সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিহারের গোপালগঞ্জ জেলায় বিষমদে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৬৷ মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত জেলার পাঁচ থানা এলাকায় মৃত্যু হয় ১৩ জনের৷ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল জনা তিরিশেক অসুস্থর৷ পরের ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের মধ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ‘মদ-নিষিদ্ধ’ রাজ্যে বিষাক্ত মদে মানুষ মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার৷ ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের জন্য তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন আরজেডি নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব৷ এদিকে, পুলিশ ও আবগারি দফতরের দু’দিনের অভিযানে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, কঠোর নজরদারি এড়িয়েও ‘অ-কারণ’ বিহারে বেআইনি মদের চোরাস্রোত চলছেই৷ রাজ্যের বিভিন্ন ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে শয়ে শয়ে দেশি ও বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে৷
পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হওয়ায় কয়েকজনকে সদর হাসপাতাল থেকে পাটনা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল৷ বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে তাদের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর৷ সেখানে বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক৷
বৃহস্পতিবার নীতীশ কুমার সাংবাদিকদের বলেন, গোপালগঞ্জের মৃত্যুর ঘটনাগুলি বেআইনি মদের জন্যই ঘটেছে বলে যদি প্রমাণ হয়, তবে দোষীরা কোনওভাবেই রেহাই পাবে না৷ তিনি বলেন, এই সংক্রান্ত সকল বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্য পুলিশ প্রধান, সংশ্লিষ্ট দফতরের মুখ্যসচিব, আবগারি দফতরের প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছি৷ অসুস্থদের মেডিক্যাল রিপোর্ট, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বিশ্লেষণ ছাড়াও আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা হবে৷ দেখা হবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরও খতিয়ে দেখা হবে৷ যদিও গোপালগঞ্জের জেলাশাসক রাহুল কুমার জানিয়েছেন, ময়না তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিষাক্ত মদ অথবা পানীয় সঙ্গে মিশ্রিত কিছু বিষাক্তর কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে৷ আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিসেরা পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিকে৷
বস্তুত, গোপালগঞ্জ বিষাক্ত মদ কাণ্ড যারপরনাই অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্যের নীতীশ কুমার সরকারকে৷ তাই প্রথম থেকেই প্রশাসন বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চাইছে৷ স্থানীয়রা দাবি করেছে, বেআইনি বিষাক্ত মদ পানের জন্যই বহু লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ এক ডজন ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারাও যায়৷ তবে প্রশাসন এখনও বলে যাচ্ছে, এমন কোনও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি৷ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হল, মৃতদের কয়েকজনের পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে, মৃতেরা আগের দিন সন্ধ্যায় মদ পান করেছিল৷ রাত থেকে তারা অসুস্থ হতে শুরু করে৷ এদিকে পুলিশের দাবি, কয়েকজন মৃতের পরিবারের লোকেরা লিখিত দিয়েছে যে, মৃত্যুর জন্য বিষাক্ত মদ দায়ী নয়৷ তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এমন বিবৃতি দিয়েছেন, নাকি কোনও চাপের মুখে মুচলেকা দিয়েছেন, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
রাজ্যের মদ নিষিদ্ধ হওয়ার সময়ই বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, এরপর বেআইনি মদের রমরমা হবে৷ তাতে মৃত্যুর মতো বিপর্যয়ও ঘটতে পারে৷ এখন মুখরক্ষায় নীতীশ প্রশাসন প্রমাণ করতে চাইছে, এই বিপর্যয় বেআইনি মদের জন্য নয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.