররা। সোনা আসে ভারতের ঝুলিতে। চলতি বছর এশিয়ান গেমসে ৪x৪০০ মিটার মিক্সড রিলেতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ভারত। আরও একটি রূপো জেতেন দেশের স্প্রিন্টাররা। দুটি রিলে দৌঁড়েই ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন হিমা। তাঁর এই অসামান্য কৃতিত্বকে সম্মান জানায় কেন্দ্রীয় সরকার৷ এবং ২০১৮-তে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত হন হিমা দাস। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ হিমা দাসকে দেশের প্রথম ইউথ অ্যাম্বাসাডর নির্বাচিত করে ইউনিসেফ ইন্ডিয়া৷ বিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্ততকারক সংস্থা ‘অ্যাডিডাস’ হিমাকে তাঁদের প্রচারের মুখ হিসাবে নির্বাচিত করে।
স্বপ্না বর্মন: বিশ্ব ক্রীড়ামহলের আঙিনায় ২০১৮-তে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন ‘সোনার মেয়ে’ স্বপ্না বর্মনও৷ প্রথম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক কোনও ইভেন্টে হেপ্টাথেলনে সোনা জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি৷ জাকার্তা এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথেলনের মতো কঠিন ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করেন স্বপ্না৷ ৬০৬২ পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন জলপাইগুড়ির এই মেয়েটি৷ দু্’পায়ে অতিরিক্ত একটি করে আঙুল থাকায়, ট্র্যাকে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি৷ জোটেনি সঠিক স্পোর্টস শু-টুকুও৷ কিন্তু হেরে যাননি স্বপ্না৷ ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে বারো আঙুল নিয়েই লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি৷ তাঁর কৃতিত্বকেও সম্মান জানিয়েছে বিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্ততকারক সংস্থা ‘অ্যাডিডাস’৷ এশিয়ান গেমসে অসামান্য রেকর্ড সৃষ্টির করায়, তাঁকে অত্যাধুনিক স্পোর্টস শু উপহার দিয়েছে সংস্থাটি৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে সম্মাননা বাবদ স্বপ্নাকে দেওয়া হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা৷
মেরি কম: ৩৫ বছর বয়সে আবারও বক্সিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন মেরি কম৷ বিশ্বের একমাত্র মহিলা বক্সার হিসাবে ছ’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়লেন তিন সন্তানের মা মেরি৷ চলতি বছরের কমনওয়েলথ গেমসের লাইট ফ্লাইওয়েট বিভাগেও সোনা জয় করেন মেরি৷
সত্যরূপ সিদ্ধান্ত: সপ্তশৃঙ্গ জয় করে, এবার বিশ্বের সাতটি সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন বাংলার গর্ব সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। বিশ্বরেকর্ডের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন এভারেস্টজয়ী এই পর্বতারোহী। ইতিমধ্যে তিনি জয় করে ফেলেছেন বিশ্বে সর্বোচ্চ ছয়টি আগ্নেয়গিরি৷ আর একটি আগ্নেয়গিরি জয় করলেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাবেন সত্যরূপ। সম্প্রতি তিনি জয় করেছেন উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি ‘পিকো দে ওরিজাবা’। বিশ্বরেকর্ডের জন্য এবার তাঁর লক্ষ্য দক্ষিণ মেরুর সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি, অ্যান্টার্কটিকার মাউন্ট সিডলে৷ সূত্রের খবর, নতুন বছরের শুরুতেই এই আগ্নেয়গিরি জয়ের লক্ষ্যে পাড়ি দেবেন বাংলার এই সাহসী সন্তান। এই শৃঙ্গ জয় করলেই অনবদ্য কীর্তির অধিকারী হবেন সত্যরূপ৷ বিশ্বের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ও সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি জয়ের বিশ্বরেকর্ড থাকবে তাঁর ঝুলিতে৷
নাদিয়া মুরাদ: ২০১৮-তে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ইয়াজিদি সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলা নাদিয়া মুরাদ৷ এক সময় যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকে আইএসের যৌনদাসীতে পরিণত হয়েছিলেন নাদিয়া৷ পরে কোনওক্রমে আইএসের কবল থেকে রক্ষা পান তিনি এবং নিজের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাকেই হাতিয়ার করেন৷ আইএসের লালসার শিকার হয়েছেন, এমন মহিলাদের পাশে দাঁড়ান নাদিয়া৷ তাঁদের উদ্ধার করে আবারও স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি৷ নাদিয়ার কাজের প্রশংসা করে নোবেল কমিটির জানিয়েছিল, আইএসের লালসার শিকার মহিলাদের হয়ে কথা বলে মনুষ্যত্বের একটা অন্যদিক উন্মোচন করেছেন নাদিয়া৷ তাঁর এই লড়াই মনে রাখার মতো৷
অবনী চতুর্বেদী: ২০১৮-র ২১ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস তৈরি করেন ভারতের এই মহিলা সেনানী৷ প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে যুদ্ধবিমান ওড়ান অবনী চতুর্বেদী৷ গুজরাটের জামনগর বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে মিগ-২১ বাইসন নিয়ে আকাশে পাড়ি দেন অবনী৷
আদিত্য রাজেশ: মাত্র ১৩ বছর বয়সেই একটি পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে কেরলের এই ছেলেটি। সংস্থাটির নাম ‘ট্রিনেট সলিউশন’৷ জানা গিয়েছে, ছোট থেকেই প্রযুক্তির প্রতি তাঁর অসম্ভব টান ছিল৷ সেমতোই মাত্র ৯ বছর বয়সে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে ফেলেছিল আদিত্য। বর্তমানে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ওয়েবসাইট ডিজাইনিং থেকে শুরু করে লোগো এডিটিং-এর কাজ করে আদিত্যর সংস্থা৷
অলঙ্করণ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.